মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনি কোটা বন্ধের প্রস্তাব

  • imagesসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের কোটা বন্ধের প্রস্তাব উঠেছে। এ নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটির মধ্যে আলোচনা চলছে। দ্রুতই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের কোটা বন্ধের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওই বৈঠকে অধিকাংশ সদস্যই আইনটির পক্ষে মত দিয়ে বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের শুধু চাকরি কেন, সব ক্ষেত্রেই তাঁদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। বর্তমান সরকার এটি করছেও। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের কোটা সুবিধা দেওয়া ঠিক হচ্ছে না। এতে দেশের চাকরিপ্রার্থী তরুণ-তরুণীরা বঞ্চিত হচ্ছে। আবার যোগ্য প্রার্থীর অভাবে অনেক পদ বছরের পর বছর খালি থাকছে। তা ছাড়া এ সুযোগ নিয়ে অনেকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদে চাকরিতে কোটা সুবিধা নিচ্ছে। তাই এটি বন্ধ হওয়া উচিত। তাঁদের অনেকে অবশ্য শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের কোটা নয়, জেলা কোটাসহ সব ধরনের কোটা বাতিলেরও দাবি তুলেছেন। গত বুধবার অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণীতে দেখা গেছে, এই প্রস্তাবের বিরোধিতাও করেছেন একাধিক সদস্য। বৈঠকে কমিটির সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ‘অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর ব্যাপারে যে কোটা রয়েছে তাতে কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের নামে যে কোটা মানা হচ্ছে এবং জেলাভিত্তিক যে কোটা অনুসরণ করা হচ্ছে সেটি উঠিয়ে দেওয়া উচিত। মুক্তিযোদ্ধাদের কোটাটি বড়জোর সন্তান পর্যন্ত রাখা যেতে পারে। কিন্তু নাতি-নাতনি কিংবা পুতিদের এসব সুবিধা দেওয়া একেবারেই উচিত নয়।’ তবে বৈঠকে উল্টো মত দেন কমিটির সভাপতি এইচ এন আশিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের ওই কোটা বাতিল করা ঠিক হবে না। আর জেলা কোটা পদ্ধতি বাতিল করলে দেশের বিশাল একটি জনগোষ্ঠী বঞ্চিত হবে। ফলে সারা দেশে সমভাবে উন্নয়ন সম্ভব হবে না।’ এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক বৈঠকে বলেন, ‘চাকরির কোটা সব নিয়োগের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এ-সংক্রান্ত নতুন আইনে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিদের কোটা বিলুপ্তির প্রস্তাব এসেছে। এখন তো আর মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির বয়স নেই। তাঁদের নাতি-পুতিরাই এ কোটায় সুবিধাদি নিচ্ছেন। কিন্তু তাঁরা ৩০ শতাংশ কাভার করছে না।’ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আলোচনা সাপেক্ষে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে।’ সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে সংসদীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ  বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। তবে সবাই কোটাপদ্ধতি সংস্কারের পক্ষে। মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত আইনের সংশোধনের খসড়া প্রস্তাব কমিটিতে উত্থাপন করলে তা আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ, নারী কোটা ১০ শতাংশ, উপজাতি কোটা রয়েছে ৫ শতাংশ। এতে মোট ৫৫ শতাংশ নিয়োগ হয় কোটায়। ফলে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যরা চাকরি পেয়ে যাচ্ছে।

সূত্রঃ  কালের কন্ঠ

Scroll to Top