জীবনের সবচেয়ে হাস্যকর দিন আজ: বিয়ের আসরে বললেন বর

59

marriage_biyeবিদেশ বিভূঁইয়ে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে এসেছেন মিঃ সালমান। তার বাবা একজন বিশিষ্ট ইসলামি নেতা। ক্ষমতার মোহহীন এবং অর্থের প্রতি আগ্রহহীন একজন শ্রদ্ধেয় নেতা তিনি। দল থেকে নির্বাচন করার অনুরোধ স্বত্বেও তিনি নির্বাচনে দাঁড়ান নি। সমাজে দ্বীনের জন্য অবদান রাখাই তার একমাত্র উদ্দেশ্য তাই ক্ষমতার রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে সে অবদানে ভাটা আনতে চাননি তিনি। এমন একটি পরিবারের সন্তান সালমান। আজকে যখন সালমান বিয়ের পিড়িতে বসছেন তখন তার বয়স ৩১ ছুঁই ছুঁই করছে।

প্রথম সারির একজন ইসলামি নেতার সন্তানের বিয়ে, তাই এই বিয়েতে প্রথম সারির আরও অনেক নেতাদের আনাগোনা বেশ চোখে পরার মতো। অনেকেই সালমান কে নিয়ে অনেক কিছু ভাবছে। মেয়ে পক্ষ যতদূর খোজ খবর নিয়েছে তাতে জানা গেছে যে ছেলে বিদেশে থাকলেও কোনোদিন কোনও মেয়ের সাথে দূরতম সম্পর্কও গড়েননি। যারা বিত্ত-বৈভবের ধার ধারেন না বরং একটা ভালো ছেলে চান তাদের জন্য এমন ছেলে এখনকার দিনে স্রেফ দিবা স্বপ্ন। সেই ক্ষেত্রে মেয়ে পক্ষ খুবই আশাবাদী এবং সন্তুষ্ট।

বড় বড় মাপের মানুষদের উপস্থিতিতে বিয়ে হয়ে গেলো। ছেলের বাবা একজন ইসলামি চিন্তাবিদ, তিনিই বিয়ের খুতবা দিলেন। এর পর অনেক মুরব্বি গোছের মানুষ দু-এক বাক্য করে করে বলে গেলেন। সব শেষে সম্ভবত সব প্রথা ভেঙ্গে ডাক পড়লো বরের, তাকে মাইকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলা হল কিছু কথা বলার জন্য। অনিচ্ছা ষত্বেও বরকে উঠে আসতে হল মাইকের সামনে। এদিকে উপস্থিত সবাই ভাবছেন বরের পক্ষ থেকে বিনয়ের ঝরে পড়া কিছু কথা এবং সেই সাথে সকলের দোয়া প্রার্থনা সম্পর্কিত কিছু কথা তারা শুনতে যাচ্ছে। বর কথা বলতে শুরু করলো।

“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। ধন্যবাদ সবাইকে, আসলে আমার জীবনে আমি এটাই প্রথম প্রত্যক্ষ করছি যে বিয়ের অনুষ্ঠানে বর নিজেই বক্তৃতা করছে। এবং আরও মজার বিষয় হল সেই বরটি আমি নিজেই। ইতোমধ্যেই আপনারা বিয়ের খুতবা শুনেছেন, সচরাচর বিয়ের খুতবাতে স্বামী-স্ত্রীর কর্তব্য সম্পর্কেই বলা হয়। আজ আমি সেরকম কিছুই বলতে চাই না। বিয়ে সম্পর্কেই আজ আমি ভিন্ন কিছু কথা বলবো।

আজ আমার জীবনের সবচেয়ে হাস্যকর কৌতুকের দিন। আমি দুঃখিত সত্য কথাটি বলার জন্য। এবং আমি আমার প্রিয়তম স্ত্রীকে আগেই বলে রাখতে চাই যে তোমাকে সঙ্গী হিসেবে পাওয়াটা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠতম দিক হলেও আজকের দিনটি আমার জন্য শ্রেষ্ঠতম কৌতুকের দিনও বটে। শিক্ষাজীবনে ক্যম্পাসময় আমি বেশ জনপ্রিয়দের একজন ছিলাম, কিন্তু ঠোঁটকাটা স্বভাবের কারণে আমার সে জনপ্রিয়তায় বেশ ভাটাও পড়েছে। আজকের এই দিনেও ঠোঁটকাটা স্বভাবটা এড়াতে পারিনি বলে প্রিয়তায় কিছু ভাটা পড়তেই পারে।

বিয়ে একটি সুন্নাহ, কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষে সেটি ফরজও হয়ে যায়। বিগত আটটি বছর আমি বিদেশের মাটিতে ছিলাম। সেখানে আমাকে বিপথে যাবার কালে ঠেকানোর কেউ ছিল না। আমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারতাম। সেখানে নগ্নতার অভাব ছিল না। যৌনতার সয়লাব ছিল সর্বময়। এবং তখনই আমার মধ্যে যৌবনের ছিল ভরা মৌসুম এবং অত্যন্ত দুর্বল ইমানি শক্তি। বিগত এই সাত বছরে, স্পেশালি শেষ চারটি বছর আমার জন্য বিয়ে করা ছিল ফরজ। বলা হয় শয়তান একাকীত্বের সুযোগ নিয়ে আমাদেরকে বিপথে পরিচালিত করে। এই আটটি বছর আমি ছিলাম সম্পূর্ণ একা। এই সময়টিতে আমার জন্য বিয়ে করা ছিল সবচেয়ে বড় ফরজ। কিন্তু আমি সে সময়ে অনেক চেয়েও বিয়ে করতে পারিনি। অথচ আজ যখন আমি কর্মজীবনে পদার্পণ করেছি, যখন আমার একাকী হওয়ার তেমন সুযোগই থাকছে না। দেশের মাটিতে অপেক্ষাকৃত কম নগ্নতা ও যৌনতার মাঝে বসবাস করছি তখন বিয়েটা আমার জন্য একটি সাধারণ সুন্নাহ ছাড়া আর কিছুই নয়। এবং বিয়ের প্রতি তাড়নাটা যখন আমার একেবারেই তলানিতে তখন স্রেফ বংশের মান ও ধারা বজায় রাখতে আমি আজ বিয়ে করছি। এটা আমার জন্য অবশ্যই একটি শ্রেষ্ঠ কৌতুক।

আমি একজন একেশ্বরবাদী ইমানদার মুসলিম কিন্তু এই বিগত আটটি বছর আমার একাধিক প্রভু ছিল। একজন ঘরের প্রভু, যাকে আমি অসন্তুষ্ট করতে পারিনি। আরেকজন আমার প্রকৃত স্রষ্টা, ঘরের প্রভুকে সন্তুষ্ট রাখতে গিয়ে যাকে আমি প্রতিদিন অসন্তুষ্ট করেছি। সত্যি কথা বলতে ঐ আটটি বছর আমি প্রকৃত ইমানদার থাকতে পারিনি। ছাত্রাবস্থায় বিয়ের কথা বললে ঘরের প্রভু রেগে যাবেন বলে আমি তাকে বিয়ের কথা বলতেই সাহস পাইনি। অথচ এই ঘরের প্রভুকে শান্ত রাখতে গিয়ে আমি আমার স্রষ্টাকে বার বার অসন্তুষ্ট করেছি। সময় ও স্থানের কারণে হয়ে ওঠা একটি ফরজ তরক করে সে অবাধ্যতার মাত্রা আমি আরও বাড়িয়ে দিয়েছি। অথচ আজ আমি ঠিকই বিয়ে করেছি তাই আজ আমার জীবনের সবচেয়ে হাস্যকর কৌতুকের দিন।
এখানে আজ উপস্থিত আছেন ইসলামি সমাজ গড়ার স্বপ্নে বিভোর মানুষদের প্রথম সারির নেতারা। আপনারা আপনাদের সহযাত্রীর পুত্রের বিয়েতে এসেছেন। আপনাদের সবাইকে সেজন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। তবে আমি বলবো আপনার স্বপ্ন দেখানো পর্যন্তই নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু পতনের গিরিখাদ থেকে যুব সমাজকে টেনে তোলার কাজে কোনও অবদানই রাখতে পারেন নি। যেই আল্লাহ চরিত্র রক্ষার্থে বিবাহকারী যুবকের রুটি রুজির দায়িত্ব নিজ হাতে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সেই আল্লাহর উপর আস্থা হারিয়ে রুটি রুজির দোহাই দিয়েই যুব-সমাজের বড় একটি অংশকে বিয়ে থেকে নিগৃহীত করে তাদেরকে জিনার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। যার কারণে এমন একটি মুসলিম অধ্যুষিত সমাজেও আপনারা লাঞ্ছনার সাথে হাহুতাশ করে বেঁচে আছেন। আপনার যতদিন এই সমস্যার সমাধান না দিতে পারবেন ততদিন আপনাদের স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে যাবে না বরং দিবাস্বপ্নে পরিণত হবে, এবং সেটাই হতে চলেছে।”

এতটুকু কথা বলে বর যখন নিজ আসনে ফিরে আসছিল তখন মস্তক অবনত দর্শকসম্বলিত পুরোটা মিলনায়তনে চলছিল পিনপতন নীরবতা। সম্ভবত একটি অতি-পরিচিত কিন্তু অননুভূত অপরাধ-বোধে বিদ্ধ হয়ে কাতরাচ্ছিলও প্রতিটি চিন্তাশীল মন।