লবণ খাওয়া কমাবেন যেভাবে

আপনার শরীরের যতটুকু প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি লবণ খেলে তা আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত লবণ খাওয়া অনেক সময় অনেক অসুখের কারণ হয়ে থাকে। যদি আপনার অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার অভ্যাস থাকে তবে হঠাৎ লবণ খাওয়া কমালে খাবার আপনার কাছে স্বাদহীন মনে হতে পারে। কিন্তু আস্তে আস্তে তা আপনার অভ্যাস হয়ে যাবে। কয়েক সপ্তাহ পরে আর আপনি লবণের অভাব বোধ করবেন না। এমনকি কিছু কিছু খাবার আপনার কাছে বেশি লবণাক্ত মনে হতে পারে। লবণ খাওয়া কমাতে চাইলে এক চা চামচের চার ভাগের এক ভাগ লবণ দিয়ে রান্না করা শুরু করুন। আর লবণ কম খাওয়া শুরু করলে এবং লবণের ব্যবহার রান্নায় কমিয়ে দিলে খাবারের নিজস্ব স্বাদ গ্রহণ করার অভ্যাস হয়ে যাবে। তখন অতিরিক্ত লবণ ছাড়াই আপনি খাবারের যথেষ্ট স্বাদ পাবেন।

সোডিয়াম বা লবণ খাওয়া কমানোর উপায়
রান্নায় লবণের ব্যবহার ছাড়াও স্বাদ বাড়ানোর অনেক উপায় রয়েছে। সেইগুলি ব্যবহার করে সহজেই লবণের অভ্যাস থেকে বের হয়ে আসতে পারেন।
১. অনেক বেশি তাজা খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন
বেশিরভাগ তাজা ফলমূল এবং শাকসব্জিতে প্রাকৃতিকভাবেই খুব সামান্য পরিমাণে সোডিয়াম থাকে। প্রচুর তাজা ফলমূল ও শাকসব্জি খাবেন।

২.ফ্রেশ মাংস বেছে নিন
-ফ্রেশ মাংসে হট ডগ, সসেজ এবং ফ্রোজেন বা জমানো মাংসের চেয়ে অনেক কম পরিমাণে সোডিয়াম থাকে। খাবারের তালিকা দেখে কম সোডিয়ামযুক্ত খাবার বেছে নিন।

৩• অল্প সোডিয়াম দেওয়া পণ্য
-প্রক্রিয়াজাত খাবার বা পণ্য কিনতে হলে যেগুলিতে লো-সোডিয়াম লেবেল আছে সেগুলি কিনুন।

৪• বেশি সোডিয়াম দেওয়া পণ্য কম ব্যবহার করুন
-কেচআপ বা সস এই জাতীয় পদার্থেও প্রচুর লবণ থাকে। যেমন এক টেবিলচামচ সয়া সসে ১০০০ মিলিগ্রাম লবণ থাকে। এগুলির ব্যবহার কমিয়ে দিন।

৫• রেসিপি থেকে যখন সম্ভব লবণ বাদ দিন
-যেসব রান্নায় সম্ভব সেগুলি থেকে লবণ একেবারে বাদ দিন। যেমন স্যুপ বা স্ট্যু সহজেই লবণ ছাড়া রান্না করতে পারেন। রান্নার বই দেখে লবণ ছাড়া রেসিপি বাছাই করুন।

বেশিরভাগ তাজা ফলমূল এবং শাকসব্জিতে প্রাকৃতিকভাবেই খুব সামান্য পরিমাণে সোডিয়াম থাকে। প্রচুর তাজা ফলমূল ও শাকসব্জি খাবেন।

৬• লবণের পরিবর্তে অন্যান্য মসলা দ্রব্য ব্যবহার করুন
খাবারে লবণের পরিবর্তে গোলমরিচ এবং অন্যান্য মসলা দ্রব্য ব্যবহার করুন। মরিচ, রসুন, আদা ঠিক পরিমাণে ব্যবহার করুন লবণের বিকল্প হিসাবে। স্ন্যাক্স খেতে হলে লবণ ছাড়া স্ন্যাক্স খান। তবে টেবল-সল্টের পরিবর্তে সামুদ্রিক লবণ ব্যবহার করা একই কথা। দুইটিতেই প্রায় সমপরিমাণ সোডিয়াম থাকে।

৭• পটাসিয়াম যুক্ত খাবার খান
-পটাসিয়াম বেশি আছে এমন খাবার খান। পটাসিয়াম ব্লাড প্রেশারের ক্ষেত্রে সোডিয়ামের প্রভাব নষ্ট করে ফেলে। ফলে ব্লাড প্রেশারের ঝুঁকি কমে যায়। কম বয়স্ক এবং প্রাপ্তবয়স্করা প্রতিদিন ৪৭০০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম গ্রহম করতে পারে। শাক, তাজা সবজি এবং ফলমূলে প্রচুর পটাসিয়াম থাকে।

৮• মসলা বা সবজি সিদ্ধ করুন অথবা বেঁটে নিন
মসলা বা সবজির আসল ফ্লেভার বের লবণের স্বাদের ভালো বিকল্প। মরিচ, টমেটো, কুমড়া এই জাতীয় সবজিগুলি সিদ্ধ করে বা বেঁটে সহজেই এদের আসল ফ্লেভার বের করা যায়।

৯.বাইরে খেতে হলে যেভাবে লবণ কম খেতে পারেন
ক্যাফে, রেস্টুরেন্টে বা বাইরে খেতে গেলে অল্প লবণ দেওয়া খাবার পছন্দ করে লবণ কম খেতে পারেন। তবে এর আগে আপনার জানতে হবে কোন খাবারগুলিতে লবন কম দেওয়া থাকে।
– পিজা- পেপেরনি অথবা এক্সট্রা পনির দেওয়া পিজার বদলে সবজি অথবা মুরগীর তৈরি পিজা বেছে নিন।
-পাস্তা- সসেজ অথবা পনিরের বদলে টমেটো সস দেওয়া সবজি অথবা চিকেন দেওয়া পাস্তায় লবণ কম থাকে।
-বার্গার- বিফ, মাটন, পনির, বার্বিকিউ সস এগুলি পরিহার করতে হবে। বার্গারের ক্ষেত্রে সালাদ পছন্দ করতে পারেন।
-চাইনিজ অথবা ভারতীয় খাবার- ফ্রায়েড রাইস বা পোলাওয়ের বদলে সাদা ভাত খান ‘কম’ লবনের জন্য।
-স্যান্ডউইচ- বিফ বা পনিরের স্যান্ডউইচের চেয়ে ডিম অথবা সবজি অথবা চিকেন স্যান্ডউইচে লবণ কম থাকে। চাটনি বা সর্ষের সসের চেয়ে সালাদ বা কম ফ্যাটযুক্ত মেয়োনেজে লবণ কম থাকে।
-ব্রেকফাস্ট- ডিম পোচ, সাধারণ পাউরুটি টোস্ট, মাশরুম, টমেটো ইত্যাদি খেতে পারেন লবণ কম খেতে চাইলে। মাংস খেতে চাইলে অল্প খান।
-সালাদ- সালাদ খেতে চাইলে সস ছাড়া সালাদ খান। লবণ কম খেতে চাইলে সস দেওয়া সালাদ পরিহার করুন।

 

Exit mobile version