জাহান্নাম থেকে নিজে বাঁচো ও পরিবারকে বাঁচাও

11

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا قُوۡۤا اَنۡفُسَكُمۡ وَ اَهۡلِیۡكُمۡ نَارًا وَّ قُوۡدُهَا النَّاسُ وَ الۡحِجَارَۃُ عَلَیۡهَا مَلٰٓئِكَۃٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَّا یَعۡصُوۡنَ اللّٰهَ مَاۤ اَمَرَهُمۡ وَ یَفۡعَلُوۡنَ مَا یُؤۡمَرُوۡنَ

‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে ও পরিবারবর্গকে আগুন (জাহান্নাম) থেকে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। সেখানে অত্যন্ত কর্কশ, রূঢ় ও নির্মম স্বভাবের ফেরেশতা নিয়োজিত থাকবে, যারা কখনই আল্লাহর কথা অমান্য করে না এবং নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে’ (তাহরীম ৬)।

জাহান্নাম থেকে বাঁচলে জীবন সফল

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

كُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ ؕ وَ اِنَّمَا تُوَفَّوۡنَ اُجُوۡرَكُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ؕ فَمَنۡ زُحۡزِحَ عَنِ النَّارِ وَ اُدۡخِلَ الۡجَنَّۃَ فَقَدۡ فَازَ ؕ وَ مَا الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَاۤ اِلَّا    مَتَاعُ الۡغُرُوۡرِ ﴿۱۸۵﴾

‘‘প্রতিটি প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর অবশ্যই কিয়ামতের দিনে তাদের প্রতিদান পরিপূর্ণভাবে দেওয়া হবে। সুতরাং যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফলতা পাবে। আর দুনিয়ার জীবন শুধু ধোঁকার সামগ্রী।’’ (আলে-ইমরান : ১৮৫)

পিতা-মাতা তাদের সন্তানদেরকে শিক্ষা দানের জন্য শুধু স্কুলে পাঠিয়েই ক্ষান্ত হন না; বরং ক্লাসের পরে প্রাইভেট, কোচিং ইত্যাদির মাধ্যমে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু অভিভাবকরা কি কখনো চিন্তা করে দেখেছেন যে, তাদের সন্তানদেরকে জাহান্নামের দাউ দাউ করা আগুন থেকে বাঁচাতে হবে?

আল্লাহ দুআ শিক্ষা দিয়েছেন-

رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

‘‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ইহকালে কল্যাণ দান করো এবং পরকালেও কল্যাণ দান কর। আর আমাদেরকে জাহান্নামের থেকে রক্ষা কর।’’ (বাকারাহ : ২০১)

وَالَّذِیۡنَ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَا اصۡرِفۡ عَنَّا عَذَابَ جَہَنَّمَ ٭ۖ  اِنَّ عَذَابَہَا کَانَ غَرَامًا ٭ۖ

اِنَّہَا سَآءَتۡ مُسۡتَقَرًّا وَّمُقَامًا

‘‘এবং যারা বলে, হে আমার পালনকর্তা, আমাদের কাছ থেকে জাহান্নামের শাস্তি হটিয়ে দাও। নিশ্চয় এর শাস্তি নিশ্চিত ধ্বংস। বসবাস ও অবস্থানস্থল হিসেবে তা কত নিকৃষ্ট জায়গা!’’ (ফুরকান : ৬৫-৬৬)

জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় আল্লাহর পথে জিহাদ

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা নিজে বলছেন এমন এক ব্যবসায়ের সন্ধান দেবো, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাব (জাহান্নাম) থেকে রক্ষা করবে আর সে কাজ হলো আল্লাহর পথে জিহাদ করা। তাই সেই দাউ দাউ করা জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য আমাদের সকলকেই আল্লাহর আইন সকল ক্ষেত্রে চালু করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নের জন্য এগিয়ে যেতে হবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا ہَلۡ اَدُلُّکُمۡ عَلٰی تِجَارَۃٍ تُنۡجِیۡکُمۡ مِّنۡ عَذَابٍ اَلِیۡمٍ

‘‘হে ঈমানদারগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যবসায়ের সন্ধান দেবো না, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাব (জাহান্নাম) থেকে রক্ষা করবে?’’ (সুরা সফ : ১০)

তিনি আরো বলেন, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত। এটাই মহাসাফল্য। (সূরা সফ : ১২)

সমগ্র মানবজাতির সমাজ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধন করে ইসলামের বিধান অনুসারে নতুন করে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে চেষ্টা, সংগ্রাম ও চূড়ান্ত শক্তি প্রয়োগের নামই হলো জিহাদ। আংশিক নয় সমগ্র জীবন বিধান চালু করার নামই জিহাদ।

যারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে সারিবদ্ধভাবে সুদৃঢ় প্রাচীরের মতো, আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন। তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি সকল দ্বীনের ওপর তা বিজয়ী করেন। যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।

আল্লাহর আদেশকে নিজেদের জন্য বাধ্যতামূলক করা, তাঁর আদেশ পালনে দায়িত্বশীল হওয়া এবং তাঁর নিষিদ্ধ বিষয় হতে সম্পূর্ণ বিরত থাকা। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যে সব কর্মে অসন্তুষ্ট হন সে সব কর্ম থেকে বিরত থাকা।

পরিবার পরিজন, সন্তান-সন্ততিকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর উপায় হলো, তাদের ইসলামী শিক্ষা দেওয়া, তাদের অন্তরে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ এর আনুগত্যের মানসিকতা গড়ে তোলা, শিশুকাল থেকেই আল্লাহর আদেশ নিষেধ মানার ওপর অভ্যস্ত করা, কখনো প্রয়োজন হলে শরীয়ত সম্মত উপায়ে শাসনের প্রয়োগ করে হলেও আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলতে বাধ্য করা। জীবন বাজি রেখে হলেও আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইন চালু করার জন্য জানমাল দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

জাহান্নামের অপর সাতটি নাম

জাহান্নাম এমন পাপীদের জন্য নির্দিষ্ট, যারা আল্লাহর ক্ষমা লাভ করবে না। কুরআন অনুযায়ী জাহান্নামের স্তর সাতটি এবং দরজাও সাতটি। [১] জাহীম : জ্বলন্ত আগুন [২] হুতামাহ : চূর্ণবিচূর্ণকারী [৩] হাবিয়াহ : অতল গহŸর [৪] সা’ঈর : উজ্জ্বল অগ্নিকাÐ [৫] সাকার [৬] লাযা, [৭] আন-নার : আগুন।

জাহান্নামকে দোযখ বা নরক না বলে জাহান্নাম বলাই উত্তম। প্রতি হরফে দশ নেকি করে ৪ হরফে মোট ৪০ নেকি সাওয়াব পাওয়া যাবে, যা অন্যান্য অ-কুরআনীয় প্রতিশব্দ উচ্চারণে পাওয়া যাবে না। বিশ্ব নবী মুহাম্মদ (ﷺ)  বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলার কিতাবের একটি হরফ যে ব্যক্তি পাঠ করবে তার জন্য এর সওয়াব আছে। আর সওয়াব হয় তার দশগুণ হিসেবে। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ, বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ।’  (সুনানে তিরমিযি, হাদিস : ২৯১০)

 হাদিসে জাহান্নামের পরিচয়

১. আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুবর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘জাহান্নামকে কিয়ামতের ময়দানে আনা হবে। যা ৭০ হাজার ফেরেশতা ৭০ হাজার শিকল দ্বারা (বেঁধে) টেনে উঠাবে। (মুসলিম : ২৮৪২)

২. উৎবাহ ইবনে গাযওয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহুতার খুৎবার মধ্যে জাহান্নামের ব্যাপারে আলোচনা করছিলেন, তিনি বলেন, ‘জাহান্নামের একটি পাথর জাহান্নামের কিনারা থেকে নিক্ষেপ করা হবে তা নিচ পর্যন্ত পৌঁছতে ৭০ বছর লাগবে। এতদসত্তে¡ও জাহান্নাম পাপীদের দ্বারা ভর্তি হয়ে যাবে। তোমরা কি আশ্চর্যাম্বিত হচ্ছো?’ (মুসলিম : ২৯৬৭)

৩. ‘ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ‘যদি জাহান্নামের জাক্কুম ফল দুনিয়াতে নিক্ষেপ করা হয়, তাহলে তার দুর্গন্ধে দুনিয়াবাসীর জীবন-যাপন অসম্ভব হয়ে যাবে।’ (তিরমিযী : ২৫৮৫ আবু ঈসা তিরমিযী হাদীসটিকে ‘হাসান সহীহ’ বলেছেন।)

৪. আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুবর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘কিয়ামতের ময়দানে এক জাহান্নামী ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তুমি দুনিয়ার সমস্ত সম্পদের মালিক হলে কি তা প্রাণের ফিদিয়াস্বরূপ খরচ করতে? সে বলবে হে আমার রব! আমি তা করতাম। তখন আল্লাহ বলবেন, হে আমার বান্দা! আমি তোমাকে তার চেয়েও সহজ হুকুম দিয়েছিলাম, যখন আমি তোমাকে আদম আলাইহিস সালাম এর পিঠ থেকে বের করেছিলাম, তখন বলেছিলাম তুমি আমার সঙ্গে কাউকে শরীক করবে না। কিন্তু তুমি আমার কথা অমান্য করে আমার সঙ্গে অন্যকে শরীক করেছিলে।’ (বুখারী : ৩৩৩৪, মুসলিম : ২৮০৫)

রাসূলুল্লাহ ﷺবলেন, ‘পুঁজ যখন তার মুখের নিকটে নিয়ে আসা হবে, সে তা অপছন্দ করবে। তারপর যখন আরো নিকটে নিয়ে আসা হবে, তখন তার মুখমন্ডল পুড়ে যাবে এবং মাথার চামড়া গলে পড়ে যাবে। তারপর সে যখন তা পান করবে তখন তার নাড়িভুঁড়ি গলে ছিন্নভিন্ন হয়ে মলদার দিয়ে বের হয়ে যাবে।’ (জামে তিরমিজি : ২৫৮৩)

জাহান্নামীরা যখন খাবার চাইবে তখন তাদের দেওয়া হবে যাক্কুম নামক কাঁটাযুক্ত ফল, আর তাদেরকে দেওয়া হবে জাহান্নামীদের উত্তপ্ত রক্ত ও পুঁজ। মূলে গাস্সাক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ হয়- পুঁজ, রক্ত, পুঁজ মেশানো রক্ত এবং চোখ ও গায়ের চামড়া থেকে বিভিন্ন ধরনের কঠোর দৈহিক নির্যাতনের ফলে যেসব রস বের হয়, যা প্রচন্ড দুর্গন্ধযুক্ত। চারিদিকে শোনা যাবে শুধু চিৎকার আর চিৎকার।

৫. ‘‘তোমাদের এ আগুন জাহান্নামের আগুনের সত্তর ভাগের এক ভাগ। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এ এক ভাগ দিয়ে শাস্তি দিলেই তো যথেষ্ট হতো। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺবললেন, জাহান্নামের আগুন তোমাদের আগুনের তুলনায় উনসত্তর গুণ বেশী উত্তপ্ত। (বুখারী ৩২৬৫)

ইবনে কাসীর বলেন, গন্ধক দিয়ে আগুন জ্বালালে তার তাপ ভীষণ ও স্থায়ী হয়। আসমান যমীন সৃষ্টির সময়ই আল্লাহ তায়ালা কাফেরদের জন্য তা সৃষ্টি করে প্রথম আসমানে রেখে দিয়েছেন। কোনো কোনো মুফাসসির বলেন, এগুলো ঐ সমস্ত পাথর যেগুলোর ইবাদাত করা হয়েছে। (ইবনে কাসীর)

জাহান্নামের প্রার্থনায় তাকে বছরে শীত ও গ্রীষ্মে দুই বার শ্বাস প্রশ্বাস গ্রহণের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। (বুখারী ৫৩৭, মুসলিম: ৬৩৭)

৬. রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘আর যারা জাহান্নামবাসী হিসেবে সেখানকার অধিবাসী হবে, তারা সেখানে মরবেও না বাঁচবেও না।’ (মুসলিম)

আল-কুরআনে জাহান্নামের বর্ণনা

আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদে জাহান্নামের আগুন সম্পর্কে খবর দিয়েছেন, যা শুনলে অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে। জান ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়। আল্লাহর কিতাব কুরআন মাজিদ থেকে জাহান্নাম সম্পর্কে এখানে ২১টি আয়াত দেওয়া হলো-

এক.
﴿ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا ٱلۡحُطَمَةُ ٥ نَارُ ٱللَّهِ ٱلۡمُوقَدَةُ ٦ ٱلَّتِي تَطَّلِعُ عَلَى ٱلۡأَفۡ‍ِٔدَةِ ٧ إِنَّهَا عَلَيۡهِم مُّؤۡصَدَةٞ ٨ فِي عَمَدٖ مُّمَدَّدَةِۢ ٩ ﴾ [الهمزة: ٥، ٩]

‘আর কিসে আপনাকে জানাবে হুতামা কী? আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত আগুন। যা হৃৎপিÐ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। নিশ্চয় তা তাদেরকে আবদ্ধ করে রাখবে প্রলম্বিত স্তম্ভসমূহে।’ (সূরা আল-হুমাযাহ : ৫-৯)

দুই.
﴿ وَٱتَّقُواْ ٱلنَّارَ ٱلَّتِيٓ أُعِدَّتۡ لِلۡكَٰفِرِينَ ١٣١ ﴾ [ال عمران: ١٣١]

‘তোমরা ওই আগুনকে ভয় করো, যা কাফেরদের জন্য তৈরি করা হয়েছে।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ৩১)

তিন.
﴿ إِنَّآ أَعۡتَدۡنَا لِلۡكَٰفِرِينَ سَلَٰسِلَاْ وَأَغۡلَٰلٗا وَسَعِيرًا ٤ ﴾ [الانسان: ٤]

‘নিশ্চয় আমরা কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি শিকল, বেড়ি ও প্রজ্জ্বলিত অগ্নি।’ (সূরা আল-ইনসান, আয়াত : ৪)

চার.
﴿ إِنَّآ أَعۡتَدۡنَا لِلظَّٰلِمِينَ نَارًا أَحَاطَ بِهِمۡ سُرَادِقُهَاۚ﴾ [الكهف: ٢٩]

‘নিশ্চয় আমরা জালিমদের জন্য আগুন প্রস্তুত করেছি, যার প্রাচীরগুলো তাদেরকে বেষ্টন করে রেখেছে। (সূরা আল-কাহফ, আয়াত : ২৯)

পাঁচ.
لَهَا سَبْعَةُ أَبْوَٰبٍ لِّكُلِّ بَابٍ مِّنْهُمْ جُزْءٌ مَّقْسُومٌ

‘তার সাতটি দরজা রয়েছে। প্রতিটি দরজার জন্য রয়েছে তাদের মধ্য থেকে নির্দিষ্ট একটি শ্রেণী’। (সূরা আল-হিজর, আয়াত : ৪৪)

ছয়.
﴿ وَسِيقَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓاْ إِلَىٰ جَهَنَّمَ زُمَرًاۖ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءُوهَا فُتِحَتۡ أَبۡوَٰبُهَا﴾ [الزمر: ٧١]

‘আর কাফিরদেরকে দলে দলে জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। অবশেষে তারা যখন জাহান্নামের কাছে এসে পৌঁছবে তখন তার দরজাগুলো খুলে দেওয়া হবে।’ (সূরা আয-যুমার, আয়াত : ৭১)

সাত.
﴿ يَوۡمَ يَغۡشَىٰهُمُ ٱلۡعَذَابُ مِن فَوۡقِهِمۡ وَمِن تَحۡتِ أَرۡجُلِهِمۡ﴾ [العنكبوت: ٥٥]

‘যেদিন আযাব তাদেরকে তাদের ওপর থেকে ও তাদের পায়ের নীচে থেকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে’ (সূরা আল-‘আনকাবূত, আয়াত : ৫৫)

আট.
﴿ مَّأۡوَىٰهُمۡ جَهَنَّمُۖ كُلَّمَا خَبَتۡ زِدۡنَٰهُمۡ سَعِيرٗا ٩٧ ﴾ [الاسراء: ٩٧]

‘তাদের ঠিকানা হলো জাহান্নাম। যখনই নির্বাপিত হওয়ার উপক্রম হবে আমি তখন অগ্নি আরও বৃদ্ধি করে দেবো।’ (সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত : ৯৭)

নয়.
﴿وَقَالُواْ لَا تَنفِرُواْ فِي ٱلۡحَرِّۗ قُلۡ نَارُ جَهَنَّمَ أَشَدُّ حَرّٗاۚ ﴾ [التوبة: ٨١]

‘তারা (মুনাফিকরা) বলে, এ গরমে অভিযানে বের হয়ো না। বলে দাও, জাহান্নামের আগুন এর চেয়েও প্রচÐ উত্তপ্ত।’ (সূরা আত-তওবা, আয়াত : ৮১)

দশ.
﴿ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا هِيَهۡ ١٠ نَارٌ حَامِيَةُۢ ١١ ﴾ [القارعة: ١٠، ١١]

‘আপনি কি জানেন তা কী? তা হলো- প্রজ্জ্বলিত অগ্নি।’ (আল-ক্বরিয়াহ : ১০-১১)

এগার.
﴿ إِنَّ ٱلۡمُجۡرِمِينَ فِي ضَلَٰلٖ وَسُعُرٖ ٤٧ يَوۡمَ يُسۡحَبُونَ فِي ٱلنَّارِ عَلَىٰ وُجُوهِهِمۡ ذُوقُواْ مَسَّ سَقَرَ ٤٨ ﴾ [القمر: ٤٧، ٤٨]

‘নিশ্চয় অপরাধীরা রয়েছে পথভ্রষ্টতা ও (পরকালে) প্রজ্জ্বলিত আগুনে। সেদিন তাদেরকে উপুড় করে টেনে হিঁচড়ে জাহান্নামে নেওয়া হবে। (বলা হবে) জাহান্নামের ছোঁয়া আস্বাদন করো।’ (সূরা আল-ক¦মার, আয়াত : ৪৭-৪৮)

বার.
﴿ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا سَقَرُ ٢٧ لَا تُبۡقِي وَلَا تَذَرُ ٢٨ لَوَّاحَةٞ لِّلۡبَشَرِ ٢٩ ﴾ [المدثر: ٢٧، ٢٩]

‘কিসে আপনাকে জানাবে জাহান্নামের আগুন কী? এটা অবশিষ্টও রাখবে না এবং ছেড়েও দেবে না। চামড়াকে দগ্ধ করে কালো করে দেবে।’ (সূরা আল-মুদ্দাসসির, আয়াত : ২৭-২৯)

তের.
﴿ إِنَّهَا تَرۡمِي بِشَرَرٖ كَٱلۡقَصۡرِ ٣٢ كَأَنَّهُۥ جِمَٰلَتٞ صُفۡرٞ ٣٣ ﴾ [المرسلات: ٣٢، ٣٣]

‘নিশ্চয় তা (জাহান্নাম) ছড়াবে প্রাসাদসম স্ফুলিঙ্গ। তা যেন হলুদ উষ্ট্রী।’ (সূরা আল-মুরসালাত, আয়াত : ৩২-৩৩)

চৈদ্দ.
﴿ وَتَرَى ٱلۡمُجۡرِمِينَ يَوۡمَئِذٖ مُّقَرَّنِينَ فِي ٱلۡأَصۡفَادِ ٤٩ سَرَابِيلُهُم مِّن قَطِرَانٖ وَتَغۡشَىٰ وُجُوهَهُمُ ٱلنَّارُ ٥٠ ﴾ [ابراهيم: ٤٩، ٥٠]

‘আর সেদিন তুমি অপরাধীদের দেখবে তারা শিকলে বাঁধা। তাদের পোশাক হবে আলকাতরার এবং আগুন তাদের চেহারাসমূহকে ঢেকে ফেলবে।’ (সূরা ইবরাহীম, আয়াত : ৪৯-৫০)

পনের.
﴿ إِذِ ٱلۡأَغۡلَٰلُ فِيٓ أَعۡنَٰقِهِمۡ وَٱلسَّلَٰسِلُ يُسۡحَبُونَ ٧١ ﴾ [غافر: ٧١، ٧٢]

‘যখন তাদের গলদেশে বেড়ী ও শিকল থাকবে, তাদেরকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে ফুটন্ত পানিতে, অতঃপর তাদেরকে আগুনে পোড়ানো হবে।’ (সূরা গাফির/আল-মুমিন, আয়াত : ৭১-৭২)

ষোল.
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ لَعَنَ ٱلۡكَٰفِرِينَ وَأَعَدَّ لَهُمۡ سَعِيرًا ٦٤ ﴾ [الاحزاب: ٦٤]

‘নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা কাফেরদের লানত করেছেন। তাদের জন্য অগ্নি প্রস্তত করে রেখেছেন।’ (সূরা আল-আহযাব, আয়াত : ৬৪)

সতের.
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ بِ‍َٔايَٰتِنَا سَوۡفَ نُصۡلِيهِمۡ نَارٗا كُلَّمَا نَضِجَتۡ جُلُودُهُم بَدَّلۡنَٰهُمۡ جُلُودًا غَيۡرَهَا لِيَذُوقُواْ ٱلۡعَذَابَۗ﴾ [النساء: ٥٦]

‘নিশ্চয় যারা আমার নিদর্শনসমূহ অস্বীকার করবে, আমি তাদেরকে আগুনে নিক্ষেপ করব। তাদের চামড়াগুলো যখন জ্বলে পুড়ে যাবে তখন আবার আমি অন্য চামড়া দিয়ে তা পাল্টে দেবো। যাতে তারা আযাব ভোগ করতে পারে।’ (সূরা নিসা: ৫৬)

আঠার.
﴿ إِنَّ شَجَرَتَ ٱلزَّقُّومِ ٤٣ طَعَامُ ٱلۡأَثِيمِ ٤٤ كَٱلۡمُهۡلِ يَغۡلِي فِي ٱلۡبُطُونِ ٤٥ كَغَلۡيِ ٱلۡحَمِيمِ ٤٦ ﴾ [الدخان: ٤٣، ٤٦]

‘নিশ্চয় জাক্কুম বৃক্ষ। পাপীর খাদ্য; গলিত তামার মতো, উদরসমূহে ফুটতে থাকবে ফুটন্ত পানির মতো।’ (সূরা আদ-দুখান, আয়াত : ৪৩-৪৬)

উনিশ.
﴿إِنَّهَا شَجَرَةٞ تَخۡرُجُ فِيٓ أَصۡلِ ٱلۡجَحِيمِ ٦٤ طَلۡعُهَا كَأَنَّهُۥ رُءُوسُ ٱلشَّيَٰطِينِ  [الصافات:

‘এটি একটি বৃক্ষ যা উদগত হয় জাহান্নামের মূল থেকে। এর গুচ্ছ শয়তানের মস্তকের ন্যায়।’ (সূরা আস-সাফফাত : ৬৪-৬৫)

বিশ.
﴿وَإِن يَسۡتَغِيثُواْ يُغَاثُواْ بِمَآءٖ كَٱلۡمُهۡلِ يَشۡوِي ٱلۡوُجُوهَۚ بِئۡسَ ٱلشَّرَابُ وَسَآءَتۡ مُرۡتَفَقًا ٢٩[الكهف:

‘যদি তারা পান করার জন্য প্রার্থনা করে তখন তাদের পুঁজের ন্যায় পানীয় দ্রব্য দেওয়া হবে। যা তাদের মুখমÐল দগ্ধ করবে। তা কতই না নিকৃষ্ট পানি এবং খুবই মন্দ আশ্রয়স্থল।’ (সূরা আল-কাহফ, আয়াত : ২৯)

একুশ.
﴿ وَسُقُواْ مَآءً حَمِيمٗا فَقَطَّعَ أَمۡعَآءَهُمۡ ١٥ ﴾ [محمد: ١٥]

‘এবং তাদের ফুটন্ত পানি পান করানো হবে। যা তাদের নাড়ি-ভুঁড়ি ছিন্ন-ভিন্ন করে ফেলবে।’ (সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত : ১৫)

যত ধরনের কঠিন শাস্তি

জাহান্নাম এর শাস্তির নানা স্তর আছে। সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) আজাবের ব্যাপারে বলেন, ‘আগুন জাহান্নামিদের কাউকে উভয় টাখনু পর্যন্ত গ্রাস করবে।  কাউকে কোমর পর্যন্ত গ্রাস করবে। আবার কাউকে ঘাড় পর্যন্ত গ্রাস করবে।’ (মুসলিম হাদিস ২১৫৮৫)

শীত এর শাস্তি : আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একদা রাসূল ﷺ এর সাথে ছিলাম। এমন সময় একটি বিকট শব্দ শোনা গেল। রাসূল ﷺ বললেন, ‘‘তোমরা কি জানো এটা কিসের শব্দ?’’ আমরা বললাম, ‘‘আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই এ ব্যাপারে ভালো জানেন।’’ তিনি বললেন, ‘‘এটি একটি পাথরের শব্দ, যা আজ থেকে সত্তর বছর পূর্বে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, আর তা তার তলদেশে যাচ্ছিল এবং এতদিনে সেখানে গিয়ে পৌঁছেছে।’’ (সহীহ মুসলিম)

সহিহ বোখারি ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘জাহান্নাম তার রবের কাছে অভিযোগ করল, আমার এক অংশকে অপর অংশ খেয়ে ফেলছে। তখন রাব্বে কারিম তাকে দুবার শ্বাস নেওয়ার অনুমতি দিলেন। একবার গ্রীষ্মকালে, আরেকবার শীতকালে। তোমরা গরমের যেই প্রচন্ডতা অনুভব করো, তা জাহান্নামের উত্তপ্ততা থেকে আর শীতের যে তীব্রতা অনুভব করো; তা জাহান্নামের শীতলতা (যামহারির) থেকে।’ (সহিহ বুখারী ও মুসলিম)

বর্ণিত হাদিস দ্বারা বুঝা যায়, জাহান্নামের শাস্তিসমূহ থেকে শীতলতাও এক ধরণের শাস্তি। বস্তুত জাহান্নামের শাস্তির ভয়াবহতা মানুষের ধারনার বাইরে।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ‘জাহান্নামের আগুন এক হাজার বছর জ্বালানোর পর তা লাল বর্ণ ধারণ করেছে। আবার এক হাজার বছর জ্বালানোর পর তা সাদা বর্ণ হয়েছে। তারপর এক হাজার বছর জ্বালানোর পর তা কালো বর্ণ হয়েছে। এখন তা গভীর অন্ধকার রাতের অন্ধকারের মতো কালো (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৪৩২০)।

‘জাহান্নামিরা যখন পিপাসায় ছটফট করবে তখন তাদেরকে গলিত পুঁজ পান করানো হবে, যা সে এক এক ঢোক করে গিলবে’। (সূরা ইবরাহিম : ১৬-১৭)

‘আল্লাহ তায়ালার ওয়াদা, যে ব্যক্তি নেশা করবে আল্লাহ অবশ্যই তাকে ‘তীনাতুল খাবাল’ থেকে পান করাবেন। সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলে, হে আল্লাহর রাসূল ﷺ তীনাতুল খাবাল কী? তিনি বললেন, জাহান্নামীদের পুঁজ বা দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম।’ (মুসলিম ২০০২)

ইবনে আব্বাস থেকে রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত, একদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, অর্থাৎ ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং পূর্ণ মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ কোরো না।’ তারপর প্রিয় নবী ﷺ ইরশাদ করলেন, ‘যদি জাক্কুম গাছের একটা ফোঁটা এই দুনিয়ায় পড়ে তাহলে দুনিয়াবাসীর জীবনোপকরণ বিনষ্ট হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় ওইসব লোকের কেমন দুর্দশা হবে এটা যাদের খাদ্য হবে?’ (জামে তিরমিজি : ২৫৮৫)

মৃত্যুহীন শাস্তি : জাহান্নামিদের মৃত্যু হবে না। তারা আর্তনাদ করতে থাকবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তবে যারা কুফরি করে তাদের জন্য জাহান্নামের শাস্তি রয়েছে।’

তাদের মৃত্যুর আদেশ দেওয়া হবে না এবং শাস্তিও হালকা করা হবে না, এভাবে আমি অকৃতজ্ঞদের শাস্তি দিয়ে থাকি। তারা সেখানে আর্তনাদ করে বলবে, ‘হে আমাদের রব, আমাদের বের করুন, আমরা ভালো কাজ করব, আগে যা করেছি তা করব না। আল্লাহ বলবেন, আমি কি তোমাদের এত দীর্ঘ জীবন দিইনি? তখন কেউ সতর্ক হতে চাইলে সতর্ক হতে পারত। অতএব তোমরা শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করো, জালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই।’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ৩৬-৩৭)

সর্বনিম্ন শাস্তি : নোমান বিন বশির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘জাহান্নামে যাকে সবচেয়ে কম শাস্তি দেওয়া হবে তাকে জাহান্নামের দুটি জুতো পরানো হবে, যার দুই ফিতা হবে আগুনের। এর উত্তাপে মাথার মগজ টগবগ করতে থাকবে ডেগের ফুটন্ত পানির মতো। সে মনে করবে তাকে সবচেয়ে বেশি শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। মূলত তাকে সবচেয়ে কম শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। জাহান্নামীদের মধ্যে সবচেয়ে কম শাস্তি হবে আবু তালিবের।’ (মুসলিম, হাদিস : ২১৩)

’দুনিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুনে ঢুকিয়ে বের করা হবে। তাকে বলা হবে, তুমি দুনিয়াতে কখনো সুখ ভোগ করেছিলে? সে বলবে, না, আমি কখনো সুখ ভোগ করিনি।’ (মুসলিম)

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত ‘জাহান্নামের সবচেয়ে কম ও সহজতর শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তি পৃথিবী পরিমাণ সম্পদ থাকলেও তার বিনিময়ে এ আযাব থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করত।’ (বুখারী, মুসলিম)

মাথায় ফুটন্ত পানির শাস্তি : আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা বিবদমান দুটি পক্ষ, তারা তাদের রবের ব্যাপারে বিতর্ক করে, যারা কুফরি করে তাদের জন্য আগুনের পোশাক প্রস্তুত করা হয়েছে, তাদের মাথার ওপর ফুটন্ত পানি ঢালা হবে।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ১৯-২০)

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল ﷺ ইরশাদ করেন, ‘জাহান্নামিদের মাথায় উত্তপ্ত গরম পানি ঢালা হবে। তা পেটে পৌঁছে সব নাড়িভুঁড়ি গলিয়ে দেবে। এরপর তা পায়ের দিক থেকে বের হয়ে পড়বে। (তিরমিজি, ২৫৮৩)

মুখের ওপর ভর দিয়ে চলার শাস্তি : আল্লাহ তায়ালা বলেন, জাহান্নামিদের চেহারাসহ পুরো শরীর আগুন দিয়ে দগ্ধ করা হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘কিয়ামতের দিন আমি তাদের অন্ধ, মূক ও বধির করে মুখের ওপর ভর দেওয়া অবস্থায় সমবেত করব। তাদের আবাস হবে জাহান্নাম, যখন তা স্তিমিত হবে আমি তাদের জন্য আগুনের শিখা বৃদ্ধি করব।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল: ৯৭)।

নতুন চামড়া গজানো ও পুড়ানোর শাস্তি : আল্লাহ বলেন, ‘যারা আমার নিদর্শন অস্বীকার করে আমি তাদের আগুনে পোড়াব, যখন তাদের চামড়া দগ্ধ হবে তখন সেই স্থানে নতুন চামড়া সৃষ্টি করব যেন তারা শাস্তি ভোগ করে, আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা : নিসা, আয়াত : ৫৬)

রক্ত-পুঁজ পানের শাস্তি : আবদুল্লাহ বিন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল ﷺ বলেন, ‘কিয়ামতের দিন অহংকারীদের মানুষের আকৃতিতে পিঁপড়ার মতো সমবেত করা হবে। সব দিক থেকে লাঞ্ছনা তাদের আক্রান্ত করবে। জাহান্নামের বাওলাস নামের বন্দিশালায় তাদের নেওয়া হবে। কঠিন আগুন তাদের গ্রাস করবে। জাহান্নামীদের দুর্গন্ধময় পুঁজ-রক্ত ইত্যাদি তাদের পান করানো হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৪৯২)

বিশাল দেহ পোড়ানোর শাস্তি : আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল ﷺ বলেন, ‘জাহান্নামে কাফিরদের উভয় কাঁধের দূরত্ব দ্রæতগামী ঘোড়ার তিন দিনের পথের সমান হবে।’ অন্য বর্ণনা মতে, ‘কাফিরের একটি দাঁত উহুদ পাহাড়ের সমান হবে এবং তার দেহের চামড়া তিন দিনের দূরত্ব পরিমাণ পুরু হবে।’ (বুখারি-৬৫৫১)

লোহার হাতুড়ি দিয়ে পেটানোর শাস্তি : ‘আর তাদের জন্য থাকবে লোহার হাতুড়ি। যখনই তারা যন্ত্রণাকাতর হয়ে তা থেকে বের হয়ে আসতে চাইবে, তখনই তাদেরকে তাতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে এবং বলা হবে, দহন-যন্ত্রণা আস্বাদন করো।’ (সূরা আল-হজ, আয়াত : ১৯-২২)

আলকাতরার এবং আগুনের পোশাক দ্বারা শাস্তি : ‘তারা শিকলে বাঁধা। তাদের পোশাক হবে আলকাতরার এবং আগুন তাদের চেহারাসমূহকে ঢেকে ফেলবে।’ (সূরা ইবরাহীম, আয়াত : ৪৯-৫০)

জাহান্নামীদের রক্ত অশ্রু দিয়ে নৌকা চলার শাস্তি : হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে নবী করিম ﷺ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, ‘হে লোক সকল! তোমরা (আল্লাহর আযাবের ভয়ে) বেশি করে কাঁদ। আর যদি তোমরা এরূপ করতে না পারো (কান্না যদি না আসে), তাহলে অন্তত (ভয়ে) কান্নার ভান করো। কেননা, জাহান্নামীরা জাহান্নামে গিয়ে এমনভাবে কাঁদবে যে, তাদের অশ্রু তাদের মুখের উপর এভাবে গড়িয়ে পড়বে , মনে হবে এটা পানির নালা। এভাবে কাঁদতে কাঁদতে তাদের অশ্রু শেষ হয়ে যাবে এবং এর স্থলে রক্ত প্রবাহিত হতে শুরু করবে। তারপর (এ রক্তক্ষরণের দরুন) তাদের চোখে ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে যাবে। এরপর এই ক্ষতস্থান থেকে আরো বেশি রক্ত বের হবে, তখন জাহান্নামীদের এই অশ্রু এবং রক্তের পরিমাণ এমন হবে যে সেখানে যদি অনেকগুলো নৈাকা চালিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে অনায়াসে চলতে পারবে । (শরহুস সুন্নাহ)

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল ﷺ বলেন, ‘জাহান্নামিরা কাঁদতে থাকবে। এক পর্যায়ে তাদের চোখের পানি শেষ হয়ে যাবে। অতঃপর তাদের চোখ দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকবে। ফলে তাদের মুখে বিশাল গর্তসদৃশ তৈরি হবে। তাতে নৌযান পাঠানো হলে তা অনায়াসে চলতে পারবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪৩২৪)

সবশেষে যে কথা বলা যায়, তা হলো আল্লাহ তায়ালা সমস্ত মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর জন্য কিতাব ও নবী পাঠিয়েছেন। তাদের মাধ্যমে সমস্ত মানবজাতিকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচিয়ে জান্নাতে যাওয়ার আহ্বান জানানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এখন নবী নেই, সাহাবী নেই, আমরা যারা নবীর অনুসারী উম্মতে মোহাম্মদী আছি তাদেরই এখন দায়িত্ব সমগ্র পৃথিবীবাসীকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করা।

হে রব! চিরদিন জ্বলতে থাকা জাহান্নাম থেকে রক্ষা করো

কুরআনের ৩৪ জায়গায় জাহান্নামবাসীদের জন্য ‘খুলুদ’ (চিরন্তন) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। তিন জায়গায় ‘খুলুদ’ এর  সাথে ‘আবাদান’ (চিরকাল) থাকতে হবে বলে দেওয়া হয়েছে। যারা শিরক করবে না তাদেরকে সবশেষে হলেও জাহান্নাম থেকে উদ্ধার করা হবে।

-আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার- হে আল্লাহ আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাচাও।

-আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনান্নার ওয়া মাকার্রাবা ইলায়হি মিন কাওলিন আও আমালিন- হে আল্লাহ তেমার কাছে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে চাই এবং ঐ সমস্ত কথা অথবা কাজ হতে বাঁচতে চাই যা জাহান্নামের নিকটবর্তী করে।

رَبَّنَاۤ اِنَّکَ مَنۡ تُدۡخِلِ النَّارَ فَقَدۡ اَخۡزَیۡتَہٗ ؕ وَمَا لِلظّٰلِمِیۡنَ مِنۡ اَنۡصَارٍ

’হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয় তুমি যাকে দোযখে নিক্ষেপ করলে তাকে সবসময়ে অপমানিত করলে, আর জালেমদের জন্য তো সাহায্যকারীই নেই। (আল-ইমরান : ১৯২)

’হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে দাও, যা তুমি ওয়াদা করেছ তোমার রসূলগণের মাধ্যমে এবং কিয়ামতের দিন আমাদিগকে তুমি অপমানিত কোরো না। নিশ্চয় তুমি ওয়াদা খেলাফ করো না।’ (আল-ইমরান : ১৯৪)

رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَاۤ اِنۡ نَّسِیۡنَاۤ اَوۡ اَخۡطَاۡنَا ۚ  رَبَّنَا وَلَا تَحۡمِلۡ عَلَیۡنَاۤ اِصۡرًا کَمَا حَمَلۡتَہٗ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِنَا ۚ  رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلۡنَا مَا لَا طَاقَۃَ لَنَا بِہٖ ۚ  وَاعۡفُ عَنَّا ٝ  وَاغۡفِرۡ لَنَا ٝ  وَارۡحَمۡنَا ٝ  اَنۡتَ مَوۡلٰىنَا فَانۡصُرۡنَا عَلَی الۡقَوۡمِ الۡکٰفِرِیۡنَ ٪

‘হে আমাদের পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তবে আমাদেরকে অপরাধী কোরো না। হে আমাদের পালনকর্তা! এবং আমাদের উপর এমন দায়িত্ব অর্পণ কোরো না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর অর্পণ করেছ। হে আমাদের প্রভূ! এবং আমাদের দ্বারা ঐ বোঝা বহন করাইও না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই। আমাদের পাপ মোচন করো। আমাদেরকে ক্ষমা করো এবং আমাদের প্রতি দয়া করো। তুমিই আমাদের প্রভু। সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কে সাহায্যে করো।’

হে আমাদের রব! জাহান্নামের আগুন যা কলিজা পুড়িয়ে ছাই করে দেয় এবং বার বার জীবিত করে বার বার ছাই করে দেবে; অনন্তকালের জন্য এ লোমহর্ষক আজাব থেকে আমাদের সকলকে রক্ষা করো। আমীন। ওয়া আখের দাওয়ানা আনিল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।

সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আন লাইলাহা ইল্লা আনতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলায়কা।