সেই প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত মেয়েদের সৌন্দর্য চর্চায় কাঁচা হলুদের ব্যবহার হয়ে আসছে। একসময় মনে করা হত বিয়ের কনের রূপ লাবন্য বাড়াতে কাঁচা হলুদের জুড়ি নেই। আর সেই ধারণা থেকে এখনো পর্যন্ত বাঙ্গালী মেয়েরা রূপচর্চায় কাঁচা হলুদের ব্যাবহার করে আসছে। ত্বকের লাবন্য বাড়াতে, মুখে ব্রণ এর দাগ দূর করতে, বয়সের ছাপ কমাতে, রিঙ্কেলস কমাতে ইত্যাদি অনেক কাজে কাঁচা হলুদের জুড়ি নেই। রূপচর্চার বিভিন্ন প্যাক তৈরী করতে এই হলুদ হারবাল উপাদান হিসেবে খুব উপকারী। এটি ত্বকের ক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়ে ত্বককে ভেতর থেকে সারিয়ে তোলে। আজ আমরা রূপচর্চায় হলুদের অবদান ও এর কয়েকটি উপকারী প্যাক নিয়ে আলোচনা করব।
ব্রণ দূর করতেঃগ
কাঁচা হলুদের প্যাক ব্রণ দূর করতে অনেক উপকারি। এর আয়ুর্বেদিক উপাদান ভেতর থেকে ব্রণের জীবানুকে বাইরে বের করে দেয়। এজন্য সপ্তাহে দুই দিন ২ চামুচ কাঁচা হলুদের রস, ১ চামুচ মুলতানি মাটি ও ১ চামুচ নিমপাতার রস এক সঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট করে ত্বকে লাগান। প্যাক শুকিয়ে এলে গোলাপজল দিয়ে ম্যাসাজ করে প্যাকটি নরম করে নিন এবং কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এছাড়া রাতে ঘুমানোর আগে শুধু ব্রণের উপর সরাসরিও কাচা হলুদ লাগিয়ে রাখতে পারেন। এতেও ব্রন দ্রুত বসে যায়।
সৌন্দর্য চর্চায় কাঁচা হলুদের ব্যাবহার
তৈলাক্ত ত্বকের ফেস প্যাকঃ
হলুদের রস তৈলাক্ত ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করতে অনেক উপকারী ভূমিকা পালন করে। এটি ভিটামিন সি ও চন্দনের গুড়ার সঙ্গে মিশে ত্বকের অতিরিক্ত তেল নিঃসরণে সাহায্য করে। এজন্য সপ্তাহে একদিন এক চামচ চন্দনের গুড়ার সঙ্গে আধা চামচ হলুদ গুড়া আধা কাপ কমলার রস মিশিয়ে ভালোভাবে পেষ্ট করে নিতে হবে। এরপর সম্পূর্ন মুখে মেখে কিছুক্ষন অপেক্ষা করে মুখ ধুয়ে নিন।
ত্বকের উজ্জ্বতা বাড়াতেঃ
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ও একে আরো কোমল ও মসৃণ করতে কাঁচা হলুদের বিকল্প নেই। এজন্য কাঁচা হলুদের রস, মুলতানি মাটি মিশিয়ে মুখে লাগান। প্যাক শুকিয়ে এলে গোলাপজল দিয়ে মুছে নিন। এছাড়া সামান্য একটু কাচা হলুদ আর মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে লাগাতে পারেন। এরপর ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন ত্বক কতটা মসৃণ ও কোমল হয়ে যায়।
শুষ্ক ত্বকের প্যাকঃ
শুস্ক ত্বকের খেত্রেও হলুদ অনেক উপকারি। এক্ষেত্রে হলুদ সরাসরি ত্বকে না লাগিয়ে প্যাক হিসেবে ব্যাবহার করা ভালো। প্যাক তৈরির জন্য একটা ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে ২ ফোটা অলিভ অয়েল, আধা চা চামুচ হলুদ গুড়া, কয়েক ফোটা লেবুর রস ও গোলাপ গল মিশিয়ে ভালোভাবে পেস্ট বানিয়ে মুখে, গলায় ও ঘাড়ে ভালোভাবে লাগিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করুন। এরপর কুসুম গরন পানিতে ধুয়ে নিন।
মুখে দাগ দূর করতেঃ
মুখে দাগ দূরীকরণে কাচা হলুদ অনেক উপকারী। ব্রণের দূর করতে টমেটোর রস, কাঁচা হলুদ আর মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। এতে অনেক দ্রুত দাগ দূর হয়। এছাড়া ত্বকের কালো ছোপ দূর করতে কাঁচা হলুদ, মশুরীর ডাল একসঙ্গে বেটে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে ১ বার ব্যাবহার করলে মুখের কালো দাগ দূর হয়।
চেহারার ভাজ বা রিঙ্কেলস দূরীকরনেঃ
অনেক আগে থেকে এটা বিশ্বাস করা হয় যে কাচা হলুদ ত্বকে ভাজ পড়া কমিয়ে বয়স ধরে রাখতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে কাঁচা দুধ অথবা টক দই এর সঙ্গে কাঁচা হলুদের ক্রীম বানিয়ে প্রতিদিন মুখে লাগিয়ে রাখুন। ২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এতে মুখের ভাজ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল ও অনেক কম দেখা যায়।