প্রযুক্তি আমাদের এক করছে, নাকি আলাদা?

43

মানুষের মানবিকতা চর্চার সবচেয়ে বড় উপায়টি সম্ভবত সহানুভূতি। একজনের আবেগ অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যম এই বৈশিষ্ট্যটি। মানুষের মানবিক জগতে ভার্চুয়াল জগত কিভাবে প্রোথিত হচ্ছে এবং এর ভবিষ্যতটাই বা কি- তা নিয়ে ‘(আর)এভুলেশন’ লিখেছেন পিজে ম্যানি। সায়েন্স ফিকশন বিষয়ক এই লেখিকা বহু সায়েন্স ফিকশন সিনেমার সঙ্গে কাজ করেছেন। এই বইয়ে তিনি পরীক্ষা করেছেন, মানুষের সহানুভূতি যদি প্রযুক্তির ব্যবহারে আরো বৃদ্ধি করা যায় তবে কি ঘটতে পারে।

২০০৮ সালে ‘এম্পেথি ইন দ্য টাইম অব টেকনলজি : হাউ স্টোরিটেলিং ইজ দ্য কি টু এম্পেথি’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেছেন তিনি। তাতে তিনি জানান, সহানুভূতি মূলত স্নায়বিক সিস্টেমের ওপর ভিত্তি করে অনুভূত হয়। বিষয়টি নিয়ে এখনো গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা।

তবে সহানুভূতি সৃষ্টির আসল উপায় হলো যোগাযোগ বৃদ্ধি। এ কাজটিকে সহজ করে দিয়েছে প্রযুক্তি। আমরা সহজেই অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি। টেলিকমিউনিকেশন এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে মানুষের সহানুভূতির জগতটাকে আরো সমৃদ্ধ করা যায়। কিন্তু তারপরও মানুষ কেন একজন অপরকে বুঝতে পারে না?

মানুষের মস্তিষ্ক সাধারণত সহানুভূতিতে সহজে সাড়া দেয়। তবে তা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির ক্ষেত্রেই বেশি কার্যকর হয়। কিন্তু একই অনুভূতি সমাজ বা দেশের প্রতি অনুভূত হয় না। একটি দলের মধ্যে তাদের প্রতিই আপনার সহানুভূতি কাজ করবে না যাদের আপনি দলভুক্ত বলে মনে করবেন না।

অনেক প্রযুক্তি রয়েছে যা সহানুভূতিকে ধ্বংসও করে দিতে পারে। ব্লগ বা সোশাল মিডিয়ায় মানুষ নিজের মতামত প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে অপরের মতকেও অবজ্ঞা করতে পারে। এতে পারস্পরিক হিংসা ও বিদ্বেষ তৈরি হচ্ছে। এতে করে এদের মধ্যে সহানুভূতি নষ্ট হচ্ছে।

আবেগময় গল্প যখন বলা হয়, তখন আমাদের মস্তিষ্ক এই অনুভূতিকে সীমাবদ্ধ করে রাখতে পারে না। যে সব উপাদান সহানুভূতি নষ্ট করে তা মস্তিষ্কে আমাদের অনুভূতির অংশটা বন্ধ করে দেয়। ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলিনার মনোবিজ্ঞানী তার গবেষণায় দেখিয়েছেন, কোনভাবে আমারা সহানুভূতিহীন হয়ে পড়লেও তা আবারো ফিরিয়ে আনা যায়।

বিভিন্ন ভিডিও গেমের মাধ্যমেও আমাদের সহানুভূতির চর্চা হতে পারে। যুদ্ধের গেমে আমরা দারুণ সহানুভূতি নিয়ে মনের মতো সৈনিক তৈরি করি। একই পদ্ধতিতে মিলিটারিরা মানুষের মনে সহানুভূতি তৈরি করে সৈনিক সংগ্রহ করতে পারে।

এমন বহু প্রযুক্তি রয়েছে যা আমাদের মনে সহানুভূতি সৃষ্টি করে। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ বা খুনের ঘটনা সোশাল মিডিয়ায় প্রকাশ পেলে মানুষ মারাত্মকভাবে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। নানা উপায়ে সহানুভূতি প্রকাশ করে মানুষ।

মানুষ সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠে যখন সে নিজের মতো অন্য কাউকে খুঁজে পায়। এক সময় প্রযুক্তির মাধ্যমে সহানুভূতি উদ্রেককারী যন্ত্রও হয়তো বানানো যাবে। ‘টেড টক’-এ ভিআর প্রোডাকশনের ক্রিস মিল্ক জানান, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সহানুভূতি সৃষ্টিকারী মেশিন বা অ্যাপ শিগগিরই বানিয়ে ফেলবে।

সব ধরনের প্রযুক্তি এক ধরনের যন্ত্র যা নৈতিকভাবে নিরপেক্ষ। কাজেই এগুলো মানুষের মনে সমানভাবে অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে। এই অনুভূতিটিই আসলে মানব জাতির মানবিক আবেদনের পেশি। প্রযুক্তির বিস্তার যদি এমনভাবে করা যায় যা সহানুভূতির চর্চা করবে, তবে মানুষ আরো বেশি মানবিক আবেগের চর্চা করবে। সূত্র : লাইভ সায়েন্