প্রেমিকার উপহারের টাকা জোগাড় করতে ভাবি ও ভাতিজিকে খুন করেন মো. বেলাল। পুলিশের কাছে এমনই জবানবন্দী দিয়েছেন তিনি।
চট্টগ্রাম নগরীর সদরঘাট দক্ষিণ নালাপাড়া এলাকায় ৭ মে সকালে মা ও মেয়ে খুন হন। ওই ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে মো. বেলালকে (১৯) গ্রেফতার করে নগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
নগর ডিবি কার্যালয়ে বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ডিবি পুলিশের উপ-কমিশনার কুসুম দেওয়ান।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাতে বেলালকে গ্রেফতার করা হয়। সে নগরীর নালাপাড়া থাকত। কুমিল্লার মুরাদনগর কোরবানপুরের মো. মনমিয়া ও হোসনে আরা বেগমের ছেলে এবং মামলার বাদী শাহ আলমের খালাত ভাই সে।
উপ-কমিশনার কুসুম দেওয়ান বলেন, মা-মেয়ে জোড়া খুনের ঘটনায় বেলালকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, প্রেমিকার উপহারের টাকার জন্য সে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
ডিবি পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এস এম তানভীর আরাফাত বলেন, ওই পরিবারে বেলালের অবাধে আসা-যাওয়া ছিল। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার চুরির পরিকল্পনা করে সে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দুই দিন আগে বেলাল তার ভাই শাহ আলমের দোকানে গিয়ে একটি ছুরি সংগ্রহ করে পাশের ডাস্টবিনে লুকিয়ে রাখে।
ঘটনার দিন ৭ মে সকাল ৯টার দিকে ওই ছুরি নিয়ে কালো পোশাক পরে বাসার বাইরে অপেক্ষা করতে থাকে বেলাল। শাহ আলমের দুই ছেলে হৃদয় হোসেন (১২) ও রিয়াদ হোসেন (১১) বাসা থেকে বের হয়ে গেলে বেলাল শাহ আলমের বাসায় প্রবেশ করে। শাহ আলমের স্ত্রী নিহত নাছিমা বেগম (৩৭) রান্না ঘরে থেকে বেলালকে দেখে কেমন আছ বলে জিজ্ঞাসা করে। কিন্তু বেলাল এগিয়ে এসে নাছিমাকে উপর্যুপরি ছুরি দিয়ে আঘাত করে মাটিতে ফেলে দেয়। মেয়ে রিয়া আক্তার (১০) মায়ের চিৎকার শুনে পাশের রুম থেকে বের হয়ে আসলে তাকেও টেনে বাথরুমে নিয়ে জবাই করে পাশেই ছুরিটি ফেলে রেখে যায় বেলাল। পরে আলমিরা থেকে ৬০ হাজার টাকা, দুটি মোবাইল ফোন ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে সেলুনে গিয়ে চুল-দাড়ি কাটে সে। এ সময় তার এক বন্ধু এসে ভাবি ও ভাতিজিকে খুনের ঘটনা জানালে বেলাল এসে ভাই শাহ আলমের সঙ্গে লাশ ধরাধরি করে নামাতে সহযোগিতা করে।
এস এম তানভীর আরাফাত বলেন, এরপর মোবাইল ফোন দু’টির একটি বেলাল তার বান্ধবী ফারজানা এবং অন্যটি বন্ধু মো. আশরাফুলের কাছে রাখতে দেয়। স্বর্ণালঙ্কারগুলো বাকলিয়ার মিয়াখান নগরে আল নূর মার্কেটে টিটু সাহার মৌমিতা জুয়েলার্সে ৩৯ হাজার টাকায় বিক্রি করে। ওই টাকায় ৯ মে রাউজান ইলেক্ট্রনিক্স দোকান থেকে বান্ধবীর জন্য একটি টেলিভিশন, একটি ডিভিডি প্লেয়ার ও দু’টি সাউন্ড বক্স কেনে বেলাল। যা পরে তার বান্ধবীর বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়।
ডিবি অফিসে উপস্থিত নিহত নাছিমা বেগমের স্বামী ও মামলার বাদী শাহ আলম বলেন, আমি কখনো বেলালকে আসামি হিসেবে ধারণা করিনি। সে আমার ছোট ভাই। এত অল্প বয়সে সে দু’জনকে খুন করবে— এ কথাও ভাবতে পারিনি আমি।’
প্রসঙ্গত, ৭ মে সকাল পৌনে ১০টার মধ্যে নগরীর সদরঘাট দক্ষিণ নালাপাড়া এলাকায় ছয় তলা আল ইসলাম ভবনের চতুর্থ তলায় মা নাসিমা বেগম ও মেয়ে রিয়া আক্তারকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। পরে স্বর্ণালঙ্কারসহ দুই লাখ ৭১ হাজার টাকার মালামাল লুট করা হয়। ওই ঘটনায় সদরঘাট থানায় নিহত নাছিমা বেগমের স্বামী শাহ আলম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর-৬, ধারা- দণ্ডবিধি ৩০২/৩৪। মামলাটি পরে ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়।