লড়াকু তারুণ্য থেকে তরুণ নেতৃত্ব

লড়াকু তারুণ্য থেকে তরুণ নেতৃত্ব

রাজপথের লড়াকু সৈনিক থেকে জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্বে আসা তারুণ্যকে ইতিবাচকভাবে দেখতে হবে। একজন বয়স্ক  দুর্নীতিবাজ, অভিজ্ঞ অর্থপাচারকারী, বয়োজ্যেষ্ঠ মদখোর ও জালিমের যোগ্য দোসরের চেয়ে সৎ-দেশপ্রেমী-মানবপ্রেমী নবীনের দায়িত্বপূর্ণ পদে আসীন হওয়াতেও বেশি কল্যাণ নিহিত। আসলে বয়সের চেয়েও সততা, নীতিনৈতিকতা ও চরিত্র বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

যারা বিচারবহির্ভুত হত্যাকান্ড ঘটিয়ে মায়ের বুক খালি করে, যারা খুনিদের আশ্রয়-প্রশ্রয়-পৃষ্ঠপোষকতা দেয়, তারাই কুলাঙ্গার অমানুষ। সন্তান হারানোর আহাজারি শোনেও যারা জটিল-কুটিল চাল খেলে তারা পশুর চেয়ে নিৎকৃষ্ট। দুর্নীতিবাজরা গাড়িতে উড়ায়ে কলংকিত করে পতাকা; সে যে দলেরই হোক, যে মতেরই হোক। রক্তপিপাসু চেঙ্গিস খান, হালাকু খান, হিটলার, মুসোলিনি ও ইয়াহিয়া খানের পথ ধরে কিছুদিন গদি আটকে থাকা গেলেও মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়া যায় না।

অন্যদিকে দেশপ্রেমী শহীদের দীর্ঘ মিছিলেও সম্ভাবনার ছবি আঁকা থাকে। ইতিহাসে দেখেছি- শুধুমাত্র হিংসুক ঘসেটি বেগমে লাভ হয় লর্ড ক্লাইভ ও তাঁর দলের। পা চাটা নেতা-কর্মীদের অর্থ পাচারে লাভ হয় ইতর জানোয়ারের। দেশটি সবার, সব দলের; কারো বাপের নয়, কোনো বিশেষ দলের নয়। দেশ-জাতির বৃহত্তর অর্জনে গৌরব গোটা জাতির। কোনো রক্তপিপাসু বৈশিষ্ট্যের ও হায়েনা চরিত্রের মানুষের সুখ-শান্তি-তৃপ্তিতে কারোরই গর্বের কিছু নেই। দুর্বৃত্তরা ও দুর্নীতিবাজরা মীরজাফরের মতোই দেশ-জাতির বুকে ছুরি চালায়।

নিরস্ত্রকে গুলিকারীর কাছে গুলি ও প্রাণের দাম সমান। স্মার্ট নতুন প্রজন্মের কাছে দুর্বল স্ক্রিট, মেকি অভিনয়, গোয়েবলসীয়  মিথ্যা, হিটলার-মুসোলিনী নীতি সবই ধরা খায়। মুখে সংলাপ আর হাতে বুলেট-রাইফেলের যেকোনো ন্যাক্কারজনক ঘটনায় মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতাও ছাড়িয়ে যায়।

আমরা শহীদ নূর হোসেনের কথা শোনেছি, আর এবারে দেখেছি জাতীয় বীর শহীদ আবু সাঈদসহ পাহাড়সম দৃঢ়তা দেখানো আকাশসম সাহসী তরুণ-তরুণীদেরকে।গুলিতে বুক ঝাঁঝরা হলেও যারা  মাথাকে উঁচুতে রেখে দেখিয়ে দিয়েছে, এরা বীরের জাতি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে জানে।

মেধাহীনদের অধীনে মেধাবীরা থাকলে পেছাবে দেশ, সৎ ও যোগ্যরা সামনে থাকলে পথ হারাবে না বাংলাদেশ।অধিকার চাওয়ায় ক্ষমতাসীনদের দমন-পীড়ন, দ্বিধা-বিভক্তি, ষড়যন্ত্রের নীলনকশা- নিজ দেশের মাটি-মানুষের সাথে চরম বেঈমানী।  অর্থপাচার মুক্তিযোদ্ধের চেতনা নয়,  লাগামছাড়া লুটপাটে প্রকৃত উন্নয়ন নয়।

নিজের নিরস্ত্র ভাইয়ের বুকে গুলি চালায় নরপিশাচ তারা। ক্ষমতার মোহে অন্ধ শয়তানের প্রাণের দোসর যারা। মানবপ্রেম তাদের ফাঁকাবুলি, গণতন্ত্র তাদের খেলা। দেশ-জাতির চেয়েও দল বড় তাদের কাছে, ব্যক্তিস্বার্থেই তাদের পথচলা।

নিরাপত্তারক্ষী যেখানে ডাকাতের ভূমিকায়, সেবাদানকারীরা পাকা চোর; সেখানে কী আর সহজে আসিবে, গভীর অন্ধকার কেটে ভোর। আশার আলোতো নবীন প্রজন্ম, গড়ার জন্য যারা লড়তে জানে। সব বঞ্চনা যারা  নিয়েছে মেনে, তারা মরেছে অর্থহীন জীবনে।

গুম হওয়া কেউ প্রাণে বেঁচে ফিরে, কেউ কখনো আর ফিরে না। আয়না ঘর কিংবা জেলখানার অন্ধকার প্রকোষ্ঠ- যেখানেই থাকুক। অনেক রাজনৈতিক  কারাবন্দীরা ছোট স্যাঁতস্যাতে রুমে গাদাগাদি করে থাকায় ঘুমাতে পারে না। রিমান্ডে নিয়ে বৈদ্যুতিক শক দেয়া আরও কত নির্যাতন শেষে ফিরে অসুস্থ হয়ে।

প্রাণোচ্ছল-গতিশীল তারুণ্যের আনন্দময় জীবনকে বিষাদপূর্ণ করার আয়োজন কখনোই মানবসেবা-জনসেবা করতে আসা রাজনীতিবিদদের কাজ নয়। ক্ষমতার জোরে বা নানা সুবিধা দিয়ে অন্যকে নগ্ন করে ভোগকারীরা, একাত্তুরে ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জত হরণকারীদের উত্তরসূরি।

দেশের শিক্ষাব্যবস্থা স্বাস্থ্যব্যবস্থা অনুন্নত রেখে স্বজনদের জন্য বিদেশ নির্ভরতা এ জাতির জন্য অপমানজনক। অস্তিত্বের লড়াইয়ে অন্যদের জীবন সংগ্রাম সীমাবদ্ধ করে মুষ্টিমেয়দের বিলাসিতা বৈষম্যের বহিঃপ্রকাশ!অন্যদেরকে অনিরাপদ ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রেখে নিজের আখের গোছানো চরম স্বার্থপরতা।

হিটলার-মুসোলিনির পথ-  প্রাণচাঞ্চল্য থামিয়ে বিরক্তিতে ভরিয়ে দেয়ার পথ, সুন্দর জীবন গড়ার স্বপ্ন ও উন্নত ক্যারিয়ারের আশা ধুলিস্যাতের পথ। সাফল্যের স্বর্নালী সিঁড়িতে আরোহণে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা শেষ করে দেয়ার পথ। প্রতিষ্ঠালাভ ও উন্নতির পথে মানুষের সেবায় জীবনের গতিপথ বদলে দেয়ার পথ।

 একবার যে রক্তে পিপাসা মিটিয়েছে, পানিতে তার পিপাসা আর কখনোই মিটে না। হাজারো ছলছল চোখ, লাখো দুঃখী চেহারায়ও তার পৈশাচিক উন্মাদনা থামে না।একবার লাশের দৃশ্য যাকে আনন্দ দিয়েছে, মৃত্যুপুরীর বিভিষিকা ও নৃশংসতায়ও সে টলে না। ভয়ঙ্কর লোমহর্ষী হৃদয়বিদারক ঘটনার নির্মমতা ও বিভৎস-ভয়াবহ অবস্থায়ও সে সরে না।

কত কারাবন্দী মুক্তির জন্য অপেক্ষা করে! কত শিশু এতিম হয়! কত তরুণ-তরুণীকে বেছে নিতে হয় নিরানন্দ ও ভয়-আতঙ্কের জীবন! কত বেদম পিটুনি! অশ্লীল গালিগালাজ! আটক, রিমান্ড, চোখ বাধা, হাতকড়া পরানো! আহ নির্যাতন! মেরে রক্তাক্ত করা! স্বজনদের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, অজানা আশঙ্কায় ভীত-সন্ত্রস্ত হওয়া! এসবের মধ্যেও সাহসী বিপ্লবীদের থাকে না হতাশা, সংগ্রামীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয় না, তারা দেখায় স্বপ্ন ও জাগায় আশার আলো।

যখন কুরআন তেলাওয়াত করে আল্লার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে মায়েরা। নামাজের পর জায়নামাজে বসে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে বাবারা। নফল রোজা রেখে মুক্তির অপেক্ষায় কাঁদতে থাকে ভয়ে জড়সর ও কাঁচুমাচু স্বজনরা।

তখনও যারা করুণ অবস্থা দেখে, ব্যথায় চিৎকার শুনে খিলখিলিয়ে হাসতে থাকে। আঘাতের পর আঘাত আর গালির পর গালি দিয়ে অসভ্যতা চালাতে থাকে। তীব্র ব্যথায় করা চিৎকার, আর্তনাদ-আহাজারি শুনে তৃপ্তির ঢেকুর গিলতে থাকে। নিপীড়করাইতো শয়তান! জালিমরাইতো স্বৈরাচার! বিপর্যয়কারীরাইতো পিশাচ!

কত ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটলো! কতজনের সাজানো-গুছানো সবকিছু তছনছ হয়ে গেল! কত মানুষকে নির্মমভাবে শহীদ করা হলো! কাজের সুযোগ কিংবা প্রকৃত স্বাধীন জীবনে ফিরার আশায় তবু পথচলা। সবার আগে যারা নিজেকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে প্রকৃত মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন করে গড়েছে, নতুন করে দেশগড়ার দায়িত্ব পালনে তাদের ভূমিকার গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

Scroll to Top