তিন কারণে আজকাল প্যারেন্টিং কঠিন হয়ে পড়েছে

5
তিন কারণে আজকাল প্যারেন্টিং কঠিন হয়ে পড়েছে

তিন কারণে আজকাল প্যারেন্টিং কঠিন হয়ে পড়েছে
শরৎ এসে গেছে, আর আমার শহরে পাতাগুলো অসাধারণ সুন্দর দেখাচ্ছে।
এটা উদযাপনের জন্য, আমি ও আমার স্ত্রী কিছুদিন আগে কাছের একটি পার্কে হাঁটতে গিয়েছিলাম।
আমরা যখন পড়ে থাকা পাতার ওপর দিয়ে হাঁটছিলাম, তখন একটি ছেলে আমাদের পাশ দিয়ে চিৎকার করতে করতে দৌড়ে চলে গেল…
তার পেছনে, একজন মা হতাশার সাথে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছিলেন।
তিনি চিৎকার করে বললেন, “তুমি থামো আর শোনো, নইলে আমরা সরাসরি বাড়ি চলে যাব।”
তার কণ্ঠে হতাশা আর বিব্রতবোধের ভার স্পষ্ট ছিল।
এই দৃশ্য দেখে আমি আমার শৈশবের দিনগুলোর কথা মনে না করে পারলাম না।
সেই দিনগুলো, যখন আমি কথা না শুনলে, আমার বাবা তার বেল্টটা বের করতেন… (আপনি নিশ্চয়ই পরবর্তী ঘটনা কল্পনা করতে পারছেন)।
এইভাবে তাকেও তার বাবা-মা (আমার দাদা-দাদী) বড় করেছেন।
অথরিটারিয়ান (স্বৈরাচারী) প্যারেন্টিং তখনকার দিনে খুব সাধারণ ছিল…
আমাদের মধ্যে বেশিরভাগই এইভাবে বড় হয়েছি, এবং আমিও এর ব্যতিক্রম ছিলাম না।
আর সেই সময়, এই ধরনের প্যারেন্টিং যৌক্তিক ছিল কারণ সমাজ তখন অনুগত এবং বাধ্যগত কর্মী ও সৈনিক চেয়েছিল।
সুতরাং, বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের ওই ভূমিকা পালনের জন্য বড় করতেন (এবং বাঁচার জন্যও… আক্ষরিকভাবে)।
কিন্তু সময় বদলেছে।
এখন এই ধরনের প্যারেন্টিং আর কার্যকর নয়।
ভয় অবশ্যই একটি শক্তিশালী প্রেরণা, কিন্তু এটি ভালো শিক্ষক নয়।
হুমকি, চিৎকার, টাইম আউট, শারীরিক শাস্তি ইত্যাদি – এই কৌশলগুলো ভয়ের উপর ভিত্তি করে তৈরি। এগুলো একটি শিশুর কাছ থেকে অন্ধ আনুগত্য দাবি করে।
এগুলো শিশু এবং বাবা-মা উভয়ের জন্যই ভুল।
এগুলো “খারাপ” আচরণ নির্মূল করার দিকে মনোযোগ দেয় এবং বাধ্যতা কার্যকর করে, কিন্তু বাবা-মায়ের সাথে শিশুর সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলে।
টাইম আউটের কথা চিন্তা করুন, যদিও এটাকে অনেকে শিশুকে সংশোধনের জন্য উৎসাহিত করেন…
কিন্তু আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, এটা আপনার সন্তানকে দূরে সরিয়ে দেয়। ঠিক যখন তার আপনাকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন?
এটা ঠিক মনে হয় না।
দ্বিতীয়ত, যেসব প্যারেন্টিং পদ্ধতি ২৫ বা ৩০ বছর আগে কাজ করতো, এখন আর সেগুলো কার্যকর নয় কারণ এখনকার শিশুরা আলাদা।
তাদের অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান অনেক বেশি।
তাদের দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের থেকে আলাদা। তারা আমাদের মতো প্রাপ্তবয়স্কদের ভয় পায় না। আমাদের বাবা-মায়ের কথা অগ্রাহ্য করার পরিণতি কী হতে পারে তা জানতে আমরা কখনো সাহস করতাম না।
কিন্তু সময় বদলেছে। শিশুরাও বদলেছে।
এই কারণেই, যখন আপনি আপনার সন্তানের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য চিৎকার, হুমকি, বা নির্দেশনা দেন, এটি প্রায়ই উল্টো প্রতিক্রিয়া দেয়।
আপনার সন্তান আরও বেশি প্রতিরোধ করে।
তাদের রাগ আরও তীব্র হয়।
আর তাদের কান্না আরও জোরালো হয়।
এখন, আপনারও হয়তো ছোটবেলায় চিৎকার, মারধর, হুমকি, শাস্তি, বা অন্যভাবে মৌখিক বা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।
আর যখন আপনার নিজের সন্তান হয়েছে, আপনি নিজেকে বলেছিলেন যে আপনি আপনার বাবা-মায়ের মতো হবেন না – আপনি আরও ভালো করবেন।
কিন্তু তারপর, যখন আপনার সন্তান ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলো, আপনি বুঝতে পারলেন বিষয়গুলো এত সহজ নয়…
যখন তারা আপনার কথা শোনা ও মানা বন্ধ করে দিল…
যখন আপনি নিজে আপনার বাবা মায়ের পুনরাবৃত্তি করতে বাধ্য হলেন এবং তবুও তারা সহযোগিতা করলো না…
যখন তারা আপনার সীমা এবং ধৈর্য পরীক্ষা করতে শুরু করলো…
একসময় এমন এক মুহূর্ত আসে যখন আপনি এটি আর সহ্য করতে পারছিলেন না…
যখন কিছুই কাজ করছিল না, আপনি অসহায় অনুভব করছিলেন, আর কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছিলেন না…
তখন আপনি মেজাজ হারিয়ে ফেললেন।
আর তারপর সাথে সাথেই অনুশোচনা হলো; কারণ এটি খারাপ লাগছিল।
তাই আপনি পরামর্শ খুঁজলেন। বই পড়লেন। পডকাস্ট শুনলেন। প্যারেন্টিং কোর্সে ভর্তি হলেন।
আর অনেক সুন্দর সুন্দর প্যারেন্টিং পদ্ধতি আছে, যা নিজের ব্যাপারে বোঝার, আপনার ট্রিগারগুলো জানার, এবং আপনার শৈশবে কী ঘটেছে, সে ব্যাপারে সচেতন থাকার কথা বলে।
এগুলো গুরুত্বপূর্ণ, কোনো সন্দেহ নেই।
কিন্তু যখন আপনার সন্তান এড়িয়ে যাচ্ছে, আপনাকে অবজ্ঞা করছে, তখন এসব পদ্ধতি খুব একটা কাজে আসে না।
অথবা যখন আপনি চেষ্টা করছেন তাদের গোসল থেকে বের করতে, আর তারা আপনার মুখে পানি ছিটাচ্ছে।
অথবা যখন তারা আপনাকে চুপ থাকতে বলছে।
অথবা যখন তারা ভাইবোনের সাথে ঝগড়া করছে বা খুব আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে।
এই প্যারেন্টিং পদ্ধতিগুলো আচরণগত সমস্যার মুহূর্তে খুব একটা সাহায্য করে না।
তাই আপনি নিজেকে একধরনের সমস্যায় ফেললেন…
একদিকে আপনি আপনার সন্তানদের সাথে একটি ভালবাসাপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চান…
আর অন্যদিকে, আপনি জানেন না কী করবেন যখন তারা অবাধ্য হয়, তাই আপনি চিৎকার করেন বা খালি হুমকি দেন।
আপনার ভালবাসাপূর্ণ সম্পর্কের ইচ্ছা ম্লান হয়ে যায়, যখন আপনি মেজাজ হারিয়ে ফেলেন, চিৎকার করেন, শাস্তি দেন, বা শাস্তির হুমকি দেন।
তাহলে, এটি কি সম্ভব যে, আপনি সন্তানদেরকে সীমার মধ্যে রাখতে পারেন এবং একই সাথে আপনার সন্তানের সাথে দুর্দান্ত সম্পর্ক বজায় রাখতে পারেন – তা যতই অবাধ্য হোক না কেন?…
নাকি ব্যাপারটি এমন যে, যেকোনো একটিই থাকতে পারে, আর অন্যটি নয়?
এই প্রশ্নগুলোই আমরা আগামী পর্বে আলোচনা করবো।

দ্বিতীয় পর্ব : ভালো সম্পর্ক বজায় রেখে বাচ্চাকে নিয়ম মানানো সম্ভব কি?