৯টি বিষয় শিশুরা খেয়াল করে, কিন্তু বড়রা বুঝতে পারেন না

৯টি বিষয় শিশুরা খেয়াল করে, কিন্তু বড়রা বুঝতে পারেন না

শিশুরা আশেপাশের পরিবেশ ও মানুষের আচরণ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে। অনেক সময় তারা এমন বিষয়ও খেয়াল করে, যা বড়রা সচেতনভাবে বুঝতে পারেন না। শিশুর শৈশবের অভিজ্ঞতা তাদের ব্যক্তিত্ব ও ভবিষ্যৎ আচরণ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এখানে এমন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো, যা শিশুদের চোখে ধরা পড়ে কিন্তু বড়রা খেয়াল করেন না।

১. আপনার আবেগ ও সম্পর্কের ধরন

শিশুরা শুধু আপনার কথাবার্তাই নয়, আপনার মুখভঙ্গি ও দেহভাষাও বোঝে। আপনি যদি কারও সাথে বিরক্তি প্রকাশ করেন বা কারও প্রতি আন্তরিক হন, শিশুরা তা অনুভব করতে পারে। বিশেষ করে, আপনার পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক কেমন, সেটি তারা খুব ভালোভাবে বোঝে এবং তা তাদের মানসিক বিকাশে প্রভাব ফেলে।

২. নিজের শরীর সম্পর্কে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি

শিশুরা খুব দ্রুত শিখে নেয়, কীভাবে নিজের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে হয়। যদি আপনি নিজের শারীরিক গঠন নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন বা নিজের ওজন, ত্বকের রঙ বা চেহারা নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেন, তবে শিশুরাও নিজেদের নিয়ে একই ধরনের অনুভূতি তৈরি করতে পারে। তারা আত্মবিশ্বাস হারাতে পারে এবং তাদের শরীর সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে।

৩. আপনার নৈতিক মূল্যবোধ

আপনার কথাবার্তা ও কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য আছে কি না, তা শিশুরা সহজেই বুঝতে পারে। যদি আপনি সততা ও নৈতিকতার শিক্ষা দেন, কিন্তু বাস্তবে সে অনুযায়ী কাজ না করেন, তবে শিশুরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি বলেন যে মিথ্যা বলা খারাপ, কিন্তু কোনো পরিস্থিতিতে মিথ্যা বলে সুবিধা নেন, শিশুরাও এটি শিখে ফেলবে।

৪. আপনার প্রতিক্রিয়া ও আত্মসমালোচনা

আপনি কীভাবে নিজের ভুল স্বীকার করেন এবং কিভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতি সামলান, তা শিশুরা পর্যবেক্ষণ করে। আপনি যদি ছোট ছোট ভুলকে বড় করে দেখেন, নিজেকে দোষারোপ করেন, বা নেতিবাচকভাবে প্রতিক্রিয়া জানান, তবে শিশুরাও একই রকম আচরণ করতে শিখবে। তাদের মনে হতে পারে, ভুল করা মানেই ব্যর্থতা, যা তাদের আত্মবিশ্বাসে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

৫. খাবারের প্রতি আপনার মনোভাব

আপনার খাদ্যাভ্যাস শিশুর খাদ্যাভ্যাস গঠনে বড় ভূমিকা রাখে। আপনি যদি সবজি না খান বা জাঙ্ক ফুড বেশি খান, তবে শিশুরাও তা অনুসরণ করবে। খাবার সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করতে চাইলে, আপনাকে অবশ্যই ভালো অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং শিশুকে স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে।

৬. অন্যদের প্রতি আচরণ

আপনি আপনার পার্টনার, কেয়ার-গিভার বা অন্যদের সাথে কেমন ব্যবহার করেন—কাউকে সম্মান দেন কি না, দয়ালু আচরণ করেন কি না—শিশুরা তা খেয়াল রাখে এবং তা থেকে শিখতে থাকে। আপনার ব্যবহারই তাদের মানসিকতা গঠনে বড় ভূমিকা রাখে।

৭. ছোটখাটো পরিবর্তন

শিশুরা ঘরের সাজসজ্জা, পোশাকের ধরন বা দৈনন্দিন রুটিনে সামান্য পরিবর্তনও সহজেই ধরে ফেলে। যদি আপনি চশমা পরিবর্তন করেন বা কোনো নতুন জিনিস ঘরে রাখেন, তারা দ্রুত তা খেয়াল করবে।

৮. অন্য শিশুদের প্রতি আচরণ

শিশুরা খেয়াল করে যে, তাদের ভাই-বোন বা বন্ধুদের প্রতি কেমন আচরণ করা হচ্ছে। যদি কোনো শিশুকে বেশি প্রশংসা করা হয় বা অন্যদের তুলনায় আলাদা সুবিধা দেওয়া হয়, তারা তা দ্রুত বুঝতে পারে এবং অনুভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে।

৯. শোনার ধরন

আপনি যখন তাদের কথা শোনেন, তখন আপনি সত্যিই মনোযোগ দিচ্ছেন কি না, তারা তা বুঝতে পারে। যদি আপনি মোবাইল স্ক্রলে ব্যস্ত থাকেন বা একাধিক কাজে মনোযোগ দেন, তাহলে তারা অনুভব করে যে তাদের কথা ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

উপসংহার

 

শিশুরা যা দেখে ও শোনে, তা সরাসরি তাদের আচরণ ও মানসিক বিকাশে প্রভাব ফেলে। তাই বড়দের উচিত নিজেদের আচরণ সম্পর্কে সচেতন থাকা, কারণ শিশুরা সবসময় পর্যবেক্ষণ করছে এবং তাদের ভবিষ্যৎ সেই অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হচ্ছে। নিজেরা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ গড়ে তুললে, শিশুরাও তা গ্রহণ করবে এবং আত্মবিশ্বাসী ও সুখী মানুষ হয়ে উঠবে।

Leave a Comment

Scroll to Top