নজরদারিতে বিদ্রোহী প্রার্থীরা

16

আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো বিদ্রোহী প্রার্থীদের নজরদারিতে রেখেছে। দলীয় মনোনয়নের বাইরে যারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছেন, তারা আছেন এ নজরদারিতে। আগে পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকারদলীয় প্রার্থীরা পরাজিত হন। তাই নতুন করে লজ্জায় পড়তে চাচ্ছেন না ক্ষমতাসীনরা। জাতীয় পার্টি ও বিএনপি জয়ের আশায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

 

আগামী ২৮ এপ্রিল নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা করা হয়েছে। তার আগেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রচারাভিযানে নেমে পড়েছে।

 

রাজধানী ঢাকার নির্বাচন বেশি আলোচিত হচ্ছে। ২০০৯ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে উত্তর ও দক্ষিণ দুই ভাগে ভাগ করে সরকার। এবারই প্রথম বিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনে নির্বাচন হচ্ছে। তাই সবার দৃষ্টি এখন এ নির্বাচনের দিকে।

 

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থীরা। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে আওয়ামী লীগ। সেখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন না। কিন্তু দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পরাজিত হন। সে ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে।

 

রাজধানী ঢাকায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির চার বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রচারণা নজর কেড়েছে নগরবাসীর। চার প্রার্থী হচ্ছেন, আওয়ামী লীগের হাজি মোহাম্মদ সেলিম ও সারাহ বেগম কবরী, জাতীয় পার্টির ববি হাজ্জাজ এবং বিএনপির নাসির উদ্দিন পিন্টু।

 

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিশেষ দূত ববি হাজ্জাজ মেয়র পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছেন এরশাদ।

 

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের বিষফোড়া হিসেবে দেখা হচ্ছে হাজি সেলিমকে। গত ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে দল তাকে মনোনয়ন না দিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হন।

 

জনপ্রিয়তায় হাজি সেলিমের চেয়ে সাঈদ খোকন কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও তিনি (সাঈদ খোকন) দলীয় মনোনয়ন পেয়ে যান। কয়েক দিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাজি সেলিম ও সাঈদ খোকনকে গণভবনে ডেকেছিলেন। তিনি হাজি সেলিমকে নির্বাচন না করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তিনি দলীয় প্রধানের নির্দেশ মানবেন কি না, তা এখনো খোলাসা করে কিছুই বলেননি।

 

উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছেন ব্যবসায়ী নেতা আনিসুল হক। অন্যদিকে, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সংসদ সদস্য অভিনেত্রী কবরীও মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। মনোনয়নপত্র তোলার পর তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, ‘আমি তো বাইরে থেকে আসিনি। আওয়ামী লীগেই অাছি। তাই আশা করছি মনোনয়ন আমিই পাব।’

 

এদিকে, গত দুই দিন ধরে ববি হাজ্জাজের মতো হাজি সেলিমও নীরব রয়েছেন। তিনি এখন কোথায় আছেন, কী করছেন তার কোনো সন্ধান দিতে পারছেন না তার পরিবার ও দলীয় নেতা-কর্মীরা।

 

সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ক্ষমতায় টিকে থাকার টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখছে। যে কারণে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থীকেই মাঠে দেখতে চায় না। এ ব্যাপারে কোনো ছাড়ও দেবে না বিদ্রোহী প্রার্থীদের। দল থেকে বহিষ্কার করার প্রস্তুতি রয়েছে আওয়ামী লীগের।

 

উত্তরে বিএনপি আবদুল আউয়াল মিন্টুকে মনোনয়ন দিলেও হেলেনা জাহাঙ্গীর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ব্যবসায়ী এই নারী বিএনপির সমর্থক হলেও দলের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন। আগামী ২৬ মার্চ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে তার।

 

দক্ষিণে আবদুস সালামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারেন নাসির উদ্দিন পিন্টু। বিএনপি এখনো বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন না। তবে নির্বাচনে গেলে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মাঠ থেকে তুলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে দলটি।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, প্রধান দলগুলো তাদের ক্ষমতা, জনসমর্থন ধরে রাখতে এবার বিন্দুমাত্র ছাড় দেবে না বিদ্রোহীদের। যে কারণে অনেক বিদ্রোহীকে দলীয় কঠোর মনোভাবের কারণে আড়ালে চলে যেতে হচ্ছে।রাইজিংবিডি