ক্যাপ্টেন (অবঃ) মারুফ রাজুঃ
ভদ্রলোকের নাম আবদুস সালাম। ইনি অতি সম্প্রতি ঢাকা সিটি করপোরেশন দক্ষিনে মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। ঢাকার গুলশানে অবস্থানরত অবরুদ্ধ দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাত করে তারঁ দোয়া নেবার প্রয়োজন বোধ করেননি তিনি; কিন্তু ঢাকা বিমানবন্দর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে উড়াল দিতে কোনই সমস্যাই হয়নি তার। সমস্যা হবার কথাও নয়, শেখ হাসিনার গুডবুক থাকলে বোধহয় এরকমই হয়ে থাকে। ঢাকা থেকে নিউইয়র্ক,মাঝে লন্ডনে সাময়িক যাত্রা বিরতি। এসময় সালাম দলের ২য় সর্বোচ্চ নেতা তারেক রহমানের সাথে দেখা করে তাঁর দোয়া নিয়েছেন এমন কোন তথ্যও পাওয়া যায়নি। কারন তার আসল পীর রয়েছে নিউইয়র্কে।
বিএনপি করবেন অথচ হাইকমান্ডের ধার ধারবেন না, তা কি করে সম্ভব? তবে সালাম সাহেব বোধহয় ভূলে গেছেন, তার পীরের এখন নিজেরই পায়ের নীচের মাটি আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে, এই অবস্থায় তার মেয়র প্রার্থীতা মনোনয়ন করাবেন কিভাবে? অথচ এই মেয়র প্রার্থী একজন পেশাদার রাজনীতিবিদ। তার রাজনৈতিক জীবন শুরু ভাষানীর ন্যাপ দিয়ে। এরশাদের জমানায় এই সালাম ঢাকার ডেপুটি মেয়র হন। জানা যায় একসময় আওয়ামী লীগেও ছিলেন।
খোকা পীরের হাতধরে বিএনপিতে যোগ দিয়ে কোন এক যাদুবলে রাতারাতি বনে যান ঢাকা মহানগরী বিএনপির সেক্রেটারী।ছিলেন প্রায় দশ বছর। এখন কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক। মহানগরীর সেক্রেটারী থাকাকালে পীরের সাথে মিলে ধংস করে গেছেন মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো। দুর্জনেরা বলেন বর্তমান হাসিনার তৈরি ফাঁদের ‘আসল বিএনপি’ নামে জনৈক অখ্যাত কামরুল হাসান নাসিমের সাথে গোপন ষড়যন্ত্রকারী হলো এই ব্যাক্তি। হাসিনার পুরো ৭ বছর রাজত্বে এই সকল ব্যক্তিরা কম বেশী সুখেই ছিলেন। ২০০৭ সালে বিএনপির চরম দুরাবস্থারকালে যাদের কেনো সমস্যা হয়নি তারা সবাই ছিলেন পীরের ছত্রচ্ছায়ায়। তবে বিএনপির কেন্ত্রীয় অফিস এবং মহানগর অফিসকে বেশ কয়েকবছর তালাবদ্ধ করে রাখার কৃতিত্ব রয়েছে এই সকল পীর ও তার মুরিদদের।
হাসিনার রাজত্বে বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতারা বিদেশ যেতে না পারলেও অদৃশ্য ইঙ্গিতে পীরের মুরিদগন উত্তরপারার ইঙ্গিতে বার বার পার হয়ে যান ইমিগ্রেশন। এমনকি আরও অনেকেই অবলীলায় ইউকে-ইউএসএ যাতায়াত করেন অদৃশ্য যোগাযোগের উপর ভিত্তি করে। অনেকেই বিদেশের বাড়ির ভাড়া তুলে আরাম আয়েশ করে, সম্বর্ধনা নিয়ে আবার দেশে ফিরে আসেন। দেশনেত্রী বিভিন্ন কর্মসূচি দিলেও সালামদের কখনও পাওয়া যায় না।
২৯ ডিসেম্বর, ২০১৩ এর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসির’ সময় এই পীর ও তাদের মুরিদগণ কোথায় ছিলেন, কি করেছেন, তা কেউ জানে না। তিলে তিলে মহানগরীর দলটাকে ধংস করে হাসিনাকে ক্ষমতায় দ্বিতীয় দফা কনফার্ম করে পীর -মুরিদের পর্ব শেষ হয়। হাসিনাও ইতিমধ্যেই তার ইনাম বুঝিয়ে দিয়েছে নিশ্চয়ই। বর্তমানে তিনমাস ধরে চলা আন্দোলনের তার কোনও খবর নাই। নিন্দুকেরা বলেন মুরিদও তখন আমেরিকায় অবস্থান করছিলেন। প্রতি তিন/চার মাস পর পর সকল পীর ও মুরিদগণই কম বেশী আমেরিকা যান। অবৈধ সরকার বিরোধী আন্দোলন শুরু হওয়ার পরপরই ইনারা গাঁ ঢাকা দিয়ে হংকং ব্যাংকক, ইউরোপ আর আমেরিকা পাড়ি জমান।
নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে সালাম সাহেবের চার্চ ম্যাগডোনালসে তার বড় বাড়ি আছে। সেটা ভাড়া দিয়ে অনেক পয়সা পান। তার ছেলে-বৌ ওখানে থাকে। এবার আবার এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। যথরীতি তার মোটেও অসুবিধা হয়নি বিমানবন্দর থেকে ফ্লাই করতে। এখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন রাজ্যে বিএনপির স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিয়ে বেড়াচ্ছেন তার পীর ক্যান্সার (???) আক্রান্ত জনাব সাদেক হোসেন খোকার সাথে।
ব্যাক্তি আব্দুস সালাম এই লেখার লক্ষ্য নয়। লক্ষ্য রাজনীতিবিদ সালাম। প্রচলিত রাজনৈতিক শিষ্টাচারের বাইরে খেলতে গিয়ে সালাম সাহেবেরা যেভাবে পুরো মহানগরের রাজনীতিকে যেভাবে দূষিত করে দিয়েছে তাতে আজকে শতাধিক তাজাপ্রান ঝরে গেছে। সেই প্রান হরণকারীদের সহায়ক শক্তি সালাম এখন ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিন থেকে ইলেকশন করতে চান। সে কিশোরগঞ্জের মানুষ। কমিশনার মিস্টার এবং আব্দুস সালাম কিশোরগঞ্জ থেকে ইলেকশন করতে চেয়েছিলেন। এরপরই মিস্টার নিহত হয়। কিন্তু কখনই মামলায় সালাম সাহেবের নাম আসেনি।
দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ধরে দল ও দেশের মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে, চালাকি করে হয়ত সাময়িক পার পেয়ে গেছে এইসব মুরিদেরা । কোন অদৃশ্য বলে এদের মতো লোকেরা এখনও বিএনপির কেন্দ্রীয় বিভিন্ন নেতৃত্বে বহাল রয়েছেন তা কেউ জানে না। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমুলক ব্যবস্থা আজো দল নিতে পারেনি বা নেয়নি। এটাও হতে পারে প্রকৃতির নিয়মে অন্য কোন বালা অপেক্ষা করছে এই সকল পীর মুরিদদের জন্য যাদের কারনেই ঝরে গেছে অনেক প্রান। এখন সেটাই দেখার অপেক্ষায় জাতীয়তাবাদী শক্তি।