সিটি নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে বিএনপি। এই শঙ্কার কথা জানাতে আজ নির্বাচন কমিশনে যাবে একটি প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধিদলটি নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে বেশ কিছু দাবিদাওয়া তুলে ধরবে বলে জানা গেছে।
এ দিকে মামলার কারণে হেভিওয়েট মেয়র প্রার্থীদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হলে কিংবা প্রচারে সমান সুযোগ না পেলে সিটি নির্বাচন থেকে বেরিয়েও আসতে পারে দলটি। আগামী ৯ এপ্রিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্ধারিত দিনের পর যেকোনো সময় দলটি এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকদের আশঙ্কা- মামলার জালে ফেলে ঢাকায় বিএনপির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে নির্বাচন কমিশন। সরকারের হস্তেেপই এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হতে পারে। জানা গেছে, আজকালের মধ্যে বিএনপির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা উচ্চ আদালতে দারস্থ হতে পারেন। সেখানে আদালত জামিন দেয় কি না সে বিষয়টির ওপরও দৃষ্টি বিএনপির সর্বোচ্চ মহলের।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব:) মাহবুবুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। আর এটা যদি নির্বাচন কমিশন না করে তা হলে বিএনপি যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। বল এখন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কোর্টে। কারণ গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এখন প্রয়োজন নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ।’
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টিভঙ্গি গভীরভাবে পর্যবেণ করছেন খালেদা জিয়া। বিভিন্ন পেশাজীবীর সাথে আলাপকালে তিনি বলেছেন, স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে মতাসীন দল যদি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি না করে, কিংবা বিরোধী প্রার্থীদের অযোগ্য ঘোষণা করে তা হলে সেই নির্বাচনে যাওয়ার কোনো অর্থ নেই। এ বিষয়গুলো তিনি গভীরভাবে পর্যবেণ করছেন। যদি সরকার বিমাতাসুলভ আচরণ করে তবে নির্বাচন থেকে বেরিয়ে আসার ইঙ্গিত দেন বিএনপি প্রধান।
খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করে পেশাজীবী এক নেতা নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘আর কয়েক দিন গেলেই সরকারের আসল উদ্দেশ্য বোঝা যাবে। ততণ পর্যন্ত খালেদা জিয়া অপোয় থাকবেন। সরকারের অসৎ উদ্দেশ্য থাকলে বিএনপি জোট নির্বাচন থেকে বেরিয়েও আসতে পারে। তবে ম্যাডাম ধাপে ধাপে সরকারের মনোভাব পর্যবেণ করবেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে এর দায়ভার নির্বাচন কমিশনের। ভবিষ্যতে এর মূল্য দিতে হবে। সমান সুযোগ না পেলে বিএনপি নির্বাচন বয়কট করবে কি না- তা সময়ই বলে দেবে। ’
জানা গেছে, মেয়র পদে ঢাকা উত্তরে আবদুল আউয়াল মিন্টু ও দেিণ প্রাথমিকভাবে মির্জা আব্বাসই বিএনপির প্রথম পছন্দ। তবে এ দু’জনের বিকল্প প্রার্থীও রয়েছেন। কোনো কারণে বিকল্প প্রার্থীরাও প্রচারণায় বাধার মুখোমুখি হলে নির্বাচন থেকে বেরিয়ে আসবে বিএনপি। মনোনয়নপত্র বাছাইপ্রক্রিয়া শেষ হলেই চূড়ান্তদের থেকে একক প্রার্থী নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে খুবই ইতিবাচক। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা অংশ নেবে। তবে একই সাথে তিনি এও বলেছেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।’
জানা গেছে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দাবি নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল আজ বুধবার ইসিতে যাচ্ছেন। ইসিতে লিখিতভাবে খালেদা জিয়ার কার্যালয় ও নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, নেতাকর্মীদের জামিন দেয়া, প্রচার-প্রচারণায় বাধা না দেয়াসহ বেশ কিছ দাবি তুলে ধরা হবে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির এক মেয়র প্রার্থী নয়া দিগন্তকে বলেন, সমান প্রচারণার সুযোগ পেলে এক সপ্তাহের মধ্যেই ভিন্ন পরিবেশ তৈরি করতে সম বিএনপির প্রার্থীরা। তবে প্রশাসন তা দেবে কি না সেটাই দেখার বিষয়। দু-এক দিনের মধ্যে প্রচারণায় নামার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।