চাঞ্চল্যকরভাবে বাংলাদেশের ক্রিকেট গড়াপেটা ফাঁস করে প্রাণ হারানোর আশঙ্কায় ভুগছেন ইংল্যান্ডের প্রাক্তন কাউন্টি ক্রিকেটার ও কোচ ইয়ান পন্ট। ফিক্সিং কেলেঙ্কারি ফাঁসের কাজটা তিনি করেছেন একেবারে স্পাই থ্রিলারের মতো। ফলে বাংলাদেশে প্রিমিয়ার লিগের চাকরি গেছে। আরও কয়েকটি চাকরি থেকে তিনি বঞ্চিত হয়েছেন। আইসিসি-র প্রশংসা পেলেও বাংলাদেশের ট্রাইবুনালে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে পন্টের ভূমিকা। তাতেই বিপত্তি। এই মুহূর্তে ভারতে একটি পেস ফাউন্ডেশন চালাচ্ছেন পন্ট। ২০১৩ ফেব্রুয়ারির সেই ম্যাচে কী হয়েছিল? ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের ক্যাপ্টেন হিসেবে নামা মহম্মদ আশরাফুল ১৯ ওভার ব্যাট করে ৩৩ করেছিলেন। কয়েকজন বোলার হাস্যকরভাবে রান বিলিয়েছিলেন। নো-ওয়াইড, ফুলটস কী ছিল না! শেষ পর্যন্ত অবশ্য বাংলাদেশের ট্রাইবুনালে দোষী সাব্যস্ত শুধু ঢাকা টিমের যুগ্ম মালিক জিশান চৌধুরী। ক্রিকেটারদের ছাড় দেওয়া হয়েছে। আশরাফুল ও আর এক ক্রিকেটার নিজে দোষ স্বীকার করেছেন। সেই ক্রিকেটারের নাম এখনও গোপন রাখা হয়েছে৷ ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের কোচ ছিলেন পন্ট। যে টিমের ক্যাপ্টেন ছিলেন মাশরাফি মোর্তাজা। সে বার ছ’ ম্যাচের মধ্যে পাঁচটি জিতে লিগ তালিকায় শীর্ষে ছিল ঢাকার এই টিম। চট্টগ্রামের ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে ম্যাচের আগের সন্ধেয় জিশান হাজির হন পন্টের হোটেলের ঘরে। সঙ্গে আরও একজন। পন্টের কথায়, ‘আমাকে জিশান বলে, চট্টগ্রাম কিংসের সঙ্গে ম্যাচটা ফিক্স করতে চায়। একটা কাগজে পুরো প্ল্যানটা দেখায়। সেখানে ছিল, ম্যাচের কখন কী করতে হবে।’ জিশানের প্রস্তাব শুনে পন্টের প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘আমি বাড়ি ফিরে যেতে চাই।’ ওই ম্যাচের জন্য মাশরাফির বদলে আশরাফুলকে ক্যাপ্টেন হিসেবে চেয়েছিলেন জিশান। কারণ, মাশরাফি আগে একবার ফিক্সারদের প্রস্তাবের কথা প্রকাশ্যে এনেছিলেন। জিশান আরও দুই বোলার ও এক ব্যাটসম্যানকে টিমে ঢোকাতে চেয়েছিলেন। পন্ট পরের দিন সকালেই ঘটনাটি জানান দুর্নীতি বিরোধী সংস্থার অফিসার পিটার ও’শিয়াকে। যিনি পন্টের হোটেলেই ছিলেন। ও’শিয়া তাঁকে প্রস্তাব দেন, এই গড়াপেটার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে সাহায্য করতে। পন্ট রাজি হয়ে যান। ম্যাচের দিন সকালে দূর্নীতি বিরোধী অফিসাররা তাঁর ঘরের ডেস্কে পেনের সাইজের ভিডিও রেকর্ডার লাগিয়ে দেন। ড্রয়ারে লাগানো হয় অডিও রেকর্ডার। আরও একটি অডিও রেকর্ডার ছিল তাঁর ল্যাপটপে। পন্টের বক্তব্য, ‘আমি বিছানার উপর কাগজপত্র ছড়িয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসি। কাজে ব্যস্ত দেখাতে। তারপর জিশানকে ঘরে ডেকে পাঠাই। ওর প্ল্যানটা আরও একবার জানাতে বলি। ও সব বলে। এও জানায়, পাঁচ ক্রিকেটার ওকে সাহায্য করছে।’ পন্টের মাথায় তখন ঘুরছিল বব উলমারের মৃত্যু। বলেছেন, ‘উলমারই একমাত্র জানতেন জামাইকার হোটেলে তাঁর মৃত্যুর সময় কী হয়েছিল। এই স্টিং অপারেশনের পরিণাম ভাবতে শুরু করেছিলাম।’ গড়াপেটার জন্য পন্টকে ৬০০০ ডলারের প্রস্তাব দেওয়া হয়। পন্ট বলেন, ‘আমার বেতনের পাওনা ১০ হাজার ডলার দিলেই হবে। এই ৬০০০ ডলারের দরকার নেই।’ সে দিন মাঠে অসম্ভব ভিড় ছিল। যেখানে দর্শক ধরে ৩৫ হাজার, সেখানে ভুয়ো টিকিটে আরও লোক ঢুকে সংখ্যাটা ছিল ৪৭ হাজার। পন্টের ধারণা, ‘এত লোক থাকার জন্যই হয়তো দুর্নীতি বিরোধী অফিসাররা ম্যাচটা বন্ধ করতে পারেননি। তা হলে দাঙ্গা বেঁধে যেত।’ দু’দিন পর সব ক্রিকেটার ও পন্টের হাতে খাম পৌঁছয়। পন্ট দেখেন, সেখানে আছে ৬০০০ ডলার। পরে বাংলাদেশ ট্রাইবুনালে বারবার বলা হয়, গড়াপেটা হবে জেনেও ম্যাচটা কেন হতে দেওয়া হল। পন্ট যেহেতু ৬০০০ ডলার নিয়েছেন, তাই তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। যদিও আইসিসি সিইও ডেভ রিচার্ডসন পন্টকে লেখেন, ‘ক্রিকেট খেলায় আপনার মতো লোক থাকলে খেলাটার আরও উপকার হবে।’ পন্টকে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের চাকরি খোয়াতে হয়, দু’বার তাদের চ্যাম্পিয়ন করা সত্ত্বেও। কাউন্টিতে ভালো চাকরির সুযোগ এসেও হাতছাড়া হয়। আপাতত ভারতে পেস ফাউন্ডেশন চালাচ্ছেন। কিন্ত্ত ভবিষ্যত্ নিয়ে চিন্তিত। সূত্র : এই সময়।