সংঘাতময় ইয়েমেনের রাজধানী সানায় আটকা পড়েছে প্রায় আড়াই হাজার বাংলাদেশি। পথে পথে সহিংসতার কারণে তারা সানা থেকে বের হতে পারছেন না। আবার বাংলাদেশ সরকারের কোন প্রতিনিধির সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারছেন না। কুয়েতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর মাহবুব আলমের সঙ্গে জিবুতিতে যোগাযোগের জন্য দেওয়া নম্বরটিও (+০০৯৬৫ ৯৯৫ ৭৪ ২০৩) বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন আটকা পড়া বাংলাদেশিরা।
আজ রবিবার বাংলাদেশ সময় বেলা আড়াইটার দিকে সানা থেকে শহিদুল ইসলাম নামের এক প্রবাসী মুঠোফোনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, তিনি তিনদিন আগে কুয়েত অ্যাম্বাসেডরের দেওয়া হেল্পলাইনে যোগাযোগ করেন। তখন সেখান থেকে বলা হয়েছিল সানা থেকে সরাসরি তাদের নিয়ে যাওয়া হবে। গত দুইদিন সেই নম্বরটি বন্ধ পাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘শুনেছি অ্যাম্বাসেডর মাহবুব আলম এখন জিবুতিতে আছেন। কিন্তু তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না।’
সাড়ে তিন বছর আগে কুমিল্লার মুরাদনগর থেকে ভাগ্যের অন্বেষণে ইয়েমেনে পাড়ি জমান শহিদুল ইসলাম। কাজ করেন সেখানকার একটি হাসপাতালে। তিনি বলেন, ‘ভাগ্যের সন্ধানে এসে এখন মৃত্যুর মুখে। এখান থেকে উদ্ধার করবেন এমন কাউকে পাচ্ছি না। অ্যাম্পাসেডর কুযেতে থাকতে ওমর ফারুক নামে অ্যাম্বাসির এক কর্মকর্তার নম্বর দিয়েছিলেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেছেন, এখনো জাহাজ আসেনি। জাহাজ আসলে জানানো হবে। তবে আমাদেরকে সানা ছেড়ে আল-হুদায়দহে চলে যেতে বলেছেন। সেখানে নাকি জাহাজ আসবে।’
শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সানা থেকে অন্য জেলাগুলোর দূরত্ব ৭০০ থেকে ৮০০ কিলোমিটার। পাহাড়ি রাস্তা, যানবাহন চলছে না, সানার চারিদিকে পথে পথে বিদ্রোহীরা অবস্থান নিয়েছে। এরমধ্য দিয়ে আমরা বের হব কীভাবে? এখানে আমাদের কোন অ্যাম্বাসি নেই, সরকারি কোন লোক নেই, আমরা কার কাছে যাব?’
তিনি জানান, ইয়েমেনে মূলত বন্দরনগরী এডেন ও রাজধানী সানায় অধিকাংশ বাংলাদেশি রয়েছেন। শুধু সানাতেই আড়াই হাজার বাংলাদেশি কাগজ-পত্র জমা দিয়েছেন। এর বাইরেও বাংলাদেশি আছে। এতগুলো মানুষ এখন চরম অনিশ্চয়তা আর আতঙ্কের মধ্যে আছেন। সরকারের কোন প্রতিনিধিকে পাওয়া যাচ্ছে না যার কাছ থেকে আশ্বস্থ হবার মতো কথা শোনা যাবে। তিনি বলেন, আমরা চাই দ্রুত আমাদের এখান থেকে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক, অথবা সৌদি সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সেখানে স্থানান্তর করা হোক।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, ইয়েমেনে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল গত শুক্রবার জিবুতিতে পৌঁছেছে। তারা ইয়েমেনে উদ্ধার ও প্রত্যাবাসন বিষয়ে স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে বৈঠক এবং ইয়েমেনে বাংলাদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এডেন থেকে বাংলাদেশিদের জাহাজে করে জিবুতিতে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে সানা থেকে বাংলাদেশিদের বিমানযোগে জিবুতি অথবা ঢাকায় নিয়ে আসার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশিদের এডেন থেকে জিবুতিতে স্থানান্তরের জন্য একটি জাহাজ ভাড়া করা হয়েছে। আজ-কালের মধ্যেই স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। এ ছাড়া বিশেষ বিমান অবতরণের জন্য জিবুতি সরকারের কাছেও অনুমতি চাওয়া হয়েছে। বর্তমানে সানায় বেসামরিক বিমান উড্ডয়ন বন্ধ আছে। সে ক্ষেত্রে সানা থেকে বাংলাদেশিদের বিশেষ ব্যবস্থায় এডেন নিয়ে আসার চেষ্টা করা হতে পারে।
এদিকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম গতকাল শনিবার সকালে ওমান গেছেন। দ্বিপক্ষীয় এ সফরে ওমানের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করবেন। এ ছাড়া তিনি ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউসুফ বিন আলাওয়ি বিন আবদুল্লাহ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাঈদ হামুদ বিন ফয়সাল আল বুসাইদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এ সফরে তিনি ইয়েমেনে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের উদ্ধারে সহযোগিতার বিষয়ে ওমানে বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা করবেন।