বাংলামোটর এলাকায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলাকারীরা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ ও শাহবাগ থানা শাখার নেতা-কর্মী। হামলার সময় আগ্নেয়াস্ত্রসহ যে যুবককে দেখা গেছে, তিনিও ছাত্রলীগের নেতা, তাঁকে এর আগে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র ও মামলার এজাহার থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের এক নেতা জানান, অস্ত্রধারী ব্যক্তির নাম সালেহ আহমেদ ওরফে হৃদয়। তিনি ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের স্থগিত হওয়া কমিটির (ফুয়াদ হাসান-সাকিব হাসানের কমিটি) সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তবে ওই কমিটি স্থগিত হওয়ার আগেই সালেহ আহমেদকে বিশৃঙ্খলার দায়ে বহিষ্কার করা হয়।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় একটি সূত্র জানায়, ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করার পর থেকে সালেহ আহমেদ নিষ্ক্রিয় ছিলেন। গত বুধবারের হামলায় হঠাৎ করে তাঁকে দেখা গেছে। তাঁর গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী। ২০১৩ সালের ৩০ নভেম্বর এক ছাত্র হত্যার জের ধরে ওই কমিটি স্থগিত করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
গত বুধবার রাজধানীর বাংলামোটরে খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়িতে হামলা করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এতে খালেদা জিয়ার গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। খালেদা জিয়ার নিরাপত্তাকর্মীদের (সিএসএফ) কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর হয়। প্রত্যক্ষদর্শী ও ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র স্বীকার করেছে, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি মামুনুর রশীদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান, মাহমুদুল হাসান ওরফে টিটো, ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাকিব হাসান প্রমুখ হামলার সময় ওই এলাকায় ছিলেন এবং তাঁরাসহ আরও অনেকে সরাসরি ওই হামলায় অংশ নেন। এ সময় এক যুবককে কোমরে অস্ত্র নিয়ে হামলায় অংশ নিতে দেখা যায়। গতকাল বিভিন্ন দৈনিকে এ ছবি প্রকাশিত হয়। তবে ছাত্রলীগ নেতার প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শনের ব্যাপারে গতকাল রাত পর্যন্ত পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
জানতে চাইলে রমনা বিভাগের উপকমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, এ ঘটনা নিয়ে মামলা হয়েছে, থানা-পুলিশ তদন্ত করছে। কেউ বেআইনি কিছু করে থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বুধবারের হামলার ঘটনার পর শাহবাগ থানা ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক মো. বাবু হাসান বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলার এজাহারে অবশ্য বলা হয়, তাঁরা নির্বাচনী প্রচার চালানোর সময় খালেদা জিয়ার গাড়িবহর তাঁদের চাপা দেয়। এতে শাহবাগ থানা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির কোতওয়াল, শাহবাগ থানাধীন ২০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লিটন শেখ ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সদস্য মো. আল মিরাজ আহত হন।
ওই দিন ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এলোপাতাড়ি ভাঙচুর শুরু করলে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর দ্রুতগতিতে সামনের দিকে চলে যাওয়ার সময় গাড়ির ধাক্কায় দুজন আহত হন। তাঁরা হলেন জাকির কোতওয়াল ও লিটন শেখ।
জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, অস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগের কেউ হামলা করেছে—এমন তথ্য তাঁদের কাছে নেই। তিনি দাবি করেন, তাঁদের শান্তিপূর্ণ কালো পতাকা কর্মসূচিতে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তাকর্মী ও নেতা-কর্মীরা হামলা ও গুলি চালিয়েছে। সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য এ ধরনের সহিংসতা চালানো হচ্ছে। এসব না করে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসনকে আগে বার্ন ইউনিটে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
সূত্রঃ প্রথমআলো