স্ত্রীকে আলমারিতে রেখেছিলেন সাকলায়েন!

48

download১৯৯৯ বিশ্বকাপের কথা। সেবার দুর্দান্ত খেলছিল পাকিস্তান। গ্রুপ পর্বেই হারিয়ে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে। পরবর্তী একযুগের জন্য যেটা ছিল বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার সর্বশেষ হার। ওই বিশ্বকাপের শুরুতেই স্ত্রী কিংবা বান্ধবীদের নিয়ে হোটেলে থাকার অনুমতি ছিল পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের জন্য।

কিন্তু হঠাৎই আপত্তি তুলে বসে পাকিস্তান টিম ম্যানেজমেন্ট। সেমিফাইনালের আগে ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে টিম পাকিস্তানকে জানিয়ে দেওয়া হয়, স্ত্রীদের আর সঙ্গে রাখা যাবে না। হয় পাকিস্তানে পাঠিয়ে দিতে হবে, নয়তো অন্য হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। এমন ঘোষণায় হঠাৎই বিপদে পড়ে যান ক্রিকেটাররা।

অন্যরা যে যার মত ব্যবস্থা করে নেয়। কিন্তু বেশি বিপত্তি বাধে স্পিন জাদুকর সাকলায়েন মোস্তাকের বেলায়। তিনি কোনভাবেই স্ত্রীকে বাড়ি পাঠাতে রাজি নন। এমনকি অন্য কোন হোটেলেও নয়। নিজের কাছাকাছি রাখার জন্য অভিনব এক বুদ্ধি বের করেছিলেন তিনি।

সাকলাইন নিজেই বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রী সানাকে বললাম, তোমাকে তো দেশে ফেরত পাঠাতে আমি রাজি নই। বরং তুমি কাছে থাকলেই সবচেয়ে ভালো অনুভব করি। তুমি এখানেই থেকে যাও।’
পাকিস্তানের সর্বকালের অন্যতম সেরা এই স্পিনার স্ত্রী সানাকে নিজের কাছে রেখে দেওয়ার জন্য বুদ্ধি বের করেন, যে হোটেলে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হতো টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে, সে হোটেলের নাম আগেই জানিয়ে দিতেন স্ত্রীকে। তখন তারা (পাকিস্তান দল) ওই হোটেলে ওঠার আগে তার স্ত্রী গিয়ে আগেই উঠে যেতো। এরপর পাকিস্তান দল যখন ওই হোটেলে উঠে যেতো, তখন সুযোগ বুঝে সাকলায়েনের রুমে চলে আসতেন তার স্ত্রী।

সাকলায়েন নিজেই জানান, ‘আমাদেরকে খেলার জন্য এ শহর থেকে ওই শহরে যাওয়া লাগতো। সুতরাং, আগেই তাকে (সানা) আমি হোটেলের তালিকায় দিয়ে দিয়েছিলাম। আমরা যাওয়ার আগেই সে ওই হোটেলের অন্য একটা কক্ষ ভাড়া নিয়ে নিত।’

প্রশ্ন করা হলো, তাহলে রুমে যখন অন্য কোন সতীর্থ-কোচ কিংবা টিম ম্যানেজমেন্টের কেউ আসতেন, তখন কী করতেন? এমন প্রশ্নের জবাবে একগাল মুচকি হেসে সাকলায়েন বললেন, ‘কোচ বা ম্যানেজমেন্টের কেউ আসলে, তারা যখন দরজায় নক করতো, তখন সানাকে ঘরের আলমারিতে গিয়ে লুকাতে বলতাম। তারা চলে গেলে আবার সে বের হয়ে আসত! ’

তবে সবার চোখ ফাঁকি দিতে পারেননি সাকলায়েন। সতীর্থ আজহার মেহমুদ ও মোহাম্মদ ইউসুফ নাকি ঠিকই ধরে ফেলেছিলেন সাকলায়েনের চালাকি! সাকলায়েন নিজেই বলেন, ‘আমার রুমে একদিন আজহার মেহমুদ আর মোহাম্মদ ইউসুফ মিলে হাসাহাসি করছিলাম। এমন সময় তারা বলে, তোমার স্ত্রী যে এখানে আছে আমরা জানি। এখন বরং তাকে লুকিয়ে না থেকে আমাদের সামনেই আসতে বল।’

স্ত্রীকে নিয়ে আরও একটি মজার ঘটনা শোনান দুসরার জনক সাকলায়েন। ২০০১ সালের ঘটনা। পাকিস্তান দল তখন ক্রাইস্টচার্চে টেস্ট খেলছে। মোহাম্মদ ইউসুফের সঙ্গে জুটি বেধে ব্যাট করতে নামেন সাকলায়েন। সে ঘটনার কথা নিজেই বলেন সাকলায়েন, ‘মাঠেই ইউসুফের কাছ থেকে পরামর্শ চাইলাম। কিন্তু ইউসুফ কথাই বললো না। খুব রাগ হলো এবং স্ট্রাইকে গিয়েই সজোরে খেললাম। এক বাউন্সেই বাউন্ডারি। এমন মারমুখি ব্যাটিং দেখে ইউসুফ এবং ড্রেসিং রুম থেকে বলাবলি শুরু হলো, কী করছো তুমি, কী করছো তুমি। আমি ইউসুফকে বললাম, তুমি আমার কথা না শুনলে এমনই খেলতে থাকবো এবং দ্রুত আউট হয়ে যাব। তবুও ইউসুফ আমার কোন কথা শুনতে চাইল না। ওই অবস্থায় দিন শেষ হলো। আমার রান তখন ২০ আর ইউসুফের ৭০। হোটেলে ফিরে দেখি, রুমে একটা চিরকুট। সেখানে ইউসুফ লিখেছে, সাকি ভাই, স্যরি। আমি আসলে মাঠে তোমার সাথে মজা করেছি। তবে আগামী দিনটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটু ধরে খেলো। তাতে আমি সেঞ্চুরিটা পাবো এবং বোনাসও পাবো একই সঙ্গে।’

পরের দিনের ঘটনা বলতে গিয়ে সাকলায়েন বলেন, ‘ব্যাট করতে নামার আগে স্ত্রী সানা আমাকে বললো, যদি সত্যিই তাকে ভালোবাসি, তবে আমাকে হাফ সেঞ্চুরি করতেই হবে। সত্যিই অনেক বড় প্রেসার। আট নম্বরে নেমে কিভাবে ফিফটি করা যায়! চেষ্টা করলাম এবং দেখি ৫০ হয়ে গেছে। এরপর তো রান তোলাই বেশ কষ্ট হচ্ছিল। আমার রান তখন ৭০ হয়ে হেছে। এমন সময় বার্তা পাঠিয়ে সানা আবার দাবি করে বসলো, ভালোবাসা যদি সত্যি হয়, তাহলে আমাকে সেঞ্চুরি করতেই হবে। ব্যস, পিচ আঁকড়ে পড়ে থাকলাম। কিন্তু সময় যেন আর কাটে না। ব্যক্তিগত ৯৮ রানে গিয়ে দিন শেষ করলাম। পরদিন ব্যাটিংয়ে নেমে ৯৯ রানের মাথায় ৪০ মিনিট আটকে ছিলাম। কিন্তু বার বার মনে হচ্ছিল স্ত্রী সানার কথা। তবে এ ক্ষেত্রে নাথান অ্যাস্টলকে ধন্যবাদ দিতেই হবে। তার একটি বল লেগ সাইডে পাঠিয়েই সেঞ্চুরি পূর্ণ করলাম। স্ত্রীর ভালবাসার পূর্ণাঙ্গ মূল্য দিতে পারলাম। ২৯১ বল খেলে ৪৩০ মিনিট উইকেটে পড়ে থেকে খেলেছিলাম অপরাজিত ১০১ রানের ইনিংস।’

ওটাই ছিল ৪৯ টেস্টে ২০৮ উইকেট নেওয়া সাকলায়েনের সেরা ইনিংস! শুধু কিউই বোলার নয়, স্ত্রীর ছুড়ে দেওয়া ভালোবাসার অগ্নিপরীক্ষায় সেদিন নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন সাকলায়েন!