আপনি যদি ভারতের বাণিজ্যিক নগরী মুম্বাইয়ের অ্যান্টপ হিল বা ওয়াডালায় বসবাস করেন, তাহলে সাবধান! আপনার পরিবার বা প্রতিবেশী মহিলারা কিন্তু গোয়েন্দা পুলিশ হতে পারেন।
চলচ্চিত্র পরিচালক সুজয় ঘোষের ‘কহানি’ ছবির কথা মনে আছে? যেখানে এক আপাতনিরীহ অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ স্বামীর হত্যাকারীকে খুঁজে বদলা নিতে নিজের আসল পরিচয় গোপন করে শেষে বাজিমাত করেছিলেন। এবার সেলুলয়েডের সেই কহানি-র বাস্তব রূপায়ণ করল মুম্বাই পুলিশ।
অবাক মনে হলেও এটাই সত্যি। সম্প্রতি মুম্বাইয়ের এই দুই অঞ্চলের গৃহবধূদের ‘আন্ডারকভার কপ’ হিসেবে নিয়োগ করেছে পুলিশ। উদ্দেশ্য, এই অঞ্চলে বাড়তে থাকা নারী নির্যাতনের ঘটনায় লাগাম টানা। এক সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, গত এক বছরে অ্যান্টপ হিল এবং ওয়াডালায় ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গিয়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশের কার্যত কালঘাম ছুটছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আক্রমণকারীরা কিশোরীদের টার্গেট করছে বলে জানা গিয়েছে।
ফলে দুষ্কৃতীদের ধরতে এক অভিনব পন্থা অবলম্বন করেছে মুম্বাই পুলিশ। এই দুই এলাকার মধ্যে বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক পাঁচজন গৃহবধূকে আন্ডারকভার পুলিশ হিসেবে নিয়োগ করেছে পুলিশ। তাদের কাজ হবে অসচ্চরিত্র, প্রলোভনকারী, মাতাল, মাদক সেবনকারী, সমাজ-বিরোধী এবং অপরিচিত সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা এবং তৎক্ষণাৎ পুলিশে খবর দেওয়া। জানা গিয়েছে, গত শনিবার থেকে ওই বিশেষ টিম নিজেদের কাজ শুরুও করে দিয়েছে।
মুম্বাই পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, ওই ৫ জন মহিলাকে এই কাজের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে, তাদের নিরাপত্তার বিষয়টির ওপরও নজর দেওয়া হয়েছে বলেও জানান ওই কর্তা। যার জেরে নব-নিযুক্ত মহিলা গোয়েন্দা পুলিশের নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের পরিচয় গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মহিলাদের কেমন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে? মুম্বই পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা জানান, ৪টি সেশনে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এদিকে, ওই মহিলাদের একজন জানিয়েছেন কীভাবে সন্দেহজনক ব্যক্তিদের অনুসরণ করতে হবে, তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। মহিলা আরও জানান, তাদের বলা হয়েছে, পোড়খাওয়া গোয়েন্দাদের মতো নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেই কাজ করতে। যাতে নিজেদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়।
তিনি আরও জানান, তাদের সকলকে একটি করে পৃথক ফোন দেয়া হয়েছে, যেখানে মুম্বাই পুলিশের ডিসিপি, এসিপি এবং আরও কয়েকজন শীর্ষ পুলিশ অফিসারদের ফোন নম্বর দেয়া রয়েছে। নম্বরগুলিতে ফোন করে সরাসরি সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্তাদের সঙ্গে যেকোনও সময় যোগাযোগ করা যাবে। মুম্বাই পুলিশ এই নতুন গৃহবধূ-গোয়েন্দাদের নিয়ে আশাবাদী। তেমনই নিজেদের নতুন ‘পরিচয়’ নিয়ে উৎসাহী এই পাঁচ ‘দুঁদে’ গোয়েন্দা।