থাইল্যান্ডে বসবাসরত ১৬ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে বৈধ করার চিন্তা করছে দেশটির সরকার। সে হিসেবে সেখানে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বসবাসরত বাংলাদেশিরাও বৈধতা পেয়ে যেতে পারেন।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে প্রথমবারের মতো ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) বৈঠক শেষে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানানো হয়।
এফওসি বৈঠকে অংশ নেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ও থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব (পররাষ্ট্র সচিব) নরাচিত সিনহাসেনা। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও থাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আট প্রতিনিধিও।
পরে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলেন শহিদুল হক ও নরাসিত সিনহাসেনা।
থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের কর্মী নিয়োগের বিষয়ে সংবাদকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বলেন, নির্মাণ ও মৎস্য আহরণ খাতে আমাদের লোক প্রয়োজন। সে বিষয়ে এফওসি বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তবে, এখন থাইল্যান্ডে থাকা ১৬ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে বৈধ করার বিষয়ে ভাবছে সরকার। ওই ১৬ লাখ অভিবাসীর মধ্যে বাংলাদেশিরাও রয়েছেন। তাদের বৈধ করার প্রক্রিয়া শেষেই লোক নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইকোনমিক করিডোর বিসিআইএমের (বাংলাদেশ, চায়না, ভারত, মায়ানমার) বাইরেও সহযোগিতা সংস্থা আসিয়ানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। তাদের এ আগ্রহকে স্বাগত জানাচ্ছে থাইল্যান্ড। বিসিআইএম যখন পুরোপুরি চালু হবে, তখন করিডোরভুক্ত দেশগুলোকে আসিয়ানের সঙ্গে যুক্ত করে নেওয়া হবে। তখন আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ বাড়বে।
নরাসিত সিনহাসেনা জানান, বাংলাদেশের ৬৯৯৮টি পণ্য তার দেশ থাইল্যান্ডের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। দু’বছর পরপর শুল্কমুক্ত পণ্যের তালিকা রিভিউ করা হবে। তখন ধীরে ধীরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, ওষুধ, কৃষিদ্রব্যসহ ১৫টি পণ্য এ সুবিধার আওতায় আসার সুযোগ পাবে।
সাম্প্রতিক মানবপাচার সংকট প্রসঙ্গে থাই পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এটা এখন আন্তর্জাতিক ইস্যু। আগামী ২ জুলাই আসিয়ানের মন্ত্রী পর্যায়ের একটি জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। সে বৈঠকে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড এবং জাপানও অংশ নেবে। বৈঠকটিতে অবৈধ অভিবাসন এবং মানবপাচার বন্ধে কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের বিষয়ে আলোচনা হবে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে একে অপরকে দোষারোপ না করে এ সংকটের সমাধানেও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার কথা বলেন নরাসিত সিনহাসেনা।
থাই পররাষ্ট্র সচিব বলেন, কর্মসংস্থান এবং উন্নত জীবনমান নিশ্চিত করা গেলে মানপাচার কমিয়ে আনা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব দেশকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
তিনি জানান, এ বছরের শেষ দিকে ঢাকায় বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের যৌথ কমিশনের বৈঠক হবে। বৈঠকে উপকূলীয় জাহাজ চলাচলসহ বেশ কিছু চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক সই হবে। ইতোমধ্যে থাইল্যান্ডের রেনাং থেকে বাংলাদেশের মংলা বন্দর পর্যন্ত জাহাজ চলাচলে চুক্তির খসড়া তৈরির কাজ শেষ হয়েছে।
মৎস্য আহরণের আড়ালে যেসব ট্রলার মানবপাচারে জড়িত সেসবের ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে থাই পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মানবপাচারের মতো কর্মকাণ্ডে জড়িত অবৈধ ট্রলার চলাচল বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, এফওসি বৈঠকের ফলে দু’দেশের সম্পর্কে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। আশা করা হচ্ছে বাংলাদেশের ট্যুরিজম, হেলথ এবং এনার্জি খাতে থাই বিনিয়োগ বাড়বে।