এটা মাশরাফির একধরনের অভ্যাসও হয়ে গেছে। বোলিং শেষ করে একটু নিচু হয়ে হাঁটুর ওপর হাত বুলিয়ে দেন। কখনো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটেন। যে কেউ দেখলে মনে করবেন এই বোধহয় ফিরে যাচ্ছেন ড্রেসিংরুমে। অ্যাডিলেড ওভালেও অমনটা দেখা গেছে। যাতে করে সাকিবকে এক ওভার ক্যাপ্টেনসির দায়িত্ব দিয়েছিলেন। দুই পায়েই তো অস্ত্রোপচার হয়েছে। যেটুকু খেলেন অভিজ্ঞতা আর মনের জোরেই। নতুবা সম্ভব নয়। তা ছাড়া জীবন বাজি রেখে কে খেলবেন ক্রিকেট? নিজেও একবার আফসোস করে বলেছিলেন, ‘মেলবোর্ন অনেক রক্ত নিলো, কিন্তু প্রতিদান কিছু দিলো না।’ শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ম্যাচের পর একবার আপন মনে কথাগুলো বলেছিলেন এক আড্ডায়। রক্ত নেয়া মানে, এ মেলবোর্নের এক হাসপাতালে ডা: ডেভিড ইয়াং মাশরাফির দুই হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করেন। মাশরাফি খুবই আফসোস করেন শ্রীলঙ্কার ম্যাচ নিয়ে। এবার আবারো মেলবোর্নে খেলার সুযোগ। হাঁ, আইসিসি বাংলাদেশকে মোটামুটি নিশ্চিত করেই শিডিউল করে রেখেছে যে, মেলবোর্নে খেলবে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ যে-ই হোক না কেন। তবে সেটা ভারতের বিপক্ষেই হওয়ার কথা। তাহলে মাশরাফি কি এবার মেলবোর্নে সেই রক্তের প্রতিদানের প্রত্যাশা করবেন? কিন্তু মাশরাফি তো ইনজুরড! কাল হ্যামিল্টনের সেডন পার্কে বাংলাদেশ দলের নির্ধারিত কোনো অনুশীলন ছিল না। তাই মাশরাফিও যোগ দেননি ঐচ্ছিক অনুশীলনে। অবশ্য এটাই স্বাভাবিক। সিনিয়র ক্রিকেটার, একটু বিশ্রামের সুযোগ পেলে সেটা নেবেন। তবে ম্যাচের আগের দিনে তো সব ক্রিকেটারের অনুশীলন বাধ্যতামূলক। কিন্তু মাশরাফি যদি অনুশীলন না-ই করেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাশরাফিকে বিশ্রাম দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। যদিও মাশরাফি নাকি তাতে তেমন একটা রাজি নন। তিনি চান প্রতিটা ম্যাচেই দলের সবাই শতভাগ উজার করে দিয়ে খেলবেন। কিন্তু যার প্রেরণায় খেলে চলেছে দল, তাকে একটু বিশ্রাম দিলে তো ক্ষতি নেই। তা ছাড়া এ ম্যাচের গুরুত্বও তো নেই। জয় পেলে আত্মবিশ্বাস বজায় থাকবে এই যা।
এ দিকে মাশরাফির হাঁটুর ইনজুরি প্রসঙ্গে ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, ‘হাটুতে ব্যথা রয়েছে মাশরাফির। তবে সেটা কখনো কমছে, কখনো কমছে না। না কমলেও হাঁটুতে ব্যথা সেভাবে বেশি নেই।’ যদিও টিম ম্যানেজার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেরা একাদশ খেলানোর কথাই বলেছেন, ‘আমরা সেরা দলটাই খেলাতে চাই। ক্রিকেটাররা এখন আত্মবিশ্বাসী। যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে আমরা এসেছি এখানে সেই ধারা নিয়েই খেলতে চাই কোয়ার্টার ফাইনালে।’ তাই বলে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচকে গুরুত্বহীন করে রেখেছেন তা নয়। সুজনের কথা, ‘আমরা অবশ্যই নিউজিল্যান্ডকে নিয়েই এখন সব ফোকাস করছি’। ম্যাচের গুরুত্ব নেই নিউজিল্যান্ডের কাছেও। তবে রয়েছে প্রতিশোধের আগুন। বাংলাদেশে পরপর দু’টি সিরিজেই হোয়াইট ওয়াশ। কিছুটা হলেও তো ফিরিয়ে দেয়ার টার্গেট তাদের।
এ দিকে ওই ম্যাচে মাশরাফির না খেলার সম্ভাবনা ৯০ পার্সেন্ট। না খেললে সেখানে খেলবেন শফিউল ইসলাম। এতে করে রুবেল, তাসকিনের সঙ্গে জুটি বাঁধবেন শফিউল। আর অধিনায়কত্বের দায়িত্ব এমনিতেই চলে আসবে সহ-অধিনায়ক সাকিবের ওপর। কারণ মেলবোর্নের কোয়ার্টার এখন গুরুত্বপূর্ণ। মাশরাফি যদি এ ম্যাচে বিশ্রাম নিয়ে ১৯ মার্চের ওই ম্যাচে খেলেন, তাতে বড় একটা বিশ্রামও তার হয়ে যাবে, যা তার গুরুত্বপূর্ণ ওই ম্যাচে দলের হয়ে বড় দায়িত্ব পালনে বরং সহায়কই হবে। কারণ বিশ্বকাপের এ আসরে দুর্দান্ত ফর্মে এ ক্রিকেটার। হোক না ইনজুরি। তবুও ক্যারিয়ারের সেরা সময়ই বোধহয় কাটাচ্ছেন তিনি। টিম ম্যানেজমেন্ট তাই ওকে নিয়ে ঝুঁকি নিতে নারাজ। বরং বিশ্রামে রাখবেন, ওভাবেই আভাস দিয়ে রেখেছেন।