সাজিদ জাভিদ : ব্রিটেনে প্রথম মুসলিম স্বাস্থ্যমন্ত্রী

সাজিদ জাভিদ : ব্রিটেনের প্রথম মুসলিম স্বাস্থ্যমন্ত্রী

যুক্তরাজ্যের সাবেক অর্থমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিচ্ছেন। তিনিই হবেন যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে প্রথম কোনো মুসলিম স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ২৬ জুন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের কার্যালয় থেকে নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করা হয়। গত বছর মন্ত্রিসভায় রদবদলের একটি সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে বিরোধের জেরে তিনি অর্থমন্ত্রী পদ থেকে সড়ে দাঁড়িয়েছিলেন।  রাজনৈতিক উপদেষ্টাদের চাকরিচ্যুত করতে রাজি ছিলেন না তিনি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী হয়ে যা বললেন সাজিদ জাবিদ

টুইট বার্তায় সাজিদ জাভিদ জানান, ‘এই গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পাওয়ায় সম্মানিত বোধ করছি। আশা করি, মহামারি করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবদান রাখতে পারব। মন্ত্রিসভায় অংশ নিয়ে দেশের সেবা করে যাব’।

সাজিদ জাভিদের জন্ম ও ছেলেবেলা

ব্রমসগ্রোভ আসনের এমপি সাজিদ জাভিদের জন্ম ল্যাঙ্কাশায়ারের রচডেল এলাকায়। তাঁর বাবা ছিলেন বাসচালক। এক সাক্ষাৎকারে সাজিদ জাভিদ বলেন, সরকারের অভিবাসন–নীতিতে ত্রুটি আছে। উইন্ডরাশ প্রজন্ম যে দুর্ভোগের শিকার হয়েছে, তাঁর বাবা, মা কিংবা তিনি নিজেও এই পরিস্থিতির শিকার হতে পারতেন। তাঁর বাবা ১৯৬০ সালে যুক্তরাজ্যে আসেন।

পাকিস্তানি মুসলিম বাস ড্রাইভারের ছেলে

ব্রিটেনের নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদের বাবা ১৯৬০ এর দশকে পাকিস্তান থেকে ব্রিটেনে এসে প্রথমে কাপড়ের কারখানায় শ্রমিক হন। পরে বাস চালাতেন। প্রথম প্রজন্মের অভিবাসীর সন্তান  তিনি।

যুক্তরাজ্যের প্রথম মুসলিম প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী

যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান হওয়ার দৌড়ে শামিল হয়েছিলেন সাজিদ জাভিদ। টুইটারে এক ভিডিও বার্তায় তখন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সাজিদ বলেছিলেন, ‘যুক্তরাজ্যের মানুষের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে চাই। দেশকে এক্যবদ্ধ করে দেশবাসীর জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করতে চাই।

কমিউনিটিগুলোর মধ্যে বিভাজন দূর করে মেলবন্ধন নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের সমাজ ও অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে হবে, যাতে করে একটি সমৃদ্ধশালী জাতির দেওয়া সব সুযোগ সবাই সমানভাবে ভোগ করতে পারে।’

যুক্তরাজ্যের প্রথম এশীয় চ্যান্সেলর

প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন কর্তৃক চ্যান্সেলর নিযুক্ত হন সাজিদ জাবিদ। ২০১৯ সালের ২৪ বরিস জনসনের নতুন মন্ত্রিসভায় চ্যান্সেলর নিযুক্ত হয়ে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন কর্তৃক চ্যান্সেলর নিযুক্ত হয়ে গভীরভাবে সম্মানিত।”

১৬ মাস আগে নিজের সহযোগীদের বরখাস্ত করার জন্য জাভিদকে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী জনসন। কিন্তু জাভিদ সেই নির্দেশ অমান্য করে চ্যান্সেলরের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন।

ব্রিটেনের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ

২০১৮ সালের ‍১ মে সকালে সাজিদ জাভিদকে অ্যাম্বার রাডের স্থলাভিষিক্ত করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। প্রথম কোনো অশ্বেতাঙ্গ হিসেবে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের দায়িত্ব পেয়েছিলেন।

সাজিদ জাবিদের রাজনৈতিক জীবন

সাবেক ব্যাংকার সাজিদ জাভিদ ২০১০ সালে কনজারভেটিভের পক্ষে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৬ সাল থেকে তিনি সম্প্রদায় ও স্থানীয় সরকারবিষয়ক মন্ত্রী (কমিউনিটিজ অ্যান্ড লোকাল গভর্নমেন্ট সেক্রেটারি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এর আগে এক বছর তিনি বাণিজ্য, উদ্ভাবন ও দক্ষতাবিষয়ক মন্ত্রী (বিজনেস ইনোভেশন অ্যান্ড স্কিলস সেক্রেটারি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মন্ত্রিসভার সবচেয়ে অভিজ্ঞ মন্ত্রী সাজিদ জাভিদ

প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের মন্ত্রিসভার সবচেয়ে অভিজ্ঞ মন্ত্রী সাজিদ জাভিদ। এর আগে স্বরাষ্ট্র ও অর্থমন্ত্রণালয়সহ পাঁচটি মন্ত্রণালয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ৫১ বছর বয়সী জাভিদ করোনাভাইরাসের সংকটকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেন।

সাজিদ জাভিদের মন্ত্রিপরিষদে ফেরা নিয়ে সমালোচনা

সম্প্রতি করোনাভাইরাস মহামারীর এই সংকটকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদটি সরকারের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই পদে সাজিদ জাভিদের নিয়োগ নিয়ে সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী জনসনের সাবেক ঊধ্র্বতন সহযোগী ডমিনিক কামিংস এবং লেবার পার্টিও।

কামিংসের অভিযোগ, নতুন এই নিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী হস্তক্ষেপ রয়েছে, যিনি স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য ‘ভয়ানক’ এবং  ‘শিরোনামের পেছনে ছোটেন’। কামিংস আরও বলেন, গতবছর তিনি বরিস জনসনকে ‘কৌশলে’ রাজি করিয়েছিলেন জাভিদকে অপসারণের জন্য, যা না করলে অর্থমন্ত্রণালয় একজন ‘অপদার্থ’ মন্ত্রী পেত।

ওদিকে, লেবার পার্টির অভিযোগ, জাভিদ কৃচ্ছ্র ব্যবস্থার স্থপতি, যে কৃচ্ছ্রের কারণে দেশের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) দুর্বল হয়ে পড়েছে।

যার পদত্যাগে সুযোগ পেলেন সাজিদ জাভিদ

ম্যাট হ্যানককের পদে স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন সাজিদ জাভিদ। হ্যানকের পদত্যাগে ফের মন্ত্রিসভায় যুক্ত হবার সুযোগ পাচ্ছেন তিনি। এর আগে সহকর্মীকে চুমু খেয়ে সমালোচনার মুখে ২৬ জুন পদত্যাগ করেন ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক।

করোনায় সামাজিক দূরত্ব না মেনে সহকর্মীকে চুমু খান তিনি। আর এ দৃশ্যের ছবি ভাইরাল হলে অনেকটা চাপের মুখেই পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। তার পদত্যাগপত্র গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মী গিনা কোলাডঅ্যাঞ্জেলো নামের ওই সহকারীকে ম্যাট হ্যানকক নিজেই নিয়োগ দেন। গত ৬ মে তোলা তাদের একটি অন্তরঙ্গ ছবি সংবাদমাধ্যমসহ সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়ে যায়। এ অবস্থায় কপাল খুলে সাজিদ জাভিদের। হ্যানককের পদত্যাগের কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

তথ্যসূত্র

  • বিবিসি
  • বিবিসি বাংলা
  • আনাদোলু
  • রয়টার্স
  • টেলিগ্রাফ
  • দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট
Scroll to Top