বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পে কারখানায় শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজে অগ্রগতি না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের ফোরাম এ্যালায়েন্স।
সংগঠনটি বলেছে, কারখানায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজ এখন থেমে গেছে।
তবে তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলেছে, বিদেশী ক্রেতারা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অর্থ সহায়তা না দেয়ায় কারখানায় শ্রমিকের কাজের পরিবেশ উন্নত করার কাজে সমস্যা হচ্ছে।
বিজিএমইএ’র সদস্য বা তালিকাভুক্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার কারখানাকে তিন ভাগে ভাগ করে এর নিরাপত্তার প্রশ্নে সমস্যা চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়।
আইএলও’র সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার ঢাকা এবং চট্টগ্রামে ১৮শ কারখানা পরিদর্শনের দায়িত্ব নিয়েছিল।
ইউরোপের ক্রেতাদের ফোরাম অ্যাকোর্ড দায়িত্ব নিয়েছিল ১১শ কারখানা পরিদর্শনের। আর যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের সংগঠন এ্যালায়েন্স এর ভাগে পড়েছিল ছয়শ কারখানা।
এখন এ্যালায়েন্স অভিযোগ তুলেছে, তারা যে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছে, বেশিরভাগ কারখানাতেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান করা হয়নি। কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজ থেমে গেছে ।
এমন বক্তব্য দিয়ে এবং উদ্বেগের কথা তুলে ধরে সংগঠনটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে।
এ্যালায়েন্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট রবিন মেসবাহ বলছিলেন,সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে তাদের উদ্বেগের বিষয় বিজিএমইএ সহ সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে।
তিনি বলছিলেন, “গত বছর ৫৮৭টি কারখানায় পরিদর্শন করে যে ত্রুটি বা সমস্যাগুলো পেয়েছিলাম, সেগুলো সমাধানের জন্য মালিকদের দেড় মাস থেকে নয় মাস পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছিল।কিন্তু অগ্রগতি জানার জন্য ১২৪টি কারখানায় আবার পরিদর্শন করে দেখা যায়, মাত্র ২৪ শতাংশ কারখানায় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ এগোয়নি।বেশিরভাগ কারখানাতেই কোন অগ্রগতি নেই।”
২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসে ১১শ’র বেশি গার্মেন্টস শ্রমিক নিহত এবং অনেকে আহত হওয়ার ঘটনার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানায় শ্রমিকের নিরাপত্তার ইস্যু সামনে আসে।
তখন বিদেশী ক্রেতারা অ্যাকোর্ড এবং এ্যালায়েন্স গঠন করে এই ইস্যুতে কাজ শুরু করেছিল। গার্মেন্টস মালিকদের বলেছেন, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে নতুন চাহিদা পাওয়া না পাওয়া প্রশ্নে মালিকরা এখন উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন।
সে কারণে অনেক মালিকের কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে।
যদিও এমন বক্তব্যকে বিশেষজ্ঞদের অনেকে অজুহাত হিসেবে মনে করেন।
কিন্তু বিজিএমইএ’র সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেছেন, অনেক কারখানায় ছোট সমস্যা বা ত্রুটিগুলো সারিয়ে ফেলা হয়েছে।
বড় ধরনের ত্রুটি বা সমস্যা সমাধানের কাজ বন্ধ রয়েছে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিদেশী ক্রেতারা এখনও অর্থ সহায়তা না দেয়ায়।তারা অল্প সুদে ঋণ চান।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিকের নিরাপত্তা বিষয়ে কাজ করেন। তিনি মনে করেন,কাজটি এখন মাঝ পর্যায়ে এসেছে।এই পরিস্থিতিতে অর্থ সহায়তা দিয়ে কাজ শেষ করার জন্য মালিকদের ওপর চাপ তৈরি করা যেতে পারে।
তিনি বলেছেন, “গার্মেন্টস শিল্পে এ ধরনের সংস্কার কাজ কখনই সহজভাবে নেয়ার পরিস্থিতি ছিল না। এবার যেহেতু মালিকরা এই প্রক্রিয়ায় জড়িত হয়েছে এবং কাজের মাঝপথে রয়েছে। ফলে কাজটা শেষ করার ক্ষেত্রে অর্থ সহায়তার দাবি বিবেচনায় নেয়া উচিত।”
তবে এ্যালায়েন্স বলেছে, কারখানা পরিদর্শনের সব খরচ তাদের বহন করার কথা ছিল এবং সেটাই তারা করেছে। এখন মালিকদের দাবির কারণে কারখানার বড় ধরনের ত্রুটি বা সমস্যা সমাধানে অল্প সুদে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা তারা করছে।
সূত্রঃ বিবিসি