নিখোঁজের চার মাস পর ‘গ্রেফতার’ কল‍্যাণ পার্টির মহাসচিব

প্রায় চার মাস ধরে নিখোঁজ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এ এম এম আমিনুর রহমানকে উদ্ধারের পর, নৌমন্ত্রীর মিছিলে বোমা হামলা মামলায় রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। শনিবার তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। ঢাকার মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস এ আদেশ দেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) এডিসি শাহজাহান সাজু জানান, শুক্রবার রাত পৌনে ১২টার দিকে শাহজাদপুর সুবাস্তু টাওয়ারের সামনের রাস্তা থেকে আমিনুরকে আটক করা হয়। পরে ২০১৫ সালে গুলশান থানায় দায়ের করা এক নাশকতার মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মহাসচিবের সন্ধান পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এডিসি বলেন, তার মোবাইল ট্র্যাকিং করে অবস্থান নিশ্চিত হই। এরপর তাকে গ্রেফতার করি। আমরা বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারিনি। তাকে আদালতে চালান করেছি। আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। আর কোনো মামলা তার বিরুদ্ধে আছে কি-না, তা খতিয়ে দেখা হবে।
এদিকে, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম সাংবাদিকদের বলেন, গত ২৭ আগস্ট মহাসচিব নিখোঁজ হন। শুক্রবার রাতে তার ফোন খোলা পাওয়া যায়। পরে ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক শেখ নাজমুল আলম সাংবাদিকদের জানান, আমিনুরের সন্ধানে অনেক দিন ধরে কাজ করছিল গোয়েন্দারা। হঠাৎ শুক্রবার দেখি, তার মোবাইল ফোনটি সচল। তারপর গুলশান থেকে তাকে উদ্ধার করে নৌ-পরিবহনমন্ত্রীর মিছিলে হামলার ঘটনায় গুলশান থানায় দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

গুলশান থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা রকিবুল ইসলাম জানান, শনিবার দুপুরে আমিনুরকে ঢাকা মুখ্য মহানগর (সিএমএম) হাকিম আদালতে হাজির করে নৌ-পরিবহনমন্ত্রীর মিছিলে হামলার ঘটনায় গুলশান থানায় দায়ের করা মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। পরে বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাসের আদালতে রিমান্ড শুনানি শেষে আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এ সময় আসামি পক্ষে আাইনজীবী মো. আব্দুল রউফ রিমান্ড শুনানি করেন। তিনি বলেন, এম এম আমিনুর রহমানকে গত ২৭ আগস্ট তার নিজ কার্যালয় থেকে অজ্ঞাতনামা লোকজন উঠিয়ে নিয়ে যায়। তারপর ওই দিনই আমরা পল্টন থানায় একটি জিডি করি। জিডি নম্বর ২৩/৮০। তার দাবি, তিন বছর আগের পুরাতন নাশকতা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এজাহারে তার কোনো নাম নেই এবং রিমান্ড চাওয়ার কোনো যৌক্তিকতাও নেই।

মামলার নথি থেকে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনের জন্য গুলশানে সমবেত হন মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের নেতাকর্মীরা। সেখানে তারা একটি সমাবেশ করেন। সমাবেশ শেষে ২০ থেকে ৩০ হাজার সাধারণ মানুষ নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের নেতৃত্বে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয় ঘেরাও করার উদ্দেশে রওনা হলে মিছিলের ওপর বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এ ঘটনায় ঢাকা যানবাহন ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাচ্চু বাদী হয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমানকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

গত ২৭ আগস্ট রাত ১০টার দিকে নয়াপল্টন থেকে সাভারের আমিনবাজারে বাসার দিকে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন কল্যাণ পার্টির মহাসচিব। এরপর থেকে তার আর কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। সেই সময় নিখোঁজ উল্লেখ করে পল্টন থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।

Scroll to Top