ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদের সেই ৮১ প্রার্থীকে খুঁজছে পুলিশ। এদের বিরুদ্ধে হত্যা, নাশকতা, প্রতারণাসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা রয়েছে। পুলিশের খাতায় এরা পলাতক। গ্রেফতারের এ তালিকায় রয়েছেন ১২ জন মেয়র ও ৬৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থী।
ইতিমধ্যে এই ৮১ প্রার্থীর একজন জামায়াতের সাইদুর রহমানকে পুলিশ পাকড়াও করেছে। শেরেবাংলানগর থানা পুলিশ গতকাল তাকে আগারগাঁওয়ের ঢাকা উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তার অস্থায়ী কার্যালয় (স্থানীয় সরকার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট) থেকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানিয়েছে, সাইদুর তিনটি হত্যাসহ চার মামলার পলাতক আসামি। সাইদুর তার নির্বাচনী হলফনামায় মামলার কথা উল্লেখ করেননি। তবে সাইদুর রহমানের বক্তব্য, ‘আমি এসব মামলার বিষয়ে জানি না। পুলিশের মৌখিক অভিযোগেই রিটার্নিং কর্মকর্তা আমার প্রার্থিতা বাতিল করেছেন।’সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, সন্ত্রাসমুক্ত, ভয়হীন, সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে অনুষ্ঠানের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যা প্রয়োজন তার সবই করবে। যাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের অভিযোগে মামলা রয়েছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। তাদের কারণে অন্য প্রার্থীদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। আর এ কারণেই তালিকাভুক্ত প্রার্থীদের গ্রেফতারে পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। ইতিমধ্যে এ তালিকা ঢাকা মহানগরীর ৪৯টি থানায় পাঠানো হয়েছে। প্রার্থীদের বাসাবাড়িতে পুলিশ ও গোয়েন্দারা অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। আর যারা জামিনে রয়েছেন তাদের ওপরও নজরদারি চলছে।ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একটি সূত্র জানিয়েছে, বুধবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ৮১ জন প্রার্থীর একটি তালিকা নির্বাচন কমিশনের কাছে হস্তান্তর করেছে। এ তালিকার প্রার্থীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এরা জামিনেও নেই। আত্মগোপনে থেকে এরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। জেলখানায় আটক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সঙ্গেও এদের কারও কারও যোগাযোগ রয়েছে।ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম এই ৮১ প্রার্থীর বিষয়ে বলেছেন, তালিকাভুক্ত প্রার্থীদের কেউই জামিনে নেই। যে কারণে প্রকাশ্যে এলেই তাদের গ্রেফতার করা হবে। তিনি এও বলেছেন, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হয়েছে কিন্তু জামিন নেননি, তাদের নাম যদি চার্জশিটে আসার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে তদন্ত কর্মকর্তা চাইলে তাদের গ্রেফতার করতে পারবেন। এটি সম্পূর্ণ তদন্ত কর্মকর্তার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করবে।সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের কাউকে গ্রেফতার করতে নির্বাচন কমিশনের অনুমতির দরকার নেই বলেও জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ।বুধবার নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক প্রার্থীদের অনেকের নামে মামলা রয়েছে।পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের সম্পর্কে জরিপ চালায় পুলিশ। বিশেষ করে দুটি দিক সামনে রেখে জরিপ চালানো হয়েছে। একটি হলো, প্রার্থীদের ব্যাপারে সরকার যদি কোনো তথ্য চায়, তাহলে দ্রুত তা সরবরাহ করতে একটি তথ্যব্যাংক তৈরি করা। দ্বিতীয়ত, যদি তারা মনোনয়ন পেয়েই যান, তাহলে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার একটি পরিকল্পনা তৈরি করা।সূত্র জানায়, পুলিশের সর্বশেষ জরিপমতে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে ৪৪০ জন প্রার্থী বিভিন্ন মামলার আসামি। তাদের মধ্যে ২০-দলীয় জোটের সমর্থক প্রার্থী রয়েছেন ৩১৮ জন। এদের মধ্যে ফৌজদারি মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি আছেন ১৮৩ জন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোট সমর্থক ১২২ প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা আছে। জামিনে নেই এমন প্রার্থীর সংখ্যা ৮১ জন।সূত্র জানায়, এই প্রার্থীদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে মামলা রয়েছে। তবে অধিকাংশ প্রার্থীই তাদের হলফনামায় মামলার কথা উল্লেখ করেননি, যা পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। সূত্রমতে, ঢাকা উত্তরের একজন মেয়র প্রার্থী, যার বিরুদ্ধে উত্তরা থানায় রয়েছে একটি হত্যা মামলা। ২০১১ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহারের ২৩তম সভায় এ হত্যা মামলাটি ওঠানো হয়। কিন্তু মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়নি। মামলার দুই নম্বর আসামি হয়েও উত্তরের মেয়র হিসেবে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন তিনি। ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মধ্যে ঢাকা উত্তরে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে রয়েছে শতাধিক মামলা। উত্তরের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের এক কাউন্সিলর প্রার্থীর রয়েছে ছয়টি, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের একজনের রয়েছে পাঁচটি, দক্ষিণের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে একজনের রয়েছে ১৮টি, দক্ষিণের ১ নম্বর ওয়ার্ডের একজন কাউন্সিলরের ছয়টি, দক্ষিণের ২ নম্বর ওয়ার্ডের একজনের রয়েছে পাঁচটি, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের একজনের ১০টি, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের একজনের ১৩টি, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের একজনের রয়েছে আটটি মামলা।
সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন