বাংলাদেশে গুগল ও অ্যামাজনের ভ্যাট নিবন্ধন, আসছে ফেসবুক-নেটফ্লিক্স

56
গুগল-অ্যামাজন-ফেসবুক

জিনিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশের নিবন্ধিত ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে বিশ্বের অন্যতম টেক জায়ান্ট গুগল ও অ্যামাজন। এই দুটি প্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেট থেকে অনাবাসী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবসায় নিবন্ধন নম্বর (বিআইএন) নিয়েছে, যা ভ্যাট নিবন্ধন হিসেবে পরিচিত। ২৩ মে গুগল এবং ২৭ মে অ্যামাজন এই ভ্যাট নিবন্ধন পেয়েছে।

অবশ্য এত দিনও প্রতিষ্ঠান দুটি ভ্যাটের টাকা পরিশোধ করত। বাংলাদেশ থেকে যে ব্যাংকের মাধ্যমে তাদের টাকা পরিশোধ হতো, সেই ব্যাংকই ভ্যাট কেটে রেখে সরকারি কোষাগারে জমা দিত।

শুধু গুগল, অ্যামাজন নয়; শিগগিরই ফেসবুক ও নেটফ্লিক্স ভ্যাট নিবন্ধন নিতে যাচ্ছে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে।

গুগল এশিয়া প্যাসিফিক পিটিই লিমিটেড নামে ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে। ব্যবসার ধরন হিসেবে বলা হয়েছে সেবা। আর সিঙ্গাপুরের আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। অন্যদিকে অ্যামাজন নিবন্ধিত হয়েছে অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস ইনকরপোরেশন নামে। এই প্রতিষ্ঠান সেবাধর্মী ব্যবসা করবে বলে জানিয়েছে।

অ্যামাজন যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের ঠিকানা ব্যবহার করেছে। অনাবাসী প্রতিষ্ঠান হলেও এ দেশে তাদের পক্ষে ভ্যাট পরামর্শক হিসেবে কাজ করবে প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারস বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠানটি গুগল ও অ্যামাজনের পক্ষে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল তৈরিসহ ভ্যাট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ রক্ষায় সহায়তা করবে।

ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার এস এম হুমায়ুন কবির গণমাধ্যমকে বলেন, অনাবাসী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ দেশে ব্যবসা করছে গুগল ও অ্যামাজন। এখন তারা পুরোপুরি ভ্যাট আইনের আওতায় এল। অন্য ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠানের মতো ওই প্রতিষ্ঠান দুটি রিটার্ন দাখিল করবে। আবার ভ্যাটের আইনি সুরক্ষাও পাবেন।

এদিকে ফেসবুকও ভ্যাট নিবন্ধন নিতে যাচ্ছে। নেটফ্লিক্সের ভ্যাট নিবন্ধনের আলোচনা প্রক্রিয়াও অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আবেদন করা হলে আগামী এক মাসের মধ্যে এই দুটি প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট নিবন্ধন দেওয়া হতে পারে। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারস বাংলাদেশ। এ ছাড়া ভারতের ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম হইচই-কে ভ্যাট নিবন্ধনের আওতায় আনতে আলোচনা চলছে।

গুগল, অ্যামাজন, ফেসবুকসহ অনাবাসী প্রতিষ্ঠানগুলো (যাদের এ দেশে স্থায়ী কার্যালয় নেই) এ দেশে বিজ্ঞাপন প্রচারসহ নিজেদের নানা ধরনের সেবা দিয়ে থাকে। এসব সেবা নিয়ে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড বা অন্য কোনো উপায়ে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করে থাকেন। তখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট কেটে রাখেন। ভ্যাট কেটে না রাখলে বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশে ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে টাকা পাঠানোর অনুমতি দেয় না।

জানা গেছে, ভ্যাট সেবা পেতে গুগল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো ২০১৯ সাল থেকেই চেষ্টা করছিল। ভ্যাট আইন অনুসারে সরাসরি এ সেবা পাওয়ার বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে দাবি ছিল। কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে বিদেশি সংস্থাগুলোকে ভ্যাটের সেবা পেতে ভ্যাট এজেন্ট নিয়োগ করতে হয়েছিল।

এ বিষয়ে সংস্থাগুলো এনবিআরকে বেশ কয়েকটি চিঠি দেয়। এতে তারা ভ্যাট দেয়ার বিষয়ে সরাসরি সেবা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশে স্থায়ী অফিস না থাকায় বিষয়টির সুরাহা হয়নি।

ভ্যাট নিবন্ধন ছাড়া ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব ও মাইক্রোসফটের মতো আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি সংস্থা বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে না বলে জানিয়েছিল এনবিআর। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এসব কোম্পানিকে বাংলাদেশে অফিস স্থাপন অথবা ভ্যাট এজেন্ট নিয়োগ দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়।

তাদের নিযুক্ত এজেন্টরা ব্যবসা পরিচালনা বাবদ বাংলাদেশ সরকারকে রাজস্ব দেবে। কিন্তু পরবর্তীতে ২০২০ সালের প্রথমদিকে আলাদা ভ্যাট নিবন্ধন নম্বরের আওতায় আনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় এনবিআর। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছর থেকে বিআইএন রেজিস্ট্রেশনের পেতে আবেদন করে প্রতিষ্ঠানগুলো।