স্বাধীনতাযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে জনতার ঢল নেমেছে। স্বাধীনতার ৪৪তম বার্ষিকীতে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় গৌরব ও জাতীয় চেতনার প্রতীক জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের স্মরণ করছে হাজারো মানুষ। ফুলে ফুলে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে বীর সন্তানদের।
দিনের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল আনুষ্ঠানিকতা। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদর্শন করে। এ সময় মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিচারপতি, তিন বাহিনীর প্রধানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে দলীয় নেতাদের নিয়ে স্মৃতিসৌধে ফুল দেন শেখ হাসিনা।
এরপরে স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ।
পরে কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু হয়। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধ এলাকা ত্যাগ করার পর সর্বসাধারনের জন্য খুলে দেওয়া হয় স্মৃতিসৌধের প্রধান ফটক। বীর শহীদদের মূলবেদীতে শ্রদ্ধা জানাতে সূর্য ওঠার আগেই সাধারণ মানুষ ভিড় জমাতে শুরু করে জাতীয় স্মৃতিসৌধের সামনে। বেলা বাড়ার সঙ্গে এই ভিড় বাড়তে থাকে।
দল বেঁধে আসছেন তরুণ-তরুণীর দল। পরনে লাল-সবুজের প্রাধান্য। নারীদের বেলায় লাল-সবুজ শাড়ি আর সালোয়ার-কামিজ। পুরুষদের পরনে পাঞ্জাবি, টি-শার্ট বা ফতুয়া। সবকিছুতেই জাতীয় পতাকার ছোঁয়া। কারও মাথায় জাতীয় পতাকার ছাপ দেওয়া ব্যান্ড, তার মধ্যে কেউ কেউ গুঁজে দিয়েছেন সরু কাঠির সঙ্গে লাগানো পতাকা। বাহুতে, চিবুকে, গালে একই নকশা এঁকে নিয়েছেন বহুজন। গোটা স্মৃতিসৌধে বিরাজ করছে লাল-সবুজের এক অপরূপ চিত্র।
স্মৃতিসৌধে পা রাখতেই গালে-কপালে জাতীয় পতাকা একে নেয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে সৌখিন চিত্রকররা। মূল ফটকে পতাকা একে নিয়েই শহীদ বেদির দিকে ছুটছেন শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষ।
ছোট মনিরাও বাদ যাচ্ছে না লাল-সবুজের গৌরব থেকে। বাবা কিংবা মায়ের ইচ্ছেতেই শিশুদের গালে-কপালে আচড় পড়ছে রং তুলির। ফুটে উঠছে লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা। পতাকার গৌরব মাখা চিহৃ নিয়ে স্মৃতিসৌধের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন উঠতি বয়সীরা।
মুক্তিকামীদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার এই দিনটিতে লাল-সবুজের তাৎপর্য বহন করছে সবাই। নানা অনুভূতি উঁকি দিচ্ছে সবার মনে।
শিশু সন্তানের কপালে লাল সবুজ একে নেয়ার সময় গৃহিনী আফরোজ বেগম জানালেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সম্মান ও লাল-সবুজের প্রতি মানুষের ভালোবাসার সঙ্গে আমার সন্তানকে পরিচিত করার সুযোগ আজকের দিনটি। লাল-সবুজের এই পতাকা আমার শিশু সন্তানের মনে দেশের প্রতি ভালোবাসার প্রেরণা জোগাবে বলে আশা করেন তিনি।
সচেতন নাগরিক কমিটির ব্যনারে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন একদল যুবক। শ্রদ্ধা জানানো শেষে স্মৃতিসৌধের পাশেই মুষ্ঠিবদ্ধ হাতে শপথ নিয়েছেন স্বনির্ভর দেশ গড়ার। সবার পরনেই শোভা পাচ্ছিল লাল সবুজ। সবাই যেন স্বাধীনতার প্রতীক, সবার অহঙ্কার লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা।