আসছেন না মোদি : পর্যবেক্ষণ করছেন পরিস্থিতি

mostafa_71758আপাতত বাংলাদেশ সফরে আসছেন না ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। চলমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান বা পরিস্থিতির সন্তোষজনক কোন উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সফরে তিনি না আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, নরেন্দ্র মোদি ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকা সফরে আসবেন, এটা মোটামুটি ঠিক হয়ে গিয়েছিলো। শুধু আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি নির্ধারণটা বাকি ছিলো। তাকে ঢাকা সফরের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক দাওয়াত দেয়ার কথা ছিল দুই দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠকে। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখে ছিল বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রীয় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার জন্য দাওয়াত দেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশ। সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদির প্রাথমিক ইচ্ছা পোষণের পর থেকেই এই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিলো। ভারতের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত সাড়া পেলেই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রক্রিয়া শুরু করা হত।

কিন্তু অবশেষে ভারতের পক্ষ থেকে সেই সাড়া পাওয়া যায়নি। বরং বিভিন্ন সূত্র থেকে যতোটা জানা গেছে, বাংলাদেশে আসার ব্যাপারে মোদি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন। আর এ কারণে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দাওয়াত দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, নিকট ভবিষ্যতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের আপাতত সম্ভাবনা নেই।

গত ২ মার্চ দুই দিনের জন্য বাংলাদেশ সফরে আসেন নব নিযুক্ত ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর। সফরকালে একাধারে তিনি বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে।

জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করেছেন তিনি। এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসার জন্য আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন। তবে সফরের সময় নিয়ে কোন কথা বলেননি এসময়ে।

কূটনীতিক সূত্র থেকে জানা গেছে, ঢাকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ভারত সরকার ঢাকাস্থ হাইকমিশন এবং গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ করছে। এর বাইরেও ঢাকা থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করছে ভারত। সবগুলো তথ্যকে একত্র করে যাচাই বাছাই করে দেখা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, তথ্যর সঙ্গে দেখা হচ্ছে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী। তার সফর মূলত নির্ভর করে আছে রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার (কূটনৈতিক ভাষায়) সমাধান বা ঢাকার পরিস্থিতির সন্তোষজনক উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সফরে আসার সম্ভাবনা নেই নরেন্দ্র মোদির।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তার মতে, যে কোন দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের দ্বিপাক্ষিক সফরের জন্য অনেক আগ থেকেই প্রস্তুতি নেয়া হয়। এতে ক্ষেত্র বিশেষে ২ থেকে ৩ মাস পর্যন্ত সময় প্রয়োজন হয়।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। সফরের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে জুলাই মাসের প্রথম দিকের এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে। আলোচনা চলছিল ওই বছরের মার্চ মাস থেকেই।

ঢাকার অপর এক কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ভারতের রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের রয়েছে বিশেষ সম্পর্ক। কিন্তু সেই সম্পর্ক ভারতের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সাথে নেই। সেজন্য বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের টানা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ও থেমে থেমে চলা হরতালের সময় বাংলাদেশ সফরে এসে সেই বিশেষ সম্পর্কের তকমা দলের কাঁধে নিতে চাইছেন না তিনি। এটাই মনে করে অনেকে।

সূত্রটি জানায়, নরেন্দ্র মোদি দক্ষিণ এশিয়ার সকল দেশের সাথে সম্পর্ক চায়। বিশেষ কোন দলের সাথে নয়। এজন্য নতুন পররাষ্ট্র সচিব নিয়োগ দেয়ার পরেই সার্ক যাত্রায় পাঠানো হয় তাকে। চিরশত্রু হিসেবে বিবেচিত পাকিস্তানেও পাঠানো হয় সুব্রামানিয়ামকে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

Scroll to Top