গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কাল বুধবার দুর্নীতি মামলার ধার্য তারিখে আদালতে যাচ্ছেন না। তাঁর আইনজীবীসহ দলের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র থেকে এমন তথ্য জানা গেছে। আর সরকারি উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র বলছে, খালেদা জিয়া নিজে থেকে আদালতে না গেলে তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করতে পারে পুলিশ।
এর আগে জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালতে হাজির না হওয়ায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালত খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। একই সঙ্গে ৪ মার্চ পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন। গতকাল পর্যন্ত আদালতের পরোয়ানা সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ পায়নি বলে জানিয়েছেন পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার লুৎফুল কবীর।
তবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির চার দিন পর রোববার অন্য একটি মামলায় খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে তল্লাশি চালানোর যে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, তা ওই দিন রাতেই গুলশান থানায় পৌঁছেছে বলে লুৎফুল কবীর নিশ্চিত করেছেন।
সরকারি অন্য একাধিক সূত্র বলছে, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বুধবারের আগেই পুলিশের কাছে পৌঁছাবে বলে তারা আশা করছে।
এ অবস্থায় আগামীকাল জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়া আদালতে যাবেন কি না, জানতে চাইলে তাঁর অন্যতম আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে খালেদা জিয়া এর আগে আদালতে যাননি। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে এবারও তিনি যাবেন না। তা ছাড়া, যেহেতু খালেদা জিয়ার জামিন বাতিল করা হয়েছে, সেহেতু আদালতে হাজিরার প্রশ্নই আসে না।
তাহলে খালেদা জিয়ার অবস্থান কী হবে—এ প্রশ্নের জবাবে সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘তিনি যে রকম আছেন, সে রকমই থাকবেন।’
বিএনপির নেতাদের দাবি, খালেদা জিয়াকে তাঁর কার্যালয় থেকে বের করতে গত দুই মাসে সরকার একের পর এক নানা কৌশল নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এবং সর্বশেষ ওই কার্যালয়ে তল্লাশি চালানোর পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, খালেদা জিয়াকে জোর করে আদালতে হাজির করে ওই কার্যালয়ে তল্লাশি চালাতে পারে পুলিশ। তল্লাশির নামে ওই কার্যালয়ে থাকা বিএনপির নেতা ও কর্মকর্তাদের বের করে কার্যালয়টি বন্ধ করে দিতে পারে, যাতে খালেদা জিয়া আদালত থেকে জামিন পেলেও ওই কার্যালয়ে আর ঢুকতে না পারেন।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে গতকাল বিকেলে আওয়ামী লীগের এক যৌথ সভায় আদালতের পরোয়ানা অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে। ধানমন্ডির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সভা শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এ কথা জানান।
বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী ও কর্মচারী ছাড়া সেখানে অবস্থানকারী অন্যদের প্রায় সবার বিরুদ্ধেই মামলা আছে। তাই তাঁরাও উদ্বেগের মধ্যে আছেন। তাঁরা নানাভাবে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছেন, কবে নাগাদ তল্লাশি চালানো হতে পারে। যদিও ওই কার্যালয়ে থাকা বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিন্তা বা উদ্বেগের কিছু নেই। আমাদের চিন্তার গুরুত্বও নেই। তল্লাশির পরোয়ানায় আমরা বিস্মিত।’
গত ৩ জানুয়ারি থেকে গুলশানের ৮৬ নম্বর সড়কে নিজের কার্যালয়ে অবস্থান করছেন খালেদা জিয়া। সাধারণত হরতাল-অবরোধে খালেদা জিয়া বের হন না। ৩ জানুয়ারি কার্যালয়ে ঢোকার পর এখন পর্যন্ত তিনি বের হননি। ওই দিন থেকে ওই কার্যালয়ে অবস্থান করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও পুলিশের সাবেক আইজি এম এ কাইয়ুম, প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দীন দিদার ও শায়রুল কবির খান। শেষ তিনজন ছাড়া বাকিদের গত ১৬ ফেব্রুয়ারি গুলশানে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের নেতৃত্বাধীন মিছিলে ককটেল হামলার ঘটনায় করা মামলায় আসামি করা হয়েছে। আর, দিদার ও শায়রুল কবিরকে ২৩ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ীতে বাসে পেট্রলবোমা হামলার ঘটনায় করা মামলায় আসামি করা হয়েছে।
শাজাহান খানের মিছিলে ককটেল হামলার মামলায়ই আদালত থেকে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে তল্লাশির অনুমতি পেয়েছে পুলিশ। গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত পুলিশ কোনো তল্লাশি চালায়নি। সারা দিনে কার্যালয় এলাকায় বাড়তি কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থাও চোখে পড়েনি। যদিও রোববার রাতে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক প্রথম আলোকে বলেছিলেন, যখন প্রয়োজন মনে হবে, তখন ওই কার্যালয়ে তল্লাশি করা হবে।
গতকাল সকাল থেকে দেখা গেছে, ওই কার্যালয়ের মূল ফটকের সামনে চেয়ার-টেবিল নিয়ে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কয়েকজন সদস্য বসে আছেন। কার্যালয়ের উত্তর পাশে অলস সময় কাটান পুলিশের কয়েকজন সদস্য। সারা দিনে দলের কোনো নেতা-কর্মী বা অন্য কাউকে ওই কার্যালয়মুখী হতে দেখা যায়নি।
কার্যালয়ের সামনে কিছুটা নিরাপত্তা থাকলেও গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কে খালেদা জিয়ার বাসভবনের (ফিরোজা) সামনে গতকাল কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা চোখে পড়েনি। আগে পুলিশের সাতজন সদস্য খালেদা জিয়ার বাসার সামনে নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলেন। রোববার রাতে তাঁদের সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
সূত্রঃ প্রথমআলো