রোববার (৫ এপ্রিল) দুর্নীতি মামলায় আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিন পেয়ে বাসায় এলেন তিনি। ১২টা ১৮ মিনিটে তিনি বাসায় ঢোকেন।
গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কের ১ নম্বর বাড়িটিতে ২০১১ সালের ২১ এপ্রিল থেকে ভাড়া থাকছিলেন খালেদা। গত ৩ জানুয়ারি কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে বাসা ছেড়ে আসেন, এরপর আর ফেরার সুযোগ হয়নি এবং পরে নিজেই ফেরেননি।
টানা তিনমাসে গুলশান-২-এর ৮৬ নম্বর সড়কের রাজনৈতিক কার্যালয়ের বাইরে রোববারই প্রথম বের হন খালেদা জিয়া।
তার আগমন উপলক্ষে আগে থেকেই গুলশানের বাসাটি গুছিয়ে রাখা হয়। তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা সকালে ফুলের তোড়া আনেন খালেদাকে অভ্যর্থনা জানাতে।
২০১১ সালের ২১ এপ্রিল রাত সোয়া একটার দিকে এ বাসায় ওঠেন খালেদা জিয়া।
দলের সাবেক সংসদ সদস্য এবং শ্রম ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মেজর (অব.) কামরুল ইসলামের মায়ের নামে এই বাড়ি ‘ফিরোজা’। ‘ফিরোজা’র বর্তমান মালিক কামরুল ইসলামের ছেলে তানভীর ইসলাম। পিতা-পুত্র বর্তমানে আমেরিকায় আছেন বলে জানান তিনি।
‘ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ মঈনুল রোডের বাড়ি হারানোর স্মৃতি এখনো তাড়া করে খালেদা জিয়াকে’- জানিয়েছিলেন খালেদার এক সুহৃদ।
প্রয়াত স্বামী প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্মৃতিঘেরা মঈনুল রোডের ৬ নম্বর বাড়িটি হাতছাড়া হয় ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর। গৃহহারা হয়ে গুলশান কার্যালয়ে খুব কেঁদেছিলেন সেদিন খালেদা জিয়া। কার্যালয় থেকে বের হয়ে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারের বাসায় ওঠেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, খালেদা বাড়ি খোঁজার দায়িত্ব দেন ছোট ভাই ও উপদেষ্টা মেজর (অব.) সাঈদ এস্কান্দার, উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলী ফালু ও তৎকালীন মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে।
প্রথমদিকে গুলশান-২ আবাসিক এলাকায় প্রায় দুই বিঘা আয়তনের একটি বাড়ি, মহাখালী ডিওএইচএস’র ১০ নম্বর সড়কের ২০৬ নম্বরে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য জি এম ফজলুল হকের বাড়ি এবং সর্বশেষ মেজর (অব.) কামরুলের মায়ের বাড়িটি দেখা হয়।
নানা জটিলতা আর অবস্থানগত কারণে আগের দুটি বাড়ি পছন্দের তালিকা থেকে বাদ পড়ে।
কার্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথে খালেদারও পছন্দ হয় ‘ফিরোজা’। কামরুলের মায়ের মৃত্যুর পর বাড়িটি খালি পড়ে ছিল।
বাড়ি বিষয়ে ফালু ও তানভীরের (কামরুলের ছেলে, বর্তমান মালিক) বেশ কয়েকবার কথা হয়। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর সংস্কার কাজ শুরু হয়।
২০১০ সালের ১৪ নভেম্বরের একাধিক পত্রিকাসূত্রে জানা যায়, মঈনুল রোডের বাড়িতে ৬৭ জন স্টাফ, ৪৫টি কামরা, ১২টি বাথরুম, ৪টি রান্নাঘর, ১৮টি এসি, ৪৮টি সোফা, ৫টি ফ্রিজ ও ৬টি টিভি ছিল। যার চারভাগের একভাগ সুবিধাদিও নেই বর্তমান আবাসে।
১ মার্চ একদিকে খালেদার কার্যালয় তল্লাশির নির্দেশ দেন আদালত, অন্যদিকে খালেদার গুলশানের বাসার নিরাপত্তা সরিয়ে নেয় প্রশাসন।
‘লন্ডনে বাসরত বড় ছেলে তারেক রহমান ও প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকো, দুই পুত্রবধূ ও তিন নাতনীর ব্যবহারের কোন না কোনোসামগ্রী বাসাটিতে যত্নে রেখে দিয়েছেন খালেদা’- জানান এ বাসায় নিয়মিত যাতায়াতকারী মহিলাদলের এক নেত্রী।
অন্যদিকে খালেদা বাস শুরু করলে তার কার্যালয়টি ক্রমশ বসবাসের উপযোগী করা হয়। নিরাপত্তা বাড়াতে সীমানা প্রাচীরের ওপরে দেওয়া হয় কাঁটাতারের বেড়া, ঝালাই-মেরামতে মজবুত করা হয় ফটক, আনা হয় ফ্রিজার, খাট, দুইটি এয়ার কন্ডিশনার ও তার বাসার নিত্য ব্যবহার্য্য সামগ্রী।
২০০৮ সাল থেকে এই বাড়িটি কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছেন দলের চেয়ারপারসন। তখন থেকে গর্বেরও সীমা নেই রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান ইয়াহিয়ার।
তিনি সাবেক এমপি ও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক জাকারিয়া তাহের সুমনের ভাই। তাদের পিতা আবু তাহেরও কুমিল্লার বরুড়া থেকে একাধিকবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য।