চাপের মুখে গণমাধ্যম

মতিউর রহমান চৌধুরী বাংলা ভাষার জনপ্রিয় নিউজ শো ‘ফ্রন্টলাইন’-এর উপস্থাপক ছিলেন ৫ বছর। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার হতো সপ্তাহে তিন দিন। চলমান ঘটনাপ্রবাহ আলোচনা করতে রাজনীতিবিদ, নাগরিক সমাজের সদস্যবৃন্দ ও সাংবাদিকদের একসঙ্গে এনে অনুষ্ঠানটি খ্যাতি অর্জন করে। মি. চৌধুরী তার বিনয়ী কথন কিন্তু বলিষ্ঠ আচরণে নিজেকে তার সমসাময়িক অন্যদের থেকে স্বতন্ত্র করেছেন। আলোচকদের একে-অপরের ওপর চড়াও হওয়ার মতো কোন অনুষ্ঠান পরিচালনা করার পরিবর্তে তিনি অতিথিদের নিয়ে বাস্তবসম্মত আলোচনা সঞ্চালন করেছেন। যে সময়টায় বাংলাদেশের সম্প্রচার মাধ্যমের বেশিরভাগ নীরব হয়ে গেছে তখন চৌধুরীর এ অনুষ্ঠানের মতো টক শোগুলো ছিল সমালোচনামূলক সংবাদ কভারেজের সর্বশেষ জায়গাগুলোর একটি।
গত মাসে ‘ফ্রন্টলাইন’ বন্ধ করে দেয়া হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে চ্যানেলের চেয়ারম্যান বলেছেন ‘কারিগরি সমস্যার’ কারণে শোটি সাময়িকভাবে স্থগিত হয়েছে। কিন্তু সিপিজের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সফরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ঘটনার বিপরীত বিবরণ উঠে এসেছে। মতিউর রহমান চৌধুরীসহ অনেক সাংবাদিক দাবি করেছেন রাজনৈতিক কারণে শোটি স্থগিত করার প্রচেষ্টার পেছনে কর্তৃপক্ষের হাত রয়েছে। বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগের সপ্তাহগুলোতে বেসরকারি মালিকানাধীন বাংলাভিশন চ্যানেলকে তাদের টক শোকে কি কি বিষয় আলোচনার সুযোগ রয়েছে এবং কোন কোন সঞ্চালকে তাদের বাদ দেয়া উচিত সেই বার্তা দিয়ে কর্তৃপক্ষ হস্তক্ষেপ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে এমন রিপোর্ট গণমাধ্যমে আসে। কিন্তু হুকুম তামিল করতে অস্বীকৃতি জানান মি. চৌধুরী। ছয় সপ্তাহের বেশি সময় পরও শোটি বন্ধ রয়েছে। উত্তাল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশের স্বতন্ত্র গণমাধ্যম কি ধরনের চাপের মুখে রয়েছে- অনুষ্ঠানটি বন্ধ থাকাটা তার একটি ইঙ্গিত।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে হারিয়ে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় ফেরেন। এ দুই নেত্রীকে প্রায়ই গণমাধ্যমে ‘ব্যাটলিং বেগমস’ আখ্যা দেয়া হয়। ১৯৯০ সালে ১৫ বছরের সামরিক শাসনের সময়কাল সমাপ্ত হওয়ার পর থেকে তারা পালাবদল করে ক্ষমতায় এসেছেন। গত বছর হাসিনার পুনঃনির্বাচন বর্জন করে বিএনপি ও অন্যান্য দলগুলো। এটা নতুন করে রাজনৈতিক নাটকীয়তায় যোগ হয়েছে। হাসিনার প্রতিপক্ষরা দাবি করে নির্বাচনে বৈধতার অভাব ছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ করে দিতে তারা হাসিনার পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন।
অনেক সাংবাদিক আমাকে বলেছেন, এর পর থেকে রাজনৈতিক পরিবেশের অবনতি হয়েছে। বাংলাদেশের অন্যতম সর্বাধিক প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘সংসদে সত্যিকারের কোন বিরোধী দল না থাকায় সরকারের ওপর সংসদের এখন কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। আর বিচার ব্যবস্থা প্রসঙ্গে বলতে গেলে, নিম্ন আদালতগুলো সরকারের আঙুলের নিচে রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সত্যিকারের কোন ভারসাম্য ও নিয়ন্ত্রণ নেই যা হাসিনা ও খালেদাকে চরম ক্ষমতাধর করে তুলেছে। এসব ক্ষমতার লাগাম টেনে ধরতে গণমাধ্যমের টিকে থাকা।’
বিরোধী গণমাধ্যমগুলো টার্গেট করার পর এবং ক্ষমতার দৃশ্যপট থেকে রাজনৈতিক বিরোধীদের কার্যত নির্মূল করার পর হাসিনা সরকারকে চ্যালেঞ্জ এবং সমালোচনা করতে পারে এমন সর্বশেষ যেসব প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো রয়েছে তার মধ্যে একটি হলো স্বাধীন গণমাধ্যম। বাংলাদেশে সেটা মানুষের সামনে মূলত আসে টেলিভিশনের সংবাদ এবং সংবাদপত্রের মাধ্যমে। বিবিসির মতে বাংলাদেশে টিভি এখনও সব থেকে জনপ্রিয় মাধ্যম। আর বাংলা ভাষী পত্রিকাগুলো বড় নেতৃত্বের গৌরব করে- এসব পত্রপত্রিকাগুলো কখনও কখনও নানারকম এবং রাজনৈতিকভাবে মেরুকরণ রয়েছে। বাংলাদেশের পৌঁছুনোর প্রাক্কালে দেশটির অন্যতম প্রচারিক বাংলা দৈনিক প্রথম আলোর একটি মতামত-সম্পাদকীয়তে দেখলাম বলা হয়েছে, ‘সরকার তাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আর দায়িত্ব ছুঁড়ে ফেলেছে। এটা একটি কর্তৃত্বপরায়ণ পুলিশ রাষ্ট্রের ন্যায় আচরণ করছে। শাসকরা বিরোধীদের রাজনৈতিক অধিকার সম্পূর্ণ সঙ্কুচিত করে ফেলার মাধ্যমে তাদের নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে চেষ্টা করছে। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার করছে। ঢালাওভাবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে। আর ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। সঙ্কট সমাধা হওয়ার পরিবর্তে আরও গভীরে পতিত হচ্ছে।’
যে দিন সকালে আমি ঢাকা পৌঁছাই বিএনপি দেশব্যাপী হরতালের ডাক দেয়। কয়েক দিন ধরে তা চলে। এসব হরতাল প্রায়ই শহর বা দেশের বিভিন্ন অংশ বন্ধ করে দিয়ে পালন করা হয়। এর সঙ্গে চলে সহিংস প্রতিবাদ। এ দফায় বাসে পেট্রলবোমা আর রাজপথ সহিংসতার প্রাত্যহিক খবর আসে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকায় অবস্থানরত মার্কিনিদের শহরের নির্দিষ্ট কিছু স্থানে নিরাপদে থাকতে পরামর্শ দিয়ে সতর্কতা ইস্যু করে।
উত্তেজনাকর এ সময়ে আমি যেসব সাংবাদিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি তারা যেসব চাপের মুখে রয়েছে সেসব কথা বলেছেন। প্রথম আলোর এক প্রতিনিধি এবং সিপিজের ২০০২ সালের ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ফ্রিডম অ্যাওয়ার্ড জয়ী টিপু সুলতান বলেন, আমাদের দেশ বিভক্ত। আওয়ামী লীগকে যারা সমর্থন করেন না তারা হুমকির মুখে রয়েছেন। প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের সঙ্গে সকালের নাস্তার টেবিলে আলোচনা হয়। তার পত্রিকার চ্যালেঞ্জগুলো তিনি ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকতার জন্য পরিবেশ একেবারেই বন্ধুভাবাপন্ন নয়। বর্তমান সরকার মনে করে স্বতন্ত্র গণমাধ্যম তাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে।’ তিনি দাবি করেন, তার কর্মীদের প্রায়ই গোয়েন্দারা অনুসরণ করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের বিভিন্ন অংশে মতিউর রহমান এবং তার কর্মীদের বিরুদ্ধে কয়েক ডজন মামলার কাগজপত্র দেখান তিনি। এসব মামলায় মানহানি থেকে শুরু করে আদালত অবমাননার অভিযোগ রয়েছে। মি. রহমান ব্যাখ্যা করলেন, সাধারণত এসব অভিযোগের বর্ণনা প্রায়ই একইরকম হয়ে থাকে। আর মামলার বাদীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছিলেন  সরকারি আইনজীবী, আওয়ামী লীগ সমর্থক বা গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য।
ঢাকাভিত্তিক বৃটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের সাম্প্রতিক ঝঞ্ঝাটেও একই ধারা প্রতিফলিত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে রায়ের খবর সিপিজে প্রতিবেদনে আসে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে। বার্গম্যান আমাকে বলেন, ‘আইনি ব্যবস্থা নিতে সরকার সুযোগ খুঁজছে। সরকার এ যুক্তি দেখাতে পারে না যে তারা নয় আদালত এটা করছে। বেসরকারি ইংরেজি দৈনিক নিউ এজের প্রতিনিধি বার্গম্যান। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ ওয়ার ক্রাইম ট্রাইবুন্যাল শীর্ষক একটি ব্লগ লেখেন। এতে ৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া ও আদালত নিয়ে সমালোচনামূলক রিপোর্ট লেখেন তিনি। বার্গম্যান জানান, তাকে ৫০০০ টাকা জরিমানা বা ৭ দিনের কারাদণ্ড দেয় আদালত। তিনি ওই জরিমানা পরিশোধ করেন। বার্গম্যানের বিরুদ্ধে রায় নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে একটি বিবৃতিতে যেসব ব্যক্তিবর্গ, একাডেমিকস এবং পেশাদার ব্যক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন এবং আদালত অবমাননা আইনের সংস্কার আইনের আহ্বান জানিয়েছিলেন তাদের নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা বা আদালতে হাজির হতে বাধ্য করা হয়। আমার সফরের সময় এ ঘটনা ঘটে। জানুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত স্বাক্ষরকারীদের কাছ থেকে তাদের বিবৃতির বিষয়বস্তুর ব্যাখ্যা চান। এপ্রিল মাসে আদালতের কাছ থেকে সিদ্ধান্ত আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
হাসিনার সরকার গত দুবছর ধরে কিভাবে বিরোধী গণমাধ্যমকে নিশ্চুপ করিয়েছে সিপিজে তা নথিভুক্ত করেছে। ২০১৩ সালের এপ্রিলে বেসরকারি আমার দেশ দৈনিকের বিরোধীপন্থি সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টিকারী মিথ্যা ও অবমাননাকর তথ্য প্রকাশের অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও আনা হয় রাষ্ট্রদোহিতা এবং বেআইনি প্রকাশনার অভিযোগ। প্রায় দুবছর ধরে কারান্তরীণ রয়েছেন তিনি। এদিকে তার বিচার চলছে। ২০১৩ সালের মে মাসে পুলিশ দিগন্ত টিভি এবং ইসলামিক টিভি স্টুডিওগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয়। বিভ্রান্তকারী তথ্য সম্প্রচারের অভিযোগে চ্যানেলগুলোকে বন্ধ করে দিতে বাধ্য করা হয়। উভয় চ্যানেল তাদের কভারেজে ছিল বিরোধীপন্থি। এখনও চ্যানেল দুটি বন্ধ রয়েছে।
সরকার এছাড়াও গত বছর একটি সম্প্রচার নীতিমালা উপস্থাপন করে যেখানে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করে এমন কোন বিষয়বস্তু সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। একইসঙ্গে বাধ্যতামূলক করা হয় সরকারের দৃষ্টিতে জাতীয় গুরুত্ববহ অনুষ্ঠানগুলোর সম্প্রচার; উদাহরণস্বরূপ সরকারি নেতাদের বক্তব্য। নীতিমালা এখনও বাস্তবায়ন না হলেও, আমি যেসব সাংবাদিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি তাদের মতে এটা বার্তা নিয়ন্ত্রণে সরকারের ইচ্ছার ইঙ্গিত।
জানুয়ারি মাসে বেসরকারি টিবি চ্যানেল একুশে টিভির মালিক আবদুস সালামকে গ্রেপ্তারেও সরকারে এ ইচ্ছা স্পষ্ট হয়েছে। তাকে বানোয়াট অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। খালেদা জিয়ার লন্ডনপ্রবাসী ছেলে এবং দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য সম্প্রচারের পর উত্তাপ অনুভব করতে শুরু করে চ্যানেলটি। সংবাদ প্রতিবেদনগুলো অনুযায়ী তারেক তার বক্তব্যে হাসিনা-নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাতের আহ্বান জানান।
১৮ই ফেব্রুয়ারি হাসিনা সংসদে দ্য ডেইলি স্টারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার হুঁশিয়ারি দেন। নিষিদ্ধ ঘোষিত ইসলামপন্থি দল হিজবুত তাহরিরের একটি পোস্টারের ছবি প্রকাশ করার পর এ হুমকি দেন হাসিনা। ওই ছবির সঙ্গে শিরোনাম ছিল: ‘ফ্যানাটিকস রেইজ দেয়ার আগলি হেডস এগেইন’। ছবির ক্যাপশনে অংশবিশেষ হলো: দেশের রাজনৈতিক সঙ্কট ও সহিংসতার সুযোগ নিয়ে সশস্ত্রবাহিনীর মধ্যে অস্থিরতা উসকে দেয়ার প্রচেষ্টায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ইসলামি সংগঠন হিজবুত তাহরির রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পোস্টার ছেপে লাগিয়েছে।
হাসিনা অভিযোগ করেন যে ডেইলি স্টার ওই জঙ্গি গ্রুপকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে এবং তাদের বার্তা প্রচার করছে। সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয় সংসদে হাসিনা বলেন, হিজবুত তাহরিরের পোস্টার পেপারে ছাপিয়ে তাদের যারা সহায়তা করছে আমরা তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেব। তারা ইতিবাচকভাবে লিখেছে নাকি নেতিবাচকভাবে লিখেছে আমার কিছু এসে যায় না। কিন্তু ওই পোস্টারের ছবি ছাপিয়ে যেটা কোন মনোযোগই কাড়তো না, পত্রিকাটি জঙ্গি উদ্দেশে সহায়তা করেছে।
দুদিন পর পত্রিকাটির সম্পাদক প্রথম পাতার মতামত সম্পাদকীয়তে লিখেছেন, আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি অবিবেচনাপ্রসূত। আর যা বলা হয়েছে তা যদি বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে বাংলাদেশে কোন মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যম বেঁচে থাকবে না।  হাসিনার বক্তব্যের কিছু সময় পরই তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় মি. আনামের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। তথ্য-প্রযুুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা জয় ফেসবুকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান। এদিকে, তথ্য মন্ত্রণালয় ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে এক বিবৃতিতে গণমাধ্যমের সরকারের হস্তক্ষেপের বিষয় প্রত্যাখ্যান করে। সজীব ওয়াজেদ মাহফুজ আনামের গ্রেপ্তার দাবির কিছু সময় আগে আমি মি. আনামের সঙ্গে কথা বলি। ঢাকায় তার কার্যালয়ে আমাদের বৈঠকে তিনি বলেন, তিনি শুধু কর্তৃপক্ষের চাপ নিয়েই উদ্বিগ্ন নন, বরং গণমাধ্যম স্বাধীনতার সার্বিক পরিবেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, ‘গত বছরে মিডিয়া সেলফ-সেন্সরশিপ ধারায় চলে গেছে। সরকার সমালোচনামূলক কণ্ঠের প্রতি সম্পূর্ণ অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছে।’
এ অসহিষ্ণুতা সরকার পেরিয়ে বাইরেও বিস্তৃত হয়েছে। আমি বাংলাদেশ ছাড়ার কিছুদিন পর বাংলাদেশী-মার্কিন ব্লগার অভিজিৎ রায় এবং রাফিদা আহমেদ বন্যা অজ্ঞাত হামলাকারীদের দ্বারা হামলার শিকার হন। এতে অভিজিৎ মারা যান আর তার স্ত্রী মারাত্মক আহত হন। অভিজিৎ ইসলামী মৌলবাদ নিয়ে স্পষ্টবাদী সমালোচক ছিলেন বলে বলা হয়। আর তিনি উদারমনা, প্রগতিশীল ইস্যু নিয়ে লেখালেখি করেছেন। একমাস পেরিয়ে গেছে। তার পরিবার উদ্বেগ জানিয়েছে যে, হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনতে অগ্রগতি হয়েছে সামান্যই। ধর্ম নিয়ে মন্তব্যকারী ব্লগার আর সমালোকদের বিরুদ্ধে একটি সহিংস ধারার প্রতি ইঙ্গিত দেয় তার হত্যাকাণ্ড। মাহফুজ আনাম আমাকে বললেন, মুক্ত ও স্বাধীন সমাজের জন্য ধ্বংস্বাত্মক এক বিশ্বে আমরা বাস করছি।
(কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট, সিপিজের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত লেখার অনুবাদ। লেখক সুমিত গালহোত্রা সিপিজের এশিয়া কার্যক্রমের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট। অতীতে তিনি সিএনএন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কাজ করেছেন।) মানবজমিন

Exit mobile version