গতকাল ব্রাসেলসে ইইউ পার্লামেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক উপকমিটির আলোচনায় এসব কথা বলা হয়। এতে গত ১৬ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সফর করে যাওয়া কমিটির সদস্যরা তাদের অভিমত ব্যক্ত করেন। ক্রিশ্চিয়ান ড্যান প্রেদার নেতৃত্বে ইপির মানবাধিকার বিষয়ক উপকমিটির এ প্রতিনিধি দলে ছিলেন জোসেফ ওয়েডেইনহোলজার ও ক্যারল কারস্কি। তারা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিদল, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং তৈরী পোশাক সংশ্লিষ্ট শ্রমিক, মালিক ও ক্রেতা সংগঠনের সাথে আলোচনা করেছেন।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের আলোচনায় সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ার বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করেন জোসেফ ওয়েডেইনহোলজার। তিনি বলেন, আগামী কয়েক সপ্তাহে কিছুই পরিবর্তন হতে যাচ্ছে না। এ কারণে উত্তেজনা বেড়ে যেতে পারে, যা গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আমার ব্যক্তিগত অভিমত, বিরোধী দলকে অন্তর্ভুক্ত না করলে তারা সাইডলাইনে চলে যেতে পারে। এই শূন্যতা অন্য শক্তি পূরণ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সন্ত্রাসবাদের বড় ঝুঁকি রয়েছে।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সমঝোতার পথগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
ওয়েডেইনহোলজার বলেন, ৫ জানুয়ারির পর থেকে বাংলাদেশের সর্বত্র সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। ৬০ জনেরও বেশি মানুষ এতে নিহত হয়েছে। বিরোধী দলের সাত থেকে ১০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ধরনের বিরোধ নিষ্পত্তি করা কঠিন। দুই দলই নিজ অবস্থানে অনড়। সত্য কথা বলতে কি আমরা সমঝোতার কোনো সুযোগ দেখিনি। সমঝোতার কোনো পথও খুঁজে পাইনি। প্রফেসার ইউনূস, সাংবাদিকসহ সবাই বলেছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহে কিছুই পরিবর্তন হবে না।
তিনি বলেন, আগামী কয়েক মাস বিপজ্জনক। চরমপন্থী গ্রুপগুলো সক্রিয় হতে পারে। তারা সরকারকে সহযোগিতা করতে চাইবে না। এটা আমাদের জন্য সত্যিই উদ্বেগের বিষয়। এ কারণে দেশটির সাথে আরো যোগাযোগ রক্ষা করা প্রয়োজন।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির প্রসঙ্গ তুলে ওয়েডেইনহোলজার বলেন, এটা কার্যকর করা হলে উত্তেজনা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। গ্রেফতারটা খুবই সমস্যাসঙ্কুল হবে।
ওয়েডেইনহোলজার বলেন, বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি টানটান উত্তেজনাকর, সার্বিক পরিস্থিতি নেতিবাচকই বলতে হবে। বিভিন্ন পক্ষের সাথে আমাদের মোট ২৩টি বৈঠক হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে ঢাকার বাইরে যেতে পারিনি। রানা প্লাজা ট্র্যাজিডি-পরবর্তী বাংলাদেশের পোশাক কারখানার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ আমাদের সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। এ ক্ষেত্রে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ট্রেড ইউনিয়নগুলোর অবস্থা এখনো প্রাথমিকপর্যায়ে রয়েছে। নাগরিক অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা খতিয়ে দেখেছি। সংবাদমাধ্যম বেশ সক্রিয়। তবে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর নজর রাখতে হবেÑ এটার অবস্থা সন্তোষজনক নয়।
তিনি বলেন, বিদেশী অনুদান অধ্যাদেশের মাধ্যমে এনজিওগুলোর অর্থপ্রাপ্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হচ্ছে। রশিয়াসহ কয়েকটি দেশের ক্ষেত্রে আমাদের এ ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। আমাদের বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদী কর্মকাে অর্থায়ন ঠেকাতে এসব বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
ওয়েডেইনহোলজার বলেন, মৃত্যুদে র কথা আমরা তুলেছি। বলেছি, ইইউর দৃষ্টিকোণ থেকে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও বিচারপ্রক্রিয়া নিয়েও কথা হয়েছে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের আলোচনায় সংবাদ মাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ, নারী, শিশু ও শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়গুলো আলোচনায় এসেছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা ও গণগ্রেফতার উদ্বেগজনক। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অনৈক্য সংলাপকে কঠিন করে তুলেছে। মানবাধিকার, নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) একসাথে কাজ করে। সামনের দিনগুলোতেও এসব ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করা জরুরি। বাংলাদেশের সাথে ইইউ’র বাণিজ্যিক সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। নিরাপত্তা ইস্যুতেও দুই পক্ষের মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক রয়েছে। সহযোগিতামূলক সম্পর্কের পাশাপাশি কোনো কারণ দেখা দিলে ইইউকে উদ্বেগও জানাতে হবে।