সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলের নাটকীয় সিদ্ধান্ত শিগগিরই। চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাবার বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিলেও এখনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। দলের ও জোটের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে আলাপ করেছেন খালেদা জিয়া। এ ব্যাপারে আজকালের মধ্যেই নিজেদের অবস্থান জানাবে বিএনপি।
তফসিল ঘোষণার পাঁচদিনেও বিএনপি তাদের অবস্থান ঘোষণা না করলেও ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই সামনে এগোচ্ছে দলটি। তারই অংশ হিসেবে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টির দাবিতে কিছু বিষয়ে আলাপ করতে নির্বাচন কমিশনে যাবে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল।
গতরাতে চেয়ারপারসনের সঙ্গে তার কার্যালয়ে অবস্থানরত দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান গণমাধ্যমকে জানান, আজকালের মধ্যেই নিজেদের অবস্থান জানাবে বিএনপি। এছাড়া চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান জানান, বিএনপি সবসময় নির্বাচনের ব্যাপারে ইতিবাচক। এ নিয়ে নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে দু-একদিনের মধ্যেই নিজেদের অবস্থান জানাবে বিএনপি। সিটি নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলে বা কাউকে সমর্থন দেয়া হলে পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন পরামর্শ নিয়ে একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনেও যেতে পারে। তবে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
দলীয় সূত্র জানায়, সিটি নির্বাচনের তফসিল নিয়ে আপত্তি রয়েছে বিএনপির। তারা মনে করে, নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি না করে তড়িঘড়ি করেই তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। এখন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিলে তফসিল পেছানো, নির্বাচনকালীন সেনাবাহিনী মোতায়েন, বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানী বন্ধ, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার, নির্বাচনী প্রচারের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি, দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সব কার্যালয় খুলে দেয়া এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিশ্চিত করাসহ কিছু বিষয়ে ইসির কাছে দাবি জানাবে। এদিকে অতীতে নির্বাচন বর্জন পরবর্তী অভিজ্ঞতা ও বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিটি নির্বাচনকে ইতিবাচকভাবেই দেখছে বিএনপি। ইতিমধ্যে দলের নেতাকর্মী ও পেশাজীবী মহলের কাছে মতামত নেয়া হয়েছে। তা বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে তিন সিটিতে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকাও প্রণয়নের কাজ চলছে।
সূত্র জানায়, ঢাকা ও চট্টগ্রামে দলের নেতাদের নিয়ে একটি এবং কৌশলগতভাবে বিকল্প প্রার্থীদের নিয়ে আরেকটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়া বিএনপির জন্য শেষ পর্যন্ত কতটা লাভজনক হবে, প্রার্থীরা অবাধে প্রচার-প্রচারণার কতটা সুযোগ পাবেন, সরকার ও প্রশাসনের তরফে কেমন আচরণ করা হতে পারে এবং চলমান আন্দোলনে এর কতটা প্রভাব পড়বে তা নিয়ে বিএনপিতে চলছে শেষ মুহুর্তের হিসাব-নিকাশ। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলাপে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে আশ্বস্ত হতে পারলে দলের প্রার্থী দেয়া হতে পারে। এছাড়া নির্বাচনের পাশাপাশি আন্দোলন অব্যাহত রাখা বা শেষ পর্যন্ত দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটাতে না পারলে সে ক্ষেত্রে বিকল্প প্রার্থীদের সমর্থন দিতে পারে বিএনপি।
দলীয় সূত্র জানায়, বিকল্প প্রার্থী সমর্থন দেয়া হলে ঢাকা উত্তরে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক কারাবন্দি মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা দক্ষিণে বিকল্প ধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ছেলে মাহী বি চৌধুরী এবং চট্টগ্রামে মনজুর আলমকেই সমর্থন দেয়া হতে পারে। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিরোধী জোটের শীর্ষ নেতৃত্বের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের উপর।
বিএনপির কয়েকটি সূত্র জানায়, চলমান আন্দোলনের ট্র্যাক পরিবর্তনের একটি উপলক্ষ্য হিসেবেও বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে ভাবা হচ্ছে সিটি নির্বাচনকে। বিএনপির কয়েক নেতা জানান, নির্বাচনে গেলে বয়কটের পথ খোলা রাখবে বিএনপি। সরকারের আচরণ দেখে যদি মনে হয় তারা নির্বাচনে কারচুপি বা তাদের প্রার্থীকে জয়ী করতে যেকোনো পন্থা অবলম্বনে মরিয়া সেক্ষেত্রে বিএনপি তাৎক্ষণিকভাবে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেবে। ওদিকে সমমনা ও শুভাকাঙ্ক্ষী বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে নির্বাচন পরিচালনায় একটি মঞ্চ তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিশিষ্ট নাগরিক ও পেশাজীবীদের এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। আজ-কালের মধ্যেই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।মানবজমিন
মেহেদী হাসান