দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত ব্লগার ওয়াশিকুর রহমানের ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে চলছে নানামুখী বক্তব্য। মুক্ত চিন্তার একজন ব্লগার হিসেবে এরই মধ্যে অনেকের কাছেই পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন ওয়াশিকুর।
তাকে কী আসলেই তার মতামতের জন্য উগ্রপন্থীদের কেউ খুন করেছে না কী অন্য কোন ঘটনা আছে এর পেছনে পুলিশি তদন্তের পরই হয়তো তা পরিস্কার হবে।
অনেকেই এখন ঘাটতে শুরু করেছেন কী লিখতেন ওয়াশিকুর তার ফেসবুকে। জিনিউজ এর পাঠকদের জন্য ওয়াশিকুরের কিছু ফেসবুক স্ট্যাটাস হুবহু তুলে ধরা হলো:
২৭ মার্চ ২০১৫ বেলা ২টা ৭ মিনিটে দেয়া স্ট্যাটাস:
এক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজী মুমিনকে বললাম হাজার দশেক টাকা দিতে পারবে কিনা? ৬ মাসের মধ্যে টাকা তো শোধ দিবই উপরি হিসেবে তার যাবতীয় পাপ গ্রহন করবো আর নিজের একাউন্টে পুণ্যি থাকলে সব দিয়ে দিবো। মুমিন রাজি হলো না।
মুমিনদেরও আজকাল ঈমান নেই!
২৬ মার্চ ২০১৫ বেলা ১টা ৪৪ মিনিটে দেয়া স্ট্যাটাস:
আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস।
মোল্লা স্বাধীন, জঙ্গি স্বাধীন, ছাগু স্বাধীন, মুমিন স্বাধীন, দুর্নীতিবাজ স্বাধীন, রাজনৈতিক নেতা স্বাধীন, পাতি নেতা স্বাধীন, ধর্ষক স্বাধীন, সামরিক বাহিনী স্বাধীন, সুশীল সমাজ স্বাধীন, পিনাকী স্বাধীন, শফি হুজুর স্বাধীন, দলদাস স্বাধীন, গার্মেন্টস মালিক স্বাধীন, লঞ্চ মালিক স্বাধীন…
স্বাধীন নয় কৃষক-শ্রমিক,
স্বাধীন নয় কথিত সংখ্যালঘু-আদিবাসী,
স্বাধীন নয় মুক্তচিন্তার মানুষ,
স্বাধীন নয় মানুষ হতে চাওয়া মানুষগুলো…
২৪ মার্চ ২০১৫ রাত ৮টা ১০ মিনিটে দেয়া স্ট্যাটাস:
ভারতীয় সুপ্রীম কোর্ট আজ তথ্য-প্রযুক্তি আইনে বিতর্কিত ৬৬এ ধারা বাতিল করলো। অর্থাৎ, অনলাইনে লেখালেখির জন্য আর গ্রেফতার করা হবে না কাউকে।
-বরিশালের বি এম কলেজের এক ছাত্র কাল্পনিক স্রষ্টা আল্লাহর বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়াতে তার শাস্তির দাবীতে বায়বীয় অনুভূতি তাড়িত শিক্ষার্থী (!) রা বিক্ষোভ করেছে। কলেজ অধ্যক্ষ অভিযুক্ত ছাত্রের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যাবস্থা নেওয়া আশ্বাস দিয়েছে। ছেলেটি ইতোমধ্যে আত্নগোপনে চলে গেছে। তার শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত, জীবন হুমকির মুখে। কাল্পনিক স্রষ্টার মর্যাদা একটা জীবনের চাইতে বড় হয়ে গেল।
জঙ্গিরা ঘোষণা দিয়েছে ২০২০ সালের মধ্যে ইসলামী বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছে অপরদিকে শেখ হাসিনা ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কোনটা বাস্তবায়িত হবে বলে মনে করেন?
২১ মার্চ ২০১৫ রাত ৯টা ৪০ মিনিটে দেয়া স্ট্যাটাস:
নিজের ব্যর্থতা নিয়ে মন খারাপ করো না, অনেক মানুষের এর চেয়ে অনেক বেশি ব্যর্থতা থাকে।
-তার মানে নিজের কোন সফলতা নিয়েও খুশি হওয়া যাবে না! অনেক মানুষের এর চেয়ে বেশি সফলতা থাকে।
১৮ মার্চ ২০১৫ সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে দেয়া স্ট্যাটাস:
মুতা বিবাহের মত রেল ভ্রমন বিবাহ চালু করা দরকার। বিয়ে করে ট্রেনে চড়বে। যাত্রা শেষে আপনা আপনি তালাক হয়ে যাবে।
৫ই মার্চ ২০১৫ বেলা ২টা ৪৬মিনিটে দেয়া স্ট্যাটাস:
‘ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের সংঘর্ষ নেই’
অবশ্য এই বিজ্ঞান জোকার নালায়েকের বিজ্ঞান। যেই বিজ্ঞানে মনে করা হয় বিজ্ঞানীরা বসে বসে ধর্মগ্রন্থ পড়ে সব আবিষ্কার করে।
আর যেই বিজ্ঞান অনুসন্ধিৎসু, প্রশ্ন তুলে, সংশয়ী হতে শেখায়, মহাবিশ্ব সৃষ্টির জন্য স্রষ্টার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করে, বিবর্তনের কথা বলে সেই বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের অবশ্যই সংঘর্ষ আছে।
৩মার্চ ২০১৫ রাত ১২টা ৪৭ মিনিটে দেয়া স্ট্যাটাস:
ইসলামী মতে কেয়ামতের দিন আলাহ মীযান নিয়ে পাপপুণ্যের ওজন করবে। আমাদের শুষিলরা দুনিয়াতেই অদৃশ্য মীযান হাতে অপরাধ মাপে। এই মীযানের মাপদণ্ডে সবচেয়ে ভারী অপরাধ হলো ধর্মকে গালাগাল।
তাই তারা একপাল্লায় উগ্র আস্তিকদের জঙ্গিবাদ, হত্যা, ধর্ষণ, হিল্লা, সাম্প্রদায়িকতা উঠিয়ে অন্য পাল্লায় উগ্র নাস্তিকদের গালাগাল দিয়ে ব্যালেন্স সমান দেখিয়ে দাবী করে উগ্র নাস্তিক উগ্র আস্তিক দুইই সমান অপরাধী।
অতপর শুষিল চুতিয়াদের কোন অবদানকে বিশ্বাসীরা অস্বীকার করবে?
২রা মার্চ ২০১৫’র স্ট্যাটাস:
‘মেয়েরা পর্দা না করলে তো ধর্ষণ হবেই’
‘লেখায় পর্দা না করলে তো কোপ খাবেই’
আপনি এই দুটি বাক্যের একটি সমর্থন করেন মানেই আপনি বলদা। আর আপনার এই বলদামিকে লাত্থি মেরে অনুভূতি নিহত করাই আমার লক্ষ্য।
১লা মার্চ ২০১৫’র স্ট্যাটাস:
যে গ্রন্থের ‘ভুল ব্যাখ্যায়’ মানুষ মরে কিন্তু ‘সঠিক ব্যাখ্যার’ কোন প্রয়োগ বা উপযোগীতা থাকে না সেই গ্রন্থ নিষিদ্ধ হোক।
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫’র স্ট্যাটাস:
এক থাবা বাবার মৃত্যু হাজার থাবা বাবা জন্ম দিয়েছে,
এক অভিজিৎ রায়ের মৃত্যু লাখো অভিজিৎ রায়কে জন্ম দিবে।
কলম চলবে, চলতেই থাকবে। তোদের বিশ্বাসের মৃত্যু না ঘটা পর্যন্ত।
ইসলাম ধ্বংস হোক,
ইসলাম ধ্বংস হোক,
ইসলাম ধ্বংস হোক…
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫’র স্ট্যাটাস:
মুমিনরা নিজেদের মশা-মাছি মনে করে তাই নারীর শরীর পর্দা আবৃত রাখার দাবী তোলে,
-তাহলে মুমিনরা নারীদের চুল ঢেকে রাখার কথা বলে কেন? তারা কি নিজেদের উকুন মনে করে?
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫’র স্ট্যাটাস:
ভাগ্য ভাল এখনো গন্ধ ধারনের প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয় নি।
নাহলে ছাগুর গন্ধে অনলাইনে আসাই যেত না। আর টিভি দেখা যেত না সুশীল শুয়োড়দের গন্ধে…
১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫’র স্ট্যাটাস:
নতুন কোন উপাদান আসলে মুমিনরা প্রথমে তা গ্রহন করতে অস্বীকার করে এবং দাঁত খিচিয়ে বলে, মুসলিমদের ইসলাম থেকে দূরে সরানোর জন্য ইহুদী-নাসারাদের ষড়যন্ত্র।
অনেক পরে গ্রহন করতে বাধ্য হলে দাঁত কেলিয়ে বলে এটা মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান। একান্তই যদি মুসলিম বিজ্ঞানীর সাথে যোগসূত্র স্থাপন করা সম্ভব না হয় তাহলে বলে, বিজ্ঞানীরা সব কোরান পড়ে আবিষ্কার করে…
উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর শাহবাগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়কে ও ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মিরপুরে ব্লগার রাজিব হায়দারকে কুপিয়ে হত্যা করার রেশ কাটতে না কাটতেই দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হলো ব্লগার ওয়াসিকুর রহমান (২৭)।
রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকা থেকে সোমবার (৩০ মার্চ ২০১৫) সকাল ১০টার দিকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশের শরীরে চাপাতির আঘাতের চিহ্ন ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ওয়াসিকুরের চাচাতো ভাই হেলালের দেওয়া তথ্যমতে, ওয়াসিকুরের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর গ্রামে। মাস্টার্স শেষ করার পর ওয়াসিকুর মতিঝিলের ফারইস্ট এভিয়েশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকে আটক করা হয়েছে। এদের একজন মিরপুর দারুস সালাম মাদ্রাসার ছাত্র আরিফুর রহমান। অন্যজন চট্টগ্রামের হাটহাজারি মাদ্রাসার ছাত্র জিকির উল্লাহ। এ ঘটনায় একজন পালিয়ে যায় তার নাম তাহের।