আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে গিয়ে কোনো ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড না করে ইতিবাচক প্রচারণার মাধ্যমে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্যে দলীয় সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে নেতিবাচক প্রচারণা থেকে বিরত থাকারও কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় সংসদ ভবনে সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় তিনি এসব নির্দেশনা দেন বলে একাধিক বৈঠকসূত্র রাইজিংবিডিকে নিশ্চিত করেছেন।
সূত্র জানায়, সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় সংসদ সদস্যদের আচরণবিধি মেনে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা ও অপকর্ম তুলে ধরে জনগণের মন জয় করে ভোট চাওয়ার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা।
এ ছাড়া সংসদ ভবনের গেটে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘শেখ হাসিনা দলীয় এমপিদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানোর নির্দেশনা দিয়েছেন।’
বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট চলমান হরতাল-অবরোধের নামে দেশব্যাপী যে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে তার বিরুদ্ধে জনগণ ভোটে জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে। এ জন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। আন্দোলনের নামে তাদের নেতিবাচক কর্মকা-গুলো জনগণের মধ্যে তুলে ধরতে হবে। এ লক্ষে আসন্ন তিন সিটি নির্বাচনে দল সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলদের বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’
দলীয় সূত্র আরো জানান, বৈঠকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এবং বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘সিটি নির্বাচনী এলাকায় যে সকল জেলার আঞ্চলিক জনসংখ্যার আধিক্য আছে সেসব এলাকার সংসদ সদস্যদের সেখানে কাজ করতে হবে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনটা আমাদেরকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিতে হবে। এজন্য এমপি-নেতাদের ঘরে বসে থাকলে চলবে না। প্রতিটি ভোটারের কাছে গিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের নৈরাজ্য এবং বর্তমান সরকারের উন্নয়ন-সাফল্যেগুলো তুলে ধরতে হবে।’
এরপর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের শান্তির পক্ষে ভোটযুদ্ধ। বিএনপি-জামায়াত জোট যে আন্দোলনের নামে সহিংসতা-নাশকতা-মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করছে, এসব বিষয় নির্বাচনী প্রচারে জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। যাতে ভোটাররা সচেতন হয়ে সন্ত্রাসী-নাশকতাকারী ও খুনীদের না বলে আমাদের পক্ষে অর্থাৎ শান্তি ও গণতন্ত্রের পক্ষে ভোট দেয়।’
বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস সমস্যার সমাধান, হাতিরঝিলসহ রাজধানী ঢাকার বৈপ্লবিক উন্নয়ন সাধনের বিষয়গুলোও ঢাকার ভোটারদের সামনে তুলে ধরারও নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা।
বৈঠকে বলা হয়, ঢাকা মহানগরীর ১৫টি নির্বাচনী এলাকায় ভোটকেন্দ্র ভিত্তিক কমিটি গঠন করা হবে। সংসদ সদস্যরা এ সব টিমে বিভক্ত হয়ে প্রচার চালাবেন। আর কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা পুরো নির্বাচনগুলো মনিটরিং করবেন। তবে কোনোভাবেই নির্বাচনী আচরণবিধি যাতে লঙ্ঘিত না হয় সেজন্য মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদেরও সতর্ক করা হয়।
কাউন্সিলর পদে একাধিক প্রার্থীতা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘এক একটি ওয়ার্ডে ৭/৮ জন করে দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছে। এজন্য একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে একক প্রার্থী নিশ্চিত করার যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে।’
ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘ঢাকা উত্তরের চাইতে দক্ষিণে দলের মেয়র প্রার্থীকে বিজয়ী করতে বেশি পরিশ্রম করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে আরো বক্তব্য রাখেন দলের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ও প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, আন্তর্জাতিক সম্পাদক ও প্রাক্তন বাণিজ্যমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, হুইপ আতিউর রহমান আতিক প্রমুূখ।