নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে চলমান গ্রেফতার অভিযানের পূর্বে ৯টি নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এই নির্দেশনা জারি করে।
এরপর তা ডিএমপির বিভিন্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।
সম্প্রতি কতিপয় ঘটনায় পুলিশের কিছু সদস্য গ্রেফতার বাণিজ্যে জড়াচ্ছেন। বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ আসছে যে, গ্রেফতার অভিযানে কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিরপরাধ ব্যক্তিরাও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে এই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
নির্দেশনায় মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দেয়া হয়, কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যাতে হয়রানিমূলকভাবে গ্রেফতার না হন সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। আসল অপরাধীরা যাতে ছাড়া না পায় তার নিশ্চয়তা বিধানও করতে হবে।
গত ৫ জানুয়ারির পর থেকে চলমান অবরোধ ও হরতালে একের পর এক পেট্রলবোমা হামলা, ককটেল নিক্ষেপ, ট্রেনে নাশকতা করে আসছে দুর্বৃত্তরা। আর এই নাশকতায় আগুনে পুড়ে প্রাণ হারাচ্ছে অনেকেই। এছাড়াও দগ্ধ হয়েছেন আরো অনেকে। এই দগ্ধদের কান্নায় ভারি হচ্ছে হাসপাতালের বার্ন ইউনিট। এ ধরনের নাশকতা প্রতিরোধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অভিযান চলছে।
পুলিশের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নিরপরাধ কোনো ব্যক্তি যাতে হয়রানিমূলকভাবে গ্রেফতার হয়ে থানায় সোপর্দ না হন এ বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা জরুরি। ব্লক রেইড বা নাশকতামূলক কর্মকা-ে সংশ্লিষ্ট ঘটনাস্থল থেকে কোনো ব্যক্তিকে আটকের পর স্থানীয় ডিসি, এডিসি ও এসি যাচাই করে নিরপরাধ ব্যক্তিকে হয়রানি না করার বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। অন্যায়ভাবে বা কারও মাধ্যমে প্ররোচিত হয়ে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা যাবে না। প্রতিদিন থানা জিডি ও হাজত রেজিস্ট্রার পর্যালোচনা করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের থানায় নেয়ার পর সঠিকভাবে রেজিস্ট্ররভুক্ত হয়েছে কি-না তা পর্যবেক্ষণ করবেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। জিডি ও হাজত রেজিস্ট্রার ছাড়া যাতে গ্রেফতার হওয়া কোনো ব্যক্তি থানা-হাজত কিংবা অন্য কোনো কক্ষে অবস্থান না করে সে ব্যাপারটি ডিসি, এডিসি ও এসিকে জানাতে হবে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়মিত তদারকি করবেন।
নির্দেশনায় আরো বলা হয়, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কোনো দল কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ডিসিকে জানাতে হবে। ডিসি বিষয়টি অবহিত করবেন অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি অ্যান্ড প্রসিকিউশন) ও যুগ্ম কমিশনারকে (ডিবি)। বেআইনিভাবে কোনো ব্যক্তিকে যাতে ডিবি কার্যালয়ে অন্তরীণ করা না হয় তা অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি অ্যান্ড প্রসিকিউশন), যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) ও সংশ্লিষ্ট সব ডিসি নিশ্চিত করবেন। পুলিশের ভাবমূর্তি ও সরকারের সুনাম রক্ষা করতে হবে। চলমান সন্ত্রাসী ও নাশকতা দমন অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ হয় এমন কোনো কর্মকা-ে কেউ জড়ালে বিভাগীয় কঠোর শাস্তি ও ক্ষেত্র বিশেষে ফৌজদারি আইনের আওতায় নেয়া হবে। এমনকি যুগ্ম কমিশনার এবং তার চেয়ে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিজ নিজ অধীনস্থ ইউনিটে আকস্মিক পরিদর্শন করবেন। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি হয়রানিমূলক গ্রেফতারের শিকার হচ্ছেন কি-না তা তদারকি করবেন।
এ বিষয়ে পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, চলমান অবরোধ-হরতালের নামে সন্ত্রাসীদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেবে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের প্রতিহত করতে সর্বোচ্চ কঠোর হবে পুলিশ-র্যাব ও বিজিবি। মাঠপর্যায়ে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সেই ধরনের নির্দেশনা দেয়া আছে। তবে নৈরাজ্যকারীদের প্রতিহত করতে গিয়ে যাতে নিরপরাধ কেউ পুলিশের অপেশাদার আচরণের শিকার না হন সেটিও নিশ্চিত করতে চান দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
সূত্রঃ শীর্ষ নিউজ