ফকিরাপুলে সাত টুকরা লাশ উদ্ধার : রাতভর নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়

29

রাজধানীর ফকিরাপুলে সুমী আক্তার নামে এক গৃহবধূকে যৌন নির্যাতনের পরে হত্যা করে লাশ টুকরা টুকরা করে ফেলে দেয়ার ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে আরো ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তারা হলেন- সাইদুল ইসলাম (২৭), হানিফ (২৬), রাতুল আহমেদ (২৩), নূরুন্নবী শাওন (১৯), সুজন (২৩), সুমন ওরফে তোতলা সুমন (২৪)। এসময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ছুরি, একটি চাপাতি, কাগজের তৈরি বল, কাঠের গুড়ি, কেরোসিনের বোতল, রক্তমাখা জামা-কাপড় উদ্ধার করা হয়।
সোমবার সাড়ে এগারটার দিকে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন- হত্যার পর পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশও ছায়া তদন্ত শুরু করে।
তিনি জানান, এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল ৮ জন। এরা সবাই মাদক ব্যব্সায়ের সাথে জড়িত। নিহত সুমী মাঝে মাঝে পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করত। যে কারণে গ্রেফতারকৃতদের তার প্রতি আক্রোশ ছিল।
ঘটনার দিন তারা মন্টিদের বাড়ির ছাদে নেশা করছিল। এসময় সুমীকে বাড়ির বাইরে যেতে দেখে পুলিশকে তাদের ব্যাপারে খবর দেয়া হচ্ছে বলে সন্দেহ হয়। এরপর নিচে গিয়ে তারা সুমীকে ছাদে ধরে নিয়ে আসে। এরপর তার মুখে টেপ পেঁচিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত যৌন নির্যাতন চালায়। রাত সাড়ে তিনটার দিকে সুমিকে হত্যা করে লাশ টুকরা করে কেটে ফেলে।
এ ব্যাপারে চারজন আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন বলে জানান এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

এর আগে গত শনিবার সুমী হত্যার অভিযোগে জাহাঙ্গীর হোসেন সোহেল নামে একজনকে ফকিরাপুল বাসস্ট্যান্ড থেকে আটক করে র‌্যাব। এছাড়া ওই দিন দিনগত রাতে র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান হত্যাকাণ্ডের ‘মূল হোতা’ মন্টি।  গত ১০ মার্চ ফকিরাপুল পানির ট্যাংকি সংলগ্ন রোকেয়া আহসান মঞ্জিলের ছাদ ও আশেপাশের তিনটি বাড়ির ছাদ থেকে সুমীর সাত টুকরা লাশ উদ্ধার করা হয়।
শনিবার র‌্যাব -৩ এর অধিনায়ক লে: কর্নেল গোলাম সারোয়ার জানান, সুমির খণ্ডিত টুকরোগুলো রোকেয়া আহসান মঞ্জিলের ছাদ ও আশেপাশের তিনটি বাড়ির ছাদ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনা ধামাচাপা দিতে ঘাতকেরা লাশের মুখমণ্ডল আগুলে ঝলসে দেয়। শরীরের বিভিন্ন অংশ বিছিন্ন করে সাত টুকরা করে ভবনের ছাদ থেকে ফেলে দেয়া হয়। শরীরের খণ্ডিত অংশগুলো ফেলার সময় যাতে শব্দ না হয় সে জন্য দড়ি বেঁধে সেগুলো কৌশলে নিচে নামিয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে মৃত তরুণীর নাম সুমী (২৪) বলে জানা যায়। সুমী ওই এলাকার একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনের স্ত্রী। সুমী নিজেও মাদকের টাকা লেনদেন করত বলে জানা গেছে। ঘটনার পর থেকে থানা পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব-৩ ও গোয়েন্দা নজরদারী শুরু করে। এক পর্যায়ে র‌্যাব গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জাহাঙ্গীর হোসেন সোহেলকে গ্রেফতার করে।
জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল জানায়, গত ৯ মার্চ সন্ধ্যায় মোবারক উল্লাহ ওরফে মন্টি সুমীকে তার ফকিরাপুলস্থ রোকেয়া আহসান মঞ্জিলে ডেকে পাঠায়। সেখানে মন্টি, সাইদুল এবং সুজনসহ আরো কয়েকজন মধ্যরাত পর্যন্ত মাদক সেবন করে। এক পর্যায়ে মাদক সংক্রান্ত অর্থ লেনদেনের পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সুমিকে যৌন নির্যাতন করে। পরবর্তীতে পরিকল্পিতভাবে ধারালো অস্ত্র দ্বারা সুমীকে হত্যা করে লাশটি সাত টুকরা করে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেয়।
সোহেল আরো জানায়, সুমীকে হত্যার পর ঘটনা ধামাচাপা দিতে লাশের মুখমণ্ডল আগুনে ঝলসে দেয় হয়। শরীরের বিভিন্ন অংশ বিছিন্ন করে সাত টুকরা করে ফেলে দেয়া হয়। শরীরের খণ্ডিত অংশগুলো ফেলার সময় যাতে শব্দ না হয় সে জন্য দড়ি বেঁধে কৌশলে নিচে নামিয়ে দেয়া হয়। মাথা ও হাত-পাবিহীন মূল অংশটি একটি বিছানার চাদর দিয়ে পেঁচানো ছিল।