‘ফলাফল দেখা যাবে পরের সপ্তাহে, পরিস্থিতি সামলানো যাবে না’

ঈদের ছুটিতে করোনার নমুনা পরীক্ষা নেমে এসেছে এক চতুর্থাংশে। কমেছে রোগী শনাক্তের সংখ্যাও। তবে কমেনি শনাক্তের হার।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানাচ্ছে, ২৪ ঘণ্টায় রোগী শনাক্তের হার ৩২ দশমিক ১৯ শতাংশ। যা গত এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর দেড় বছরে এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে গত বছরের ১২ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতর একদিনে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ০৪ বলে জানিয়েছিল।

করোনার ভয়াবহ সংক্রমণের মধ্যেই ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিধিনিষেধ শিথিল করেছিল সরকার। যদিও আজ শুক্রবার (২৩ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে কঠোর বিধিনিষেধ ফের আরোপ করা হয়েছে, চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত।

তবে ঈদের সময় বিধিনিষেধ শিথিলে কোরবানির পশুর হাট, শপিং মল, মার্কেট ও অন্যান্য জনসমাগমস্থলে স্বাস্থ্যবিধি তেমন মানা হয়নি। অনেকেই ঢাকা থেকে বাস, ট্রাক, লঞ্চে গাদাগাদি করেই ঈদ করতে ফিরে গেছেন গ্রামে।

সবমিলিয়ে ঈদের পর এবার করোনা সংক্রমণ কোথায় ঠেকবে এবং সে পরিস্থিতিতে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা কতটুকু সামাল দিতে পারবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।

করোনায় ঈদ করে ঢাকা ফিরছেন তারা
করোনায় ঈদ করে ঢাকা ফিরছেন তারা…

আইসিইউ পাওয়াকে সোনার হরিণ উল্লেখ করে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোর কর্তৃপক্ষ বলছে, আইসিইউ নেই, সংকট দেখা দিচ্ছে সাধারণ শয্যারও। এ অবস্থা চলতে থাকলে হাসপাতালগুলো কুলাতে পারবে না।

‘অবস্থা খুবই ভয়াবহ হবে’ এমন মন্তব্য করেছেন কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ইকবাল আর্সলান। তিনি বলেন-

‘আশঙ্কা হচ্ছে, করোনার সঙ্গে যে এই শিথিল লকডাউন- এর ফলাফল দেখা যাবে পরের সপ্তাহে কিংবা তার পরের সপ্তাহে। এভাবে যদি সংক্রমণ বাড়তে থাকে তবে সেটা সামাল দেওয়া যাবে না।’

তিনি আরো বলেন, তবে এবারের মূল সমস্যা হচ্ছে, সংক্রমণ গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল। কোথাও আইসিইউ বা ন্যাজাল ক্যানুলা দেখা যায় না।

শেষ মুহূর্তে জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে আসা রোগীরা চিকিৎসার বাইরে চলে যাচ্ছেন জানিয়ে অধ্যাপক আর্সলান বলেন, ‘যখন অক্সিজেন স্যাচুরেশন খুব কম নিয়ে আসছে, তখন আর কিছু করার থাকে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘যে হারে সংক্রমণ হচ্ছে তা চলতে থাকলে আইসিইউ, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলাসহ অন্য সব চিকিৎসা দিয়েও কাজ হবে না।’

রাজধানীর গ্রিনরোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘তার হাসপাতালে কোনও বেড ফাঁকা নেই। রোগীদের ফেরত পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে কর্তৃপক্ষ।’

তিনি বলেন, ‘শঙ্কায় রয়েছি, গতবারের মতো এবারও দেখা যাবে বেড না পেয়ে অ্যাম্বুলেন্সে রোগী মারা যাচ্ছে।’

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, ‘সাধারণ শয্যার খুব সংকট চলছে। আইসিইউ পাওয়া সোনার হরিণ। কেউ সুস্থ না হলে অথবা মারা না গেলে আইসিইউ ফাঁকা হচ্ছে না।’

তিনি বলেন- ‘বেডের অভাবে গাইনি ও সার্জারি বিভাগের বেডগুলো করোনা ইউনিটে ব্যবহার করা হচ্ছে। অবস্থা ভালো নয়। সংকট হবে সামনে।’

Exit mobile version