ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৬ জুন ৩৬ ঘণ্টার সফরে ঢাকা আসছেন। তার এ সফরে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে কমবেশি ১৫টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে।
এ ছাড়া দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ মুদ্রা ঋণ হিসাবে আর্থিক সহায়তা দেবে দেশটি। দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায়ও থাকছে বিশেষ ব্যবস্থা। মোদি ঢাকায় বুলেটপ্রুফ একটি গাড়িতে চড়বেন, যা নয়াদিল্লি থেকে ঢাকায় আসবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর গাড়ির নিরাপত্তায় সামনে ও পেছনে থাকবে এসপিজির (ভারতের বিশেষায়িত নিরাপত্তা বাহিনী স্পেশাল প্রটেকশন গ্রুপ) কয়েকটি বিশেষ গাড়ি, যা ভারত থেকে আনা হবে। নয়াদিল্লি থেকে বিশেষ চার্টার বিমানে চড়ে ঢাকায় নামবেন মোদি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফর প্রসঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশের পুরানো বন্ধু ও নিকটতম প্রতিবেশী। বাংলাদেশের দুর্দিনে ভারত বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছে। নরেন্দ্র মোদির সফরে ঢাকা-নয়াদিল্লির সম্পর্ক নতুন মাত্রায় উন্নীত হবে।’
পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, তিনি স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করবেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী তার কথা রেখেছেন। এটা সবচেয়ে বড় পাওয়া। নরেন্দ্র মোদিকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য ঢাকা প্রস্তুত।’
শহীদুল হক আরও বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদি আসার পর স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করতে দুই দেশ একটি সম্মতিপত্রে অনুস্বাক্ষর করবে। এর পর ছিটমহল বিনিময় শীঘ্রই শুরু হবে। এ বিষয়ে দুই দেশই দুই দেশকে তালিকা দেবে। এর পর দুই দেশের কমিটি মিলে মাঠপর্যায়ে কাজ করবে।’
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীকে সম্মাননা দেওয়া হবে। তবে নরেন্দ্র মোদির জাতীয় সংসদে ভাষণ দেওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনের উদ্যোগে বিশিষ্টজনদের নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদি বক্তৃতা দেবেন।’
পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরকে কেন্দ্র করে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার বিকেলেও নিরাপত্তার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান। বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছে মোদির দফতর।
নয়াদিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন থেকে জানা গেছে, নরেন্দ্র মোদির সফরে তিস্তা চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। পাঁচ মুখ্যমন্ত্রী, একাধিক মন্ত্রিপরিষদের সদস্যসহ দুই শতাধিক সফরসঙ্গী নিয়ে আসবেন নরেন্দ্র মোদি। সর্বশেষ পাওয়া তথ্যমতে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও মোদির সফরসঙ্গী হিসেবে ঢাকা আসছেন।
মোদির সফরে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কমবেশি ১৫টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হতে পারে। এর মধ্যে জাল টাকা রোধ ও সমুদ্রসীমার নিরাপত্তায় উভয় দেশের কোস্টগার্ডের সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে।
যোগাযোগ, শিক্ষা, প্রযুক্তি, অবকাঠামো ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে বাংলাদেশকে ভারতের পক্ষ থেকে দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ঋণ হিসেবে সহায়তা দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে বিটিআরসির জন্য ৫০০টি ট্রাক, বেশকিছু দ্বিতল ও আর্টিকুলেটেড বাস কেনা হবে। সড়ক ও আন্তঃমহাসড়ক সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করতে ওই ঋণের অর্থ ব্যয় করা হবে।
ঢাকা সফরে মোদি প্রায় ৩৬ ঘণ্টা অবস্থান করবেন। পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরের পূর্ণাঙ্গ সূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। অনেক অনুষ্ঠানের চিন্তা মাথায় আছে কিন্তু হাতে সময় নেই। নিরাপত্তাও একটি বিষয়। আমরা যেখানে একটি অনুষ্ঠানের জন্য ৩০ মিনিট সময় চেয়েছি সেখানে নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত ভারতীয় কর্মকর্তারা সময় কমিয়ে ১০ মিনিট করছেন।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।