রেলমন্ত্রীর বিয়ে : আবার আলোচনায় মন্ত্রণালয়

738

আবারো আলোচনায় বিয়ে। মন্ত্রীর বিয়ে। রেলমন্ত্রীর বিয়ে। রেলপথ মন্ত্রণালয় গঠিত হওয়ার পর এ মন্ত্রণালয়ের প্রথম মন্ত্রী হন কুমিল্লার মুজিবুল হক। তিনি ছিলেন চিরকুমার। কিন্তু মন্ত্রী হওয়ার পর একপর্যায়ে কুমারত্বের অবসান ঘটান তিনি। আর এ মন্ত্রণালয়ের দ্বিতীয় মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। তিনিও বিয়ে করলেন।

জানা গেছে, ৫ জুন ইসলামী শরিয়াহ ও সরকারি আইন অনুসরণে রেলমন্ত্রী বিয়ে করেন দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার মেয়ে শাম্মী আকতার মনিকে।

কে এই শাম্মী আকতার?

শাম্মী আকতার মনি বিরামপুর উপজেলার নতুন বাজার এলাকার মৃত আব্দুর রহিমের মেয়ে। তারা দুই ভাই এক বোন। শাম্মী আকতার পেশায় একজন অ্যাডভোকেট। আইন পেশার পাশাপাশি ঢাকায় ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজে শাম্মী আকতার শিক্ষকতাও করেন।

বড় ভাই মিলন হোসেন ইলেকট্রিক ব্যবসায়ী। অপরজন স্থানীয় ব্যবসায়ী।

শাম্মী আকতার মনির বড় ভাই মো. জাহিদুল ইসলাম মিলন হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, শাম্মী ঢাকার উত্তরায় থাকেন। সে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে হাইকোর্টে এক সিনিয়রের সঙ্গে প্র্যাকটিস করছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে (পিডিবি) লাইনম্যান পদে চাকরি করতেন শাম্মী আক্তারের বাবা। তাদের আদি নিবাস ছিল পাবনা জেলায়।

পরবর্তী সময়ে বাবার চাকরির সুবাদে প্রায় ৩৫ বছর আগে বিরামপুরে চলে আসেন তারা। তারপর বিরামপুরের নতুন বাজার এলাকায় জায়গা কিনে বাড়ি তৈরি করে সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যান।

নূরুল ইসলাম সুজনের পরিচয়

নূরুল ইসলাম সুজন ১৯৫৬ সালের ৫ জানুয়ারি পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আইনপেশায় জড়িত রেলমন্ত্রী ব্যক্তিজীবনে এক ছেলে ও দুই মেয়ের জনক। তিনজনেরই বিয়ে দিয়েছেন।

গত ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের রাতে তাঁর স্ত্রী নিলুফার জাহান মৃত্যুবরণ করেন।

তিনি পঞ্চগড়-২ (বোদা-দেবীগঞ্জ) আসন থেকে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সদস্য এবং পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

২০১৮ সালে নির্বাচিত হওয়ার পরে তিনি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। তাঁর বড় ভাই প্রয়াত আইনজীবী সিরাজুল ইসলামও জাতীয় সংসদ সদস্য এবং বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। নূরুল ইসলামও একজন আইনজীবী।

সুজন ও শাম্মী

যেভাবে বিয়ে সুজন-শাম্মীর

জানা গেছে, শাম্মী আক্তার একজন আইনজীবী। একজন সিনিয়রের সাথে হাইকোর্টে প্রাকটিস করেন তিনি। মন্ত্রী নিজেও একজন আইনজীবী। সুপ্রিম কোর্টে তার নামডাকও আছে বেশ। আর তার কাছ থেকে অভিজ্ঞ পরামর্শ নিতে গিয়ে দেখা দুজনের।

মনির বড় ভাই মো. জাহিদুল ইসলাম মিলন হোসেন বলেন- আইনি বিষয়ে পরামর্শ নিতে ২০ দিন আগে রেলমন্ত্রীর কাছে যায় আমার বোন। পরে আমার বোনকে মন্ত্রীর পছন্দ হয়। পারিবারিকভাবে ৫ জুন উত্তরায় আমার বোনের বাসায় তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।

বিয়েতে বরপক্ষে উপস্থিত ছিলেন বিরামপুরের বিচারপতি ইজারুল হক ও তার স্ত্রী। কনে পক্ষে আমি ও আমার ভাই উপস্থিত ছিলাম।

জানা গেছে, আলোচনা ঢাকা থেকে শুরু হলেও ঘটকের দায়িত্ব পালন করেছেন বিরামপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র লিয়াকত আলী টুটুল।

তিনি বলেন, আলোচনা ঢাকায় ওরা শুরু করেছে। কিন্তু আমি মেয়ের পক্ষ থেকে ঘটকের দায়িত্ব পালন করেছি। রেলমন্ত্রীর পক্ষ থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তখন মেয়ের পক্ষ থেকে আমাকে ঘটকের দায়িত্ব পালনের জন্য বলা হয়েছিল। আমি সেই দায়িত্ব পালন করেছি।

বিয়েতে মন্ত্রীর পরিবারের কেউ উপস্থিত ছিল না, অনেকটা পরিবারকে না জানিয়ে শুধুমাত্র বন্ধুদের নিয়ে বিয়ে সেরেছেন মন্ত্রী।

শাম্মী বর্তমানে উত্তরার বাসায় আছে। ডিসেম্বরে স্বামী রেলমন্ত্রী সুজনের বাড়িতে যাবেন।

কেন বিয়ের কথা গোপন রাখেন মন্ত্রী?

গত ৫ জুন বিয়ে করলেও তা সপ্তাহখানেক প্রকাশ করেননি রেলমন্ত্রী। পরে ১১ জুন জানাজানি হয় দিনাজপুরের বিরামপুরের মেয়ে শাম্মী আকতার মনিকে বিয়ে করেছেন নূরুল ইসলাম সুজন।

এমনকি ১০ জুন রেলমন্ত্রী বলেছিলেন, আড়াই বছর আগে তার স্ত্রী মারা গেছেন। দুই মেয়ে ও এক ছেলের বিয়ে হয়ে গেছে। পরিবারের আগ্রহে তিনি দ্বিতীয় বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অনেক কনের জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) এসেছে। এগুলো যাচাই বাছাই চলছে। কনে পছন্দ হলে সবাইকে জানিয়ে বিয়ে করবেন।

তবে কেন বিয়ের খবর গোপন করেছিলেন তা জানিয়েছেন নূরুল ইসলাম সুজন। বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে বিয়ের অনুমতি নিয়েছেন আগেই। তবে পারিবারিক কারণে প্রধানমন্ত্রীকে না জানিয়েই বিয়ে করেছেন। কোনো অনুষ্ঠানও করেননি।

প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে না পারার কারণেই বিয়ের কথা গোপন রেখেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীকে জানানোর পর আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের খবর জানাতে চেয়েছিলেন তিনি।

নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, বিয়ের কথা অস্বীকার করিনি, শুধু খবর গোপন রেখেছিলাম। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে সবাইকে জানিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান করব। আর বিয়ের কথা না বলা ছিল ‘বাত কি বাত’ মাত্র। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ ছিল না।

রেলমন্ত্রী সুজনের আগের বিয়ে

এর আগে নূরুল ইসলাম সুজনের প্রথম স্ত্রী নিলুফার জাহান ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মারা যান।

তাদের এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। তিন সন্তানেরই বিয়ে হয়েছে।

শাম্মী আক্তারের আগের বিয়ে

মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের মতো শাম্মী আক্তার মনিরও এটি দ্বিতীয় বিয়ে।

জানা গেছে, এর আগে কুষ্টিয়ায় বিয়ে হয়েছিল শাম্মী আক্তার মনির। পারিবারিক সমস্যার কারণে ২০১১ সালে ডিভোর্স হয়ে যায়।

ওই ঘরে একটি মেয়ে রয়েছে। এরপর থেকে মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন শাম্মী আক্তার।

অলোচনায় রেল মন্ত্রণালয়

জীবন সে তো একা চলে না। জীবনের প্রয়োজনেই যুগলবন্দি হতে হয় মানুষকে। কিন্তু কিছু যুগল জন্ম দেয় আলোচনার। যেমনটি আলোচনার জন্ম দিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। ৬৫ বছর বয়সে তিনি ফের বিয়ে করেছেন। কবুল করে এনেছেন নববধূ। এ কবুল নিয়ে আলোচনা দেশজুড়ে। কেউ কেউ রেলপথ মন্ত্রণালয় নিয়ে ট্রল করছেন।

এর আগে সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ৬৭ বছর বয়সে বিয়ে করেন। মুজিবুল হক ছিলেন চিরকুমার। কবুল বলে তিনি কুমারত্ব ভাঙেন। আর সুজনের স্ত্রী বিয়োগের পর দ্বিতীয় বিয়ে এটি।

তবে রেল মন্ত্রণালয় ছাড়াও মন্ত্রীদের বিয়ের প্রসঙ্গ আনলে প্রথমেই আসে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদের নাম। তিনিও মন্ত্রী থাকা অবস্থায় ১৯৯৮ সালে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তখন তারও বয়স ছিল ৬৫ বছর। যদিও এ বিয়ে বেশিদিন টেকেনি।

আব্দুস সামাদ আজাদের বিয়ের ১৬ বছর পর রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক ২০১৪ সালে আড়ম্বরে বিয়ে করেছিলেন। বিশাল আয়োজন ছিল এ বিয়েতে।  এ দম্পতি এখন তাদের সন্তান নিয়ে সুখী জীবন কাটাচ্ছেন। এ দু’জনের বিয়ের খবর এখন আর কোনো বিষয় নয়।

কিন্তু তাদের বিয়ের খবর ফের আলোচনায় আসে বৃহস্পতিবার যখন রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের বিয়ের খবর চাউর হয়। নানাজনে নানা কথা বলতে থাকে। কেউ কেউ রেলপথ মন্ত্রণালয়কেও আলোচনার বিষয় করে তোলে। কি হয়েছে এ মন্ত্রণালয়ে। যেখানে মন্ত্রী হলেই বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন। কবুল করে নিয়ে আসছেন ঘরে নতুন বউ।

পরিবারের সাথে সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক

তৎকালীন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের বিয়ে

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের গত মেয়াদে রেলমন্ত্রী ছিলেন মুজিবুল হক। মন্ত্রী হওয়ার পর তিনি বিয়ে করেন। সেটি মুজিবুল হকের প্রথম বিয়ে। কনে হনুফা আক্তার রিক্তা। বিয়ের দেনমোহর ছিল ৫ লাখ ১ টাকা। আসরেই তা পরিশোধ করেন মন্ত্রী।

সে সময় কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মীরাখোলা গ্রামে কনের বাড়িতে ছিল সাজ সাজ রব। বরকে স্বাগত জানাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মোড়ে মোড়ে তৈরি করা হয় প্যান্ডেল। বর সেজে মন্ত্রী আসার পরপরই শুরু হয় হইহুল্লোড়, ধাক্কাধাক্কি। এর মধ্য দিয়েই মন্ত্রী গিয়ে পড়েন শ্যালিকাদের সামনে। গেটের অপর প্রান্তে পৌঁছতে শ্যালিকার দলকে দিতে হয়েছে ১ লাখ ১ টাকা।

বিয়েতে মুজিবুল হকের পক্ষ থেকে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন ৭০০ জন। আর মেয়ের পক্ষের লোকজনসহ প্রায় ১৫০০ লোকের খাবারের আয়োজন করা হয়।

বর্তমান রেলপথমন্ত্রী সুজন করোনার যে মহামারি অবস্থা তাতে বিয়ের আয়োজন ধুমধামের সঙ্গে করতে পারবেন কিনা তা সন্দেহ পোষণ করেছেন।

তথ্যসূত্র: ইত্তেফাক, মানবজমিন ও অন্যান্য সংবাদমাধ্যম


1 COMMENT

Comments are closed.