নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে শরণার্থীদের জড়িয়ে পড়ার প্রোপটে পর্যটন শহর কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় সরিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
মানবপাচার নিয়ে আন্দামান সাগরে সঙ্কটের মধ্যে সরকারের এই পরিকল্পনার কথা জানা গেছে। তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো কক্সবাজার থেকে ‘সুবিধাজনক’ স্থানে সরাতে কয়েক মাস আগেই বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মিয়ানমারের এই শরণার্থীদের জন্য ‘সুবিধাজনক স্থান’ হিসেবে এখন নোয়াখালীর হাতিয়াকে বেছে নেয়া হচ্ছে বলে সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়। বিডি নিউজ।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক বদরে মুনির ফেরদৌস বুধবার বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী সরানোর পরিকল্পনা সরকারের।
‘সুবিধাজনক ও প্রশস্ত জায়গা পাওয়া যাবে কি না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। সে হিসেবে হাতিয়ার চরাঞ্চলের ৫০০ একর জায়গার প্রস্তাব আমরা পাঠিয়েছি।’
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক আলী হোসেন বলেন, ‘এখানে আমি নতুন এসেছি। এখনো বিষয়টিতে নজর দেয়া হয়নি। যতদূর জেনেছি, নোয়াখালীর হাতিয়ার কোনো একটা অঞ্চলে তাদের সরানো হবে।’
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের হাতিয়ায় সরাতে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি দেখভাল করছেন বলে আলী হোসেন জানান।
কবে নাগাদ ও কী প্রক্রিয়ায় তা বাস্তবায়ন হবে, সে বিষয়ে এখনই কিছু বলতে পারেননি নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক বলেছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন শুরু হলেই বিস্তারিত জানানো যাবে।
কক্সবাজারের কুতুপালং ও নয়াপাড়ায় বর্তমানে রোহিঙ্গাদের দু’টি শরণার্থী শিবির রয়েছে। এতে নিবন্ধিত ৩৪ হাজার শরণার্থী থাকলেও এর বাইরে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে রয়েছে বলে সরকারের হিসাব।
বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে রোহিঙ্গারা বিদেশে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মিয়ানমার হয়ে মাদক ও মানবপাচারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও গোয়েন্দাদের দাবি।
অন্য দিকে শরণার্থী শিবিরের অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের প্রধানতম পর্যটন কেন্দ্রের জন্য হুমকি হিসেবে দেখেন অনেকে। পাশাপাশি অপরিসর ক্যাম্পগুলোতে শরণার্থীদের সমস্যার বিষয়টিও প্রধানমন্ত্রীর কথায় আসে।
যে স্থানটি নোয়াখালীর জেলা প্রশাসন ঠিক করেছে, তা হাতিয়া দ্বীপের পূর্বাঞ্চলের চর বলে জানিয়েছেন স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মো: মঈনুদ্দীন।
তিনি বলেন, ‘হাতিয়ার পূর্বদিকের ওই চরটি স্থানীয়ভাবে ঠেঙ্গারচর নামে পরিচিত। সেখানে কোনো জনবসতি নেই।’
জেলা প্রশাসক বদরে মুনীর বলেন, ‘এটি হাতিয়া (উপজেলা সদর) থেকে অনেক দূরের পথ। আমি জায়গা পরিদর্শন করেছি।’
কক্সবাজার থেকে হাতিয়া, মাঝে পুরোটাই সাগর। হাতিয়ার এ এলাকাটি হতে পারে রোহিঙ্গাদের ঠিকানা।
সেখানে বন বিভাগের ১২ হাজার একর জমি রয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে তাদের কাছ থেকে ৫০০ একর জমি নিতে হবে বলে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসন ভূমি মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে।
ইউএনও বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, জরিপ করে ওই চরের জমি বন বিভাগের কাছে চেয়ে নিতে হবে। তবে এই প্রক্রিয়া সারতেও বিলম্ব হবে।’
মিয়ানমারে জাতিগত ও রাজনৈতিক কারণে নিপীড়নের শিকার মুসলিম রোহিঙ্গারা দুই দশক আগে ব্যাপক হারে বাংলাদেশে ঢোকা শুরু করে।
এই শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে দীর্ঘ দিন ধরে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ সরকার। তবে তাতে সাড়া দিচ্ছে না দেশটি।
মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নিজের দেশের নাগরিক হিসেবেও মানতে নারাজ। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপও উপো করে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে সামরিক শাসনে থাকা দেশটি।
২০১২ সালে মিয়ানমারে নতুন করে জাতিগত দাঙ্গা শুরু হলে সীমান্তে রোহিঙ্গাদের চাপ বাড়লেও দীর্ঘ দিন ধরে শরণার্থীদের ভার বহন করে আসা বাংলাদেশ নতুন করে কাউকে ঢুকতে না দেয়ার অবস্থান নেয়। সূত্র: নয়াদিগন্ত
Sign in
Welcome! Log into your account
Forgot your password? Get help
Password recovery
Recover your password
A password will be e-mailed to you.