নাস্তার টেবিলে এক কাপ কফি না হলে নাস্তার আমেজই আসে না অনেকের! বিশ্বব্যাপী সমাদৃত সেই কফি চাষে অনিহা প্রকাশ করছেন খাগড়াছড়ির কৃষকরা। ফলন ভালো হলেও বিক্রি ও প্রক্রিয়াজতকরণ বেশ জটিল হওয়ায় এটি চাষ করতে আগ্রহ হারাচ্ছে তারা।
খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার বড়পিলাক এলাকার বাসিন্দা নূর হোসেন। নিজের ৫ একর জায়গা জুড়ে কফি গাছের বাগান করেছিলেন তিনি। ফলনও হয়েছিল ভালো। কিন্তু বাজার ব্যবস্থাপনা আর ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় তিনি কফি চাষ বন্ধ করে দেন।
শুধু নূর হোসেন নয়। রামগড় ও তৈকর্মা এলাকায় ৫০টি পরিবার এই কফি চাষে যুক্ত থাকলেও এখন তারা কফি চাষ বাদ দিয়ে আম, লিচুসহ অন্য ফলদ বাগান করতে ব্যস্ত।
জানা যায়, ২০০৩ সালে রামগড়ের বড়পিলাকে ৩০টি পরিবার এবং তৈকর্মা এলাকায় ২০ পরিবারকে ১৫০০টি কফি গাছের চারা দেয় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। পাশপাশি এ চারা রোপণের জন্য নগদ অর্থও দেওয়া হয়।
অথচ নুর হোসেনের সেই ৫ একর জায়গায় এখন শোভা পাচ্ছে আম, লিচুসহ অন্য ফলদ বাগান।
তবে, দীর্ঘদিন কফি চাষের সঙ্গে যুক্ত থাকায় নূর হোসেনের বাগানে এখনও বাগানে শোভা পাচ্ছে ৮/১০টি কফি গাছ।
তিনি বলেন, ‘আমার ৫ একর জায়গায় অন্যান্য ফলদ বাগানের সঙ্গে ১ হাজার ৫টি কফি গাছের চারা রোপণ করি। রোপণের ৩ বছর পর ফলনও হয় ভালো। কিন্তু বাজারজাতের ব্যবস্থা না থাকায় ফলন ভালো হওয়ার পরও হতাশায় পড়ি। পরে কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের কাছে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা দরে এ কফি বিক্রি করি।
তৈকর্মা এলাকার বাসিন্দা মো. বাবুল জানান, এ এলাকার মোট ২০টি পরিবার কফি চাষের সঙ্গে যুক্ত ছিল। কিন্তু ফল বিক্রিতে ন্যায্য মূল্য না পেয়ে হতাশ হয়ে প্রায় সবাই কফি চাষ বন্ধ করে দিয়েছে।
তবে, কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, উৎপাদিত কফি’র প্রক্রিয়াজতকরণ সম্পর্কিত জ্ঞান ও বিপণন ব্যবস্থার অভাবের কারণে অত্যন্ত লাভজনক এ ফসল চাষে কৃষকের অনীহা দেখা দিয়েছে।
খাগড়াছড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আবদুর রউফ জানান, ‘তিন দশক ধরে খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের কিছু জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে কফির চাষ হয়ে আসছে। কফি প্রক্রিয়াজাত করা জটিল কাজ। এটি যন্ত্রপাতি নির্ভর প্রক্রিয়া।
যেটি এতদিন ছিল না। নানা পরীক্ষা নিরিক্ষা শেষে প্রায় দেড় বছর আগে খাগড়াছড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র কফি চাষের সর্বশেষ ধাপ ‘রোস্টেট’ ‘গ্রাইন্ডিং’ করার জন্য কফি গ্রাইন্ডার যন্ত্র উদ্ভাবন করেছে। এখনও তা কৃষক পর্যায়ে দেওয়া হয়নি। এ মেশিনের সাহায্যে প্রক্রিয়াজাত করলে কৃষক ন্যায্য মূল্য পাবে। তবে, এতকিছুর পর বাজার ব্যবস্থাপনা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যেটি এখানে নেই।
খাগড়াছড়ির কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক যুগল পদ দে বাংলানিউজকে জানান, পাহাড়ের মাটি খুবই উর্বর। বৃহৎ পরিসরে কফি চাষ শুরু না হলেও যে হাতেগোনা কয়েকজন করেছেন তাদের ফলন ভালো হয়েছে। তবে, প্রক্রিয়াজাত ও কফির মূল্য না পাওয়ায় কৃষক হতাশায় ভুগছেন। সরকার একটু সুদৃষ্টি দিলে পাহাড়ে উৎপাদিত কফি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব।