ভাবছি এই চাদর গায়ে জড়িয়েই দেশে ফিরব

‘মানসিক হাসপাতাল থেকে পাওয়া এই চাদর অনেক স্মৃতি বহন করছে। এখানে আমার একমাত্র সম্বল এটি। তাই সারাক্ষণ শরীরে জড়িয়ে রাখি। ভাবছি এই চাদর গায়ে জড়িয়েই দেশে ফিরব।’ ভারতের শিলং থেকে টেলিফোন আলাপচারিতায় আবেগভরা কণ্ঠে কথাগুলো বলেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ।

রাজধানী ঢাকা থেকে ‘নিখোঁজ’ হওয়ার দুই মাস পর গত ১৩ মে শিলংয়ের রাস্তায় দেখা মেলে সালাহ উদ্দিন আহমেদের। ওই সময় পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনে তাঁর যে ছবি প্রকাশ হয় তাতে দেখা গিয়েছিল তাঁর শরীরে জড়ানো রয়েছে একটি চাদর। এমনকি এর পরও যতবার তিনি গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে ক্যামেরার লেন্সে ধরা পড়েছেন ততবারই তাঁর গায়ে চাদরটি জড়ানো দেখা গেছে। কেন চাদরটি সারাক্ষণ গায়ে জড়িয়ে রাখছেন বিএনপির এই নেতা- এ নিয়ে মিডিয়ায় একটা প্রশ্নও তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু মিডিয়াকর্মী হওয়ায় কোনোভাবেই পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন ওই বিএনপি নেতার কাছে ঘেঁষা যাচ্ছিল না। তাই অনেকটা ভিন্ন কৌশলে সালাহ উদ্দিন পর্যন্ত পৌঁছেন এই প্রতিবেদক।

বিএনপির এই নেতা ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে মেঘালয় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর শিলংয়ে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন। বর্তমানে তিনি নর্থ-ইস্টার্ন ইন্দিরা গান্ধী রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ অ্যান্ড মেডিক্যাল সায়েন্সেসের সিসিইউতে রয়েছেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে এক আত্মীয় থাকছেন। আর তাঁর মাধ্যমেই গত রবিবার দুপুরে কথা হয় সালাহ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। প্রায় দুই মিনিট কথা হয়। সালাহ উদ্দিন একটু হেসে বলেন, ‘একটা গান আছে না- থালা-বাটি-কম্বল এটা আমার সম্বল…; সেই রকম আর কি। বলতে পারেন, এই চাদরটিই আমার একমাত্র সম্বল। স্মৃতি জড়ানো চাদরটি তাই শরীরে জড়িয়ে রাখি! ভাবছি দেশে ফিরব এই চাদর জড়িয়েই।’

টেলিফোনে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ওরা (পুলিশ) আমাকে মানসিক রোগী ভেবে মেঘালয় ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরোসায়েন্সেসে (মিনহানস) নিয়ে গেল। ওই রাতেই হাসপাতালের একজন চিকিৎসক আমাকে এই চাদরটি দেওয়ার জন্য সিস্টারকে নির্দেশ দেন। আমায় ওইভাবে দেখে হয়তো ওই চিকিৎসকের মায়া হয়েছিল। তার পর থেকে ওটা গায়ে জড়িয়ে আছি।’

মিনহানসে ওই রাতে কর্তব্যরত দুজন চিকিৎসকের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আসলে তিনি যখন এসেছিলেন তখন তাঁর শরীরে বাড়তি কোনো পোশাক ছিল না। উনি শীতে কাঁপছিলেন। সাধারণত হাসপাতাল থেকে রাতে শোবার জন্য কম্বল কিংবা শরীরে জড়ানোর জন্য চাদর দেওয়া হয়। আবার রোগী ফিরে যাওয়ার সময় তা নিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু সালাহ উদ্দিন যেহেতু বাংলাদেশের একজন সাবেক মন্ত্রী এবং সাংসদ, তাই তাঁর কাছ থেকে ওই চাদর নিয়ে নেওয়া হয়নি।’

সূত্রঃ কালেরকন্ঠ

Exit mobile version