কোনো এলাকায় তীব্র ভূমিকম্প আঘাত হানার পরবর্তী কয়েকদিন আবার ভূকম্পন অনুভূত হবে। ভূতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা একে ‘আফটার শক’ বা ‘পরাঘাত’ নামে অভিহিত করে থাকেন। এই পরাঘাত তীব্র নয়, মৃদু হবে বলেও অভিমত তাদের। তবে ২৫ এপ্রিল নেপালে তীব্র ভূমিকম্প আঘাত হানার পর গত ২০ দিনে ছোট-বড় প্রায় অর্ধশত ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে দেশটিতে। এর মধ্যে বড় পর্যায়ের ‘আফটার শক’ রয়েছে ২টিরও বেশি। গত ২৫ এপ্রিল ৭.৯ মাত্রার ভূমিকম্পের পর দ্বিতীয় দফায় ৭.৩ মাত্রার ভূমিকম্পে এখনো ক্ষত কাটেনি দেশটির। এর মধ্যে গত শনিবার ফের নেপালে আঘাত হানল ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস বিশ্বের ভূমিকম্পপ্রবণ হিসেবে যে বিশেষ রেখা নির্ধারণ করেছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আর জাতিসংঘের ভূমিকম্প দুর্যোগ ঝুঁকিসূচক অনুসারে ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে শীর্ষে ইরানের রাজধানী তেহরান। বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি শহরের মধ্যে ঢাকা রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে, ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন এলাকা। সর্বাধিক ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের ২০টি জেলা। এসব জেলা হলÑ রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজার জেলার অংশবিশেষ, পঞ্চগড়, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঠাকুরগাঁও, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো এক জেলায় ভূমিকম্পের উৎপত্তি হলে তার আশপাশে প্রায় ১০০ কিলোমিটার ক্ষতির শিকার হয়।
ভূতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মেহেদী আহম্মদ আনসারীর মতে, বাংলাদেশের চাঁদপুর অঞ্চলকে ঘিরে অনেকবার ভূমিকম্প হয়েছে। সন্নিহিত এলাকার যে কোনো উৎপত্তিস্থলে বড় মাত্রার ভূমিকম্প ঢাকাকে দারুণভাবে বিধ্বস্ত করতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, ঢাকায় ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার মতো ভূতাত্ত্বিক ফাটল রেখা বা ফল্ট লাইন নেই। তবে ঢাকার অদূরে মধুপুরে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার মতো ফাটল রেখা রয়েছে। ঢাকার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে মধুপুর ফল্টে কিছু ঘটলে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূ-প্রাকৃতিক কারণেই অন্যান্য স্থানের তুলনায় ঢাকায় ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আক্তার হুমায়ুন ভূমিকম্প সংক্রান্ত নিজের গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, ঢাকা বিশ্বের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা ২০ শহরের একটি। গবেষণায় ৪৫০ বছরের ভূমিকম্পের ইতিহাস পর্যালোচনা করে তিনি বলেন, দেখা গেছে ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ৩টি প্লেট সক্রিয় রয়েছে। এগুলো হলো ইন্ডিয়ান বা ভারতীয় প্লেট, ইউরেশিয়া প্লেট ও মিয়ানমার মাইক্রোপ্লেট। এর মধ্যে ভারতীয় ও ইউরেশিয়া প্লেট প্রতি বছর পরস্পরের দিকে ২ ইঞ্চি করে এগিয়ে আসছে। আর মিয়ানমার মাইক্রো প্লেটটি দেশটির উত্তর-পূর্বে ১ ইঞ্চির কম করে এগিয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমারের এই প্লেটটির কারণে ভারতের শিলংয়ে একটি ফল্ট বা ফাটল হয়েছে যা ৩০০ কিলোমিটার উত্তর-দক্ষিণে দীর্ঘ সিলেটের সুরমা বেসিনে পৌঁছেছে। আর মিয়ানমারের মাইক্রো প্লেটটির আরেকটি দিক বাংলাদেশের দক্ষিণের চট্টগ্রাম থেকে সুমাত্রার দিকে যাচ্ছে। এই প্লেটটির কারণে মিয়ানমারে ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ৯.৩ মাত্রার ভূমিকম্প হয়।
ভূতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের অভিমত, পৃথিবী গঠিত হয়েছে প্লেট ও সাব-প্লেট দিয়ে। এ রকম দুটি প্লেটের মাঝখানে যে ফাঁক থাকে তাকে বলা হয় ফল্ট লাইন। প্লেটগুলো গতিশীল। দুটি চলন্ত প্লেটের ফল্ট লাইনে পরস্পর সংঘর্ষ হলে অথবা হঠাৎ ফল্ট লাইনে শূন্য অবস্থার সৃষ্টি হলে ভূমিকম্প হয়। বাংলাদেশের অভ্যন্তর ও সীমান্ত এলাকায় বেশ কয়েকটি চ্যুতি আছে। এর মধ্যে মধুপুর চ্যুতি, বগুড়া চ্যুতি, রাজশাহীর তানোর, ত্রিপুরা, সীতাকু–টেকনাফ এলাকা, হালুয়াঘাট, সিলেটের ডাওকি এলাকায় আরও কয়েকটি চ্যুতি আছে। এসব চ্যুতির কাছাকাছি ভূ-কম্পন হলে সেসব এলাকায় ভূমিকম্পের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
Sign in
Welcome! Log into your account
Forgot your password? Get help
Password recovery
Recover your password
A password will be e-mailed to you.