ঢাকায় জঙ্গি সন্দেহে সাবেক এক সেনা কর্মকর্তার ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যিনি মধ্যপ্রাচ্যের আইএস এর আদলে নতুন জঙ্গি সংগঠন খুলে সদস্য সংগ্রহ ও বাংলাদেশে
আবদুল্লাহ আল গালিব নামের ২৫ বছর বয়সী ওই তরুণকে শনিবার রাতে বারিধারা ডিওএইচএস এলাকার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেন গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা। রোববার তাকে হাজির করা হয় পুলিশের গণমাধ্যম কার্যালয়ে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার শেখ নাজমুল আলম জানান, গালিব নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লা বাংলা টিমের সহ সমন্বয়ক। আগে তিনি হিজবুত তাহরীর ও জেএমবির সঙ্গেও ছিলেন।
“সম্প্রতি সে ‘জুনুদ আত-তাওহিদ ওআল খিলাফা’ নামে সশস্ত্র জিহাদী সংগঠন খুলে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে। তার লক্ষ্য, আইএসের আদলে বাংলাদেশের খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা। ১০ থেকে ১৫ জন সদস্য সংগ্রহ করে সে প্রশিক্ষণ দেওয়াও শুরু করেছিল।”
গালিবের বাসা থেকে উদ্ধার করা ওই ‘জঙ্গি প্রশিক্ষণের’ একটি ভিডিও সংবাদ সম্মেলনে দেখানো হয়।
এতে স্পোর্টস ট্রাউজার ও কালো গেঞ্জি পরা নয় তরুণকে মুখ ঢাকা অবস্থায় দেখা যায়, যাদের হাতে পিস্তল বা রিভলবারের মতো দেখতে ছোট অস্ত্র আছে।
তাদের পেছনে কালো কাপড়ে সাদা হরফে কলেমা এবং বন্দুকের ছবি রয়েছে। দেখে মনে হয়, কোনো বাড়ির উঠানে ওই ছবি তোলা হয়েছে।
এরকম ভিডিও ‘জুনুদ আত-তাওহিদ ওআল খিলাফা’ এর ওয়েবসাইট আত তাহরীদ মিডিয়াতেও রয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
গালিবের বাবা মো. আবদুল্লাহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর। তাদের দেশের বাড়ি যশোরের লেবুপাড়ায়।
ঢাকার একটি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল থেকে ‘এ’ লেভেল, ‘ও’ লেভেল শেষ করে আতরের ব্যবসা করতেন গালিব। বারিধারায় বাবার বাড়িতেই তিনি থাকতেন।
শেখ নাজমুল আলম জানান, গালিব আইএসের হয়ে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য একাধিকবার তুরস্কে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তার পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে।
“প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গালিব বলেছে, সে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে আইএস এর প্রতিনিধি হিসেবে কর্মী সংগ্রহ করত এবং তাদের আশ্রয় ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করত”, বলেন নাজমুল আলম।
তিনি বলেন, “শনিবার রাতে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ১০-১২ জন সদস্যের সঙ্গে বসে আইএস এর জন্য কর্মী সংগ্রহ ও কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বৈঠক করে গালিব। এ সময় সেখানে অভিযান চালিয়ে গালিবকে গ্রেপ্তার করা গেলেও বাকিদের ধরা যায়নি।”
এক প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “প্রাথমিকভাবে সব বিবেচনা করে মনে হচ্ছে ভিডিওর ওই প্রশিক্ষণ বাংলাদেশেই হচ্ছে। তবে তাদের হাতের অস্ত্র আসল না নকল তা যাচাই বাছাই করে দেখতে হবে।”
গালিব ও তার সহযোগীরা ‘আইএস থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে’ বাংলাদেশে খেলাফত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন বলেও গোয়েন্দা পুলিশের ধারণা।
“আল কায়দার বিভিন্ন ভিডিও বার্তা আরবি থেকে বাংলায় অনুবাদ করত গালিব। এ রকম প্রায় ৫০টা সিডি আমরা তার বাসায় পেয়েছি।”
ওই বাসা থেকে দুটি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক, চারটি হার্ডডিস্ক, কম্পিউটার সিপিইউ, সিডি, ৪৩টি জিহাদি বই, তিনটি ‘মইনুল ইসলামের মাসিক পত্রিকা’ এবং ‘মেইড ইন পাকিস্তান’ লেখা একটি টুপি পাওয়া গেছে বলেও উপ কমিশনার নাজমুল আলম জানান।
“প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গালিব জানিয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যক্তি ও স্থাপনা তাদের টার্গেটে ছিল। পুলিশ এসব ব্যক্তি ও স্থাপনার নাম জানতে কাজ করছে।”