‘এজেন্ট ও কেন্দ্র আহবায়কদের গ্রেপ্তার’ অভিযোগ খসরুর

25

বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এম মনজুর আলমের ভোট কেন্দ্র আহবায়ক ও এজেন্টদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

তিনি বলেন,‘পুলিশ এলাকায় গিয়ে গিয়ে আমাদের এজেন্ট, কেন্দ্রের আহবায়ক এবং যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদের নাম নেওয়া শুরু করেছে। তাদের মধ্যে অনেককে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে। অধিকাংশের বিরুদ্ধে কোন মামলাও নেই। অনেক নেতাকর্মী আছে যারা জামিনে আছে। ’

রোববার নগরীর লালখান বাজার মোড়ের একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

বিভিন্ন কেন্দ্রের আহবায়কসহ নির্বাচনী কাজে সক্রিয় ২০জনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।

তারা হলেন- ২৬নং হালিশহর ওয়ার্ড সহ সভাপতি আবুল কালাম আযাদ সেলিম, পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ড যুবদল নেতা এমদাদুল হক, দেওয়ান বাজার ওয়ার্ড ছাত্রদল নেতা আসাদ মোহাম্মদ বাবু, ৩২ নং ওয়ার্ড যুবদল নেতা মো. সেলিম, ২৯নং ওয়ার্ড ২০ দলীয় জোটের কাউন্সিলর প্রার্থী ফজলে এলাহী শাহীনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক মো. হারুনুর রশিদ, চান্দগাঁও ওয়ার্ড শ্রমিক নেতা জহিরুল ইসলাম লিটন, মো. আবুল খায়ের, রুহুল আমীন, কাজী আনসারুল হক।

কমার্স কলেজ ভোট কেন্দ্রের আহবায়ক মো. ছাবের, বায়েজিদ বোস্তামি থানার শান্তি নগর ইকরা কেজি স্কুল কেন্দ্রের আহবায়ক মো. মুছা, ৫নং মোহরা ওয়ার্ড যুবদল নেতা মো. সোলাইমান, মোহাম্মদ নগর কেন্দ্রের যুগ্ম আহবায়ক আবদুল জলিল, রৌফাবাদ কেন্দ্রের যুগ্ম আহবায়ক মো. শাহাদাত, মহিলা মাদ্রাসা আহবায়ক হাজী মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন মিয়া, বাগমনিরাম শিশু একাডেমি কেন্দ্রের আহবায়ক আবুল খায়ের মেম্বার, দক্ষিণ কাট্টলী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সদস্য সচিব মোহাম্মদ ইব্রাহিম, হালিশহর বি ব্লক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রের আহবায়ক মাহমুদুল আলম, একে খান তিনিও বিএনপি নেতা ও ভোট কেন্দ্রের আহবায়ক, নগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম রাশেদ।

এর বাইরে আরও অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছে দাবি করে গ্রেপ্তার অব্যাহত আছে বলে জানান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

তিনি বলেন,‘দু-তিন দিন ধরে আমরা লক্ষ্য করছি, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কিছু লোক কেউ সাদা পোশাকে, কেউ কেউ ইউনিফর্মে বিএনপি’র নেতাকর্মী যারা সক্রিয়ভাবে নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত আছে তাদের বাড়িতে হানা দিচ্ছে। গ্রেফতার পুনরায় গ্রেফতার করা শুরু করেছে। যাদেরকে বাসায় পাচ্ছে না তাদের বাসা বাড়িতে ভাংচুর চালানো হচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের যথেষ্ট অপমান করছে।’

আমীর খসরু বলেন,‘আমাদের নির্বাচনী প্রচারণার শুরুটা ছিল একটা অসম অবস্থার মধ্যে দিয়ে। হাজার হাজার নেতাকর্মী জেলে, হাজার হাজার নেতাকর্মী মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হয়ে পলাতক রয়েছেন। তারা এলাকায় যেতে পারছেন না। যারা এলাকায় আছেন তারা প্রতিনিয়ত আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হয়রানি শিকার হচ্ছে। ’

তিনি বলেন,‘সীমিত আকারে সীমিত সাধ্যের মধ্যে আমরা নির্বাচন পরিচালনা করছি। কিন্তু একটা গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে এবং জনগণ আমাদের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে এ নির্বাচনে।’

আমীর খসরু বলেন,‘এ নির্বাচনকে আমরা আমাদের আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়েছি এবং সে কারণে জনগণের বিশাল সম্পৃক্ততা ও গণজোয়ার শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা লক্ষ্য করছি নির্যাতন নিপীড়ন বাড়তে শুরু করেছে। গ্রেফতার ও হয়রানি অতিমাত্রায় বেড়ে গেছে। গত দুই তিন দিনে এটা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।’

সন্ত্রাসী জড়োর করার অভিযোগ
বহিরাগতদের চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়েছে অভিযোগ করে আমীর খসরু বলেন,‘ইতিমধ্যে নগরীর চট্টগ্রাম ক্লাব, সিনিয়রস ক্লাবসহ সমস্ত গেস্ট হাউজ-রেস্ট হাউজ-হোটেলে দেশের সব জায়গা থেকে তাদের লোকজন এনে ভর্তি করে রেখেছে। আপনারা গিয়ে দেখে আসতে পারেন। চট্টগ্রামের আশেপাশে যত সন্ত্রাসীরা আছে তাদের শহরে নিয়ে আসা হয়েছে এবং ভয়ভীতি সৃষ্টি করা হচ্ছে। লালখানবাজারের প্রতিটি বাসায় যান, বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মীর বাসায় গিয়ে তারা হুমকি দিয়ে এসেছে যাতে নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ায়। প্রতিটি এলাকায় কমবেশী এ কার্যক্রম চলছে। ’

ভোট কেন্দ্র দখল চেষ্টার অভিযোগ
মনজুর আলমের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট আমীর খসরু বলেন,‘যেসব কেন্দ্রে কমলালেবুর পক্ষে অর্থাৎ মনজুর আলমের পক্ষে বেশি সমর্থন আছে তারা সেখানে সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, ভোট বন্ধ করে দেওয়া বা কেন্দ্র দখলের পরিকল্পনা করছে। সরকারের পক্ষ থেকে সরকারি সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও দলীয় সন্ত্রাসের সমন্বয়ে তারা নির্বাচনকে দখল করার চেষ্টা করছে। ‘

তিনি বলেন,‘কোন কোন এলাকা ইতিমধ্যে সন্ত্রাসীরা দখল করে বসে আছে, সেখানে বিরোধী দলের অর্থাৎ মনজুর আলম সাহেবের পক্ষে কোন ধরনের কাজ করার সুযোগ নেই।’

প্রতিকার মিলছে না
আমীর খসরু বলেন,‘এমন ত্রাসের সৃষ্টি করা হচ্ছে যাতে নির্বাচনে মনজুর আলমের পক্ষে কেউ প্রচারণা চালাতে না পারে। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনকে প্রত্যেকটি ব্যাপারে অবহিত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দল দেখা করেছে, আমি নিজেও সেখানে গিয়েছি, আজ অবধি কোন ধরনের অ্যাকশন নেওয়া হয়নি। ’

নির্বাচন কমিশনের যোগসাজশের অভিযোগ
আমীর খসরু বলেন,‘নির্বাচন কমিশনকে বারবার বলার পরও যখন কোন অ্যাকশন হচ্ছে না স্বভাবতই নির্বাচন কমিশন এ অবৈধ কাজে অংশগ্রহণ করছে আমরা দেখতে পাচ্ছি। চট্টগ্রাম মহানগরে এ মুহূর্তে সরকারি কর্মকর্তারা আছে। নির্বাচন আইন অনুযায়ী গতকাল থেকে এখানে বাইরের কোন লোক থাকার কথা না। ক্লাব, হোটেল, রেস্ট হাউজে যারা আছে তাদের ৯৯ শতাংশ বাইরের লোক। নির্বাচন কমিশন কি তাদের বিরুদ্ধে কোন অ্যাকশন নিচ্ছে?

তিনি বলেন,‘আইনশৃঙ্খলাবাহিনী যে কাজগুলো করছে এ বিষয়ে বার ‍বার নির্বাচন কমিশনকে বলার পরও কোন অ্যাকশন নেই। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী নির্বাচন কমিশনের অধীনে আছে এটা আমরা মনে করি না। সরকারি কর্মকর্তারা নির্বাচন কমিশনের অধীনে কাজ করছে এটা প্রতীয়মান হচ্ছে না। সুতরাং নির্বাচন কমিশনসহ এ কাজগুলো তারা করছে নির্বাচনী ফলাফল হস্তগত করার জন্য। ’

প্রভাবিত করার অভিযোগ
আমীর খসরু বলেন,‘নির্বাচন কমিশনের যে নির্লিপ্ততা আমরা দেখতে পাচ্ছি, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর যে ভূমিকা দেখতে পাচ্ছি, পাশাপাশি সেক্রেটারি-সচিবসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তারা এখানে এসে রূদ্ধদ্বার বৈঠক করছে এবং প্রিসাইডিং অফিসারদের প্রভাবিত করার জন্য মোটা অংকের টাকার পথ দেখানো হয়েছে। তাদেরতো টাকার অভাব নেই। যাদেরকে টাকা দিয়ে কাজ হচ্ছে না তাদেরকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

যে কোন মূল্যে ভোট কেন্দ্রে যেতে অনুরোধ
নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন,‘আগামী দিনের সন্ত্রাসমুক্ত চট্টগ্রাম যদি চান, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও পেশাজীবী তথা সর্বস্তরের মানুষ যদি শান্তিপূর্ণভাবে পরিবেশে বসবাস করতে চান, তাহলে ২৮ তারিখ সবকিছু উপেক্ষা করে আপনারা ভোটকেন্দ্রে আসবেন, বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিত হয়ে আপনাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করুন। অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যে কোন মূল্যে ভোটকেন্দ্রে যেতে হবে। ’

তিনি বলেন,‘গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হলে, চট্টগ্রামকে বাঁচাতে হলে, বাক স্বাধীনতা বাঁচাতে হলে, ভোটাধিকার বাঁচাতে হলে, আইনের শাসনকে বাঁচাতে হলে যার যার নিজেদের অবস্থান থেকে আপনাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করুন।’

ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদি ভোটাধিকার প্রয়োগের অনুরোধ জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ওয়াহিদুল আলম, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকার, দক্ষিণ জেলা বিএনপি সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, নগর বিএনপি’র সহ সভাপতি শামসুল আলম, কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান শামীম ও কাউন্সিলর নিয়াজ মোহাম্মদ খান।