কেমন আছে প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে ও ৪ নাতি-নাতনী?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চার নাতি-নাতনী। এদের একজনের নাম আলী মর্তুজা আযান, দ্বিতীয় জনের নাম শ্রদ্ধা, তৃতীয় জনের নাম রমাদান এবং চতুর্থ জনের নাম আদর। আলী মর্তুজা আযানের বয়স ২ দিন কম ৪ বছর। শ্রদ্ধার বয়স ২ বছর ৯ মাস এবং রমাদানের বয়স এক মাস কম চার বছর। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর চতুর্থ নাতি হয়। তার নাম আয়াত হোসেন আদর। এই চার নাতি-নাতনি হলো, নিমতলী ট্রাজেডিতে আপনজন হারিয়ে নি:স্ব হয়ে যাওয়া তিন কন্যার সন্তান। প্রধানমন্ত্রীর তিন কন্যারা হলেন, উম্মে ফারোওয়া আক্তার রুনা, সাকিনা আক্তার রত্না ও আসমা আক্তার শান্তা।

২০১০ সালের ৩ জুন নিমতলীর ৪৩, নবাব কাটরা ৫তলা বাড়িতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১২৩ জন প্রাণ হারান। আপনজন হারিয়ে নি:স্ব হয়ে যায় কয়েকটি পরিবার। বাড়ির নিচে কেমিক্যাল গোডাউনে আগুন লেগে বিস্ফোরণ হলে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। রুনার বিয়ের ‘পানচিনি’ অনুষ্ঠানের দিন এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। অগ্নিকাণ্ডের পর পরিবার পরিজন হারিয়ে নি:স্ব হওয়া রুনা, রত্না ও শান্তাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুকে টেনে নেন। নিজের সন্তান পরিচয় দিয়ে ঘোষণা দেন তারা তার নিজের সন্তান। এরপরই গণভবনে নিজে উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রী তার তিন কন্যার বিয়ে দেন। গতকাল হোসনী দালান রোড ও আগা সাদেক রোডে এই তিন কন্যার বাসায় গিয়ে কথা হয় তাদের সাথে। তাদের প্রত্যেকের ঘরে এসেছে নতুন অতিথি।

চাঁনখার পুলের হোসনী দালান রোডের ১৮/১০, শিয়া গলির বাড়ির তৃতীয় তলায় থাকেন প্রধানমন্ত্রীর বড় মেয়ে উম্মে ফারোওয়া আক্তার রুনা। কেমন আছেন জিজ্ঞাসা করা হলে বলেন, ‘মায়ের দোয়ায় ভালই আছি। হারিয়ে যাওয়া মা, খালা, বোনদের কথা বার বার মনে হয়। তাদেরকে হারানোর পর প্রধানমন্ত্রীকে ‘মা’ হিসাবে পাবার পর আমাদের আর কোন কষ্ট নেই। ২০১১ সালের ৫ জুন তার ঘরে এসেছে আলী মর্তুজা আযান। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য তার নাতির খোঁজ নিয়েছেন। আযান জন্ম গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালে ফুল পাঠিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তার নাতির নাম আযান নিজেই রাখেন। কিন্তু ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর আদরের জন্ম গ্রহণের খবর ‘মা’র কাছে দেয়া হয়নি। সংসদ নির্বাচনে ব্যস্ত থাকার কারণে ‘মা’র সাথে যোগাযোগ হয়নি। পরে মাকে খবর দেয়া হয়েছে। মায়ের (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ব্যস্ততা আর নিরাপত্তার জন্য তাদের সঙ্গে নিয়মিত দেখা হয় না। তবে গত রোজার মধ্যে তারা তিনবোন মিলে গণভবনে দেখা করতে যান। তখন প্রধানমন্ত্রী বিস্তারিত খোঁজ নেন। তাদের সন্তানদের আদর করেন।

রুনার স্বামী সৈয়দ রাশেদ হোসাইন জামিল জানান, বিয়ের সময় তার মা (প্রধানমন্ত্রী) তাকে একটি চাকরি দেয়ার কথা বলেছিলেন। সে অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী তাকে নৌ বাহিনীতে চাকরি দিয়েছেন। এখন সংসার ভালই চলছে।

প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয় মেয়ে সাকিনা আক্তার রত্না জানান, এখনও সেই দিনের কথা বার বার মনে পড়ে। তখন কেউ দেখার ছিল না। গণভবনে বিয়ের পর মায়ের নির্দেশে তার স্বামী সাইদুর রহমান সুমনকে বেসিক ব্যাংকে চাকরি দেয়া হয়। এখন তারা ১৬/৫, নবাব বাগিচায় থাকছেন। তাদের ঘরে মেয়ে সন্তান শ্রদ্ধার আগমন ঘটে। এখন শ্রদ্ধাকে নিয়ে তাদের সময় কাটছে।

প্রধানমন্ত্রীর তৃতীয় মেয়ে আসমা আক্তার শান্তা জানান, গণভবনে বিয়ের পর তার মা (প্রধানমন্ত্রী) স্বামী আলমগীর হোসেনকে সেনাবাহিনীতে চাকরি দিয়েছেন। এখন তারা পুরান ঢাকার ৯৬/১, আগা সাদেক লেনের একতা নিবাসের তৃতীয় তলায় ভাড়া থাকেন। আপন মা যেমন জামাই বাড়ি গ্রীষ্মের ফল পাঠান, মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রীও তাদের তিনবোনের বাসায় প্রত্যেকবার ফল পাঠান। সরাসরি বছরে একবার দেখা হলেও শত ব্যস্ততায় বিভিন্ন উত্সবে নিয়মিতই খোঁজ নেন তাদের। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ করা তাদের তিন বোনের উকিল বাবা হাজী সেলিম এমপি, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এবং আওয়ামী লীগ নেতা এম, এ আজিজ তাদের নিয়মিত খোঁজ খবর রাখেন। আপন মেয়ের মতো সব ভালোমন্দ দেখেন তারা।

সেই বিভীষিকাময় বাড়ি

৪৩, নবাব কাটরা, নিমতলীর সেই ৫তলা বাড়িটিতে আগুনে পুড়ে যাওয়ার কোন চিহ্ন নেই। নীচতলা থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত পুরো বাড়িটি এই তিন বছরে অনেক পাল্টে গেছে। বাড়ির তিন তলায় দিদার, চতুর্থ তলায় ফারুক আহমেদ ও পঞ্চম তলায় গুলজার বসবাস করেন। তবে এই তিন ভাইয়ের স্ত্রী ও সন্তানরা নিমতলীর ট্র্যাজেডিতে মারা গেছেন। বড় ভাই গুলজার জানান, অগ্নিকাণ্ডের পর নিহতদের জন্য সরকার ১ লাখ টাকা আর্থিক সাহায্য করেন। কিন্তু পরিবারের সবাইকে হারিয়ে এখন মরা কাঠের মত বেঁচে আছি। বার বার মনে পড়ে স্ত্রী ইয়াসমিন গুলজার ও দুই ছেলে ইসতিয়াক গুলজার ও ইমতিয়াজ গুলজারকে। অগ্নিকাণ্ডে তার মা সাবেরা বেগম, চাচী মনোয়ারা বেগম, মেজো ভাইয়ের স্ত্রী শিল্পী, তার দুই ছেলে ইমরান ও আদৃতা, ছোট ভাইয়ের স্ত্রী রানী, তার দুই মেয়ে আনিকা ও অংকিতা মারা যান।

নিমতলীর ৫৫ নম্বর বাড়িতে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন মুন্নি বেগম, তার মেয়ে লাভলী ও লাভলীর ছেলে ১০ মাস বয়সী লাবীব। ঐ বাসাতেই মারা যান মুন্নির বোন রমিজা বেগম, রমিজার ছেলের স্ত্রী মনোয়ারা ও মনোয়ারার ১৫ বছর বয়সি ছেলে পুচি। ঐ দিন বাসা থেকে প্রাণ নিয়ে বের হতে পেরেছিলেন মুন্নির দুই ছেলে রিপন ও স্বপন। রিপন বলেন, আগুনে শুধু তার মা, বোন, ভাগ্নেসহ পরিবারের ছয় সদস্যকেই হারাননি। সঙ্গে পুড়ে যাওয়া বাড়িটিও হারিয়েছেন। আগে থেকেই বাড়ি নিয়ে ঝামেলা চলায় আগুন লাগার পর স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি পোড়া বাড়িটিই দখল করে নেন। এখন তারা দুই ভাই পথে পথে ঘুরছেন।

সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক

Exit mobile version