জ্বলছে জামায়াত নীরব বিএনপি

২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর দুঃসময়ে নিশ্চুপ বিএনপি। অতীতের মতো এবারও জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই জোটের প্রধান দল বিএনপির। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিচার ও সর্বোচ্চ দণ্ডের এই পরিস্থিতিতে বিএনপির মনস্তাত্ত্বিক সাপোর্ট না পেয়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশ জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা। তাদের বক্তব্য, আমরা বিএনপির মাঠের আন্দোলনের প্রধান মিত্র। অথচ আমাদের চরম দুঃসময়ে পাশে নেই বিএনপি। আমরা জ্বলছি, আর তারা নিশ্চুপ, নীরব দর্শকের ভূমিকা নিয়েছে। কামারুজ্জামানের ফাঁসি নিয়ে বিএনপির নীরব ভূমিকায় বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব আরও বেড়ে গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের ঢাকা মহানগরীর এক কর্মপরিষদ সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপে এমন মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের নেতা কামারুজ্জামানের রায় নিয়ে আমরা বিএনপির কাছে প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশা করেছিলাম। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়ার পর বিএনপির পক্ষ থেকে কখনোই কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হওয়া, গোলাম আযমের মৃত্যু-পরবর্তী শোক প্রকাশ না করে নিশ্চুপ ছিল বিএনপি। কামারুজ্জামানের ক্ষেত্রেও বিএনপি একই অবস্থান নেয়। তিনি বলেন, জামায়াতের একের পর এক ভয়াবহ বিপদের সময়ে বিএনপি নীরব থাকায় বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে। বিএনপি আমাদের ব্যবহার করছে। জানা যায়, প্রতিষ্ঠার পর সবচেয়ে সংকটময় পরিস্থিতি পার করছে জামায়াতে ইসলামী। একদিকে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দলের একের পর এক শীর্ষ নেতার সর্বোচ্চ সাজা কার্যকর হচ্ছে, সেই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের দায়ে সংগঠন হিসেবে দলের নিবন্ধন বাতিলের আশঙ্কা তো রয়েছেই। খাতা-কলমে নিষিদ্ধ না হলেও সারা দেশে সংগঠনটির প্রায় সব কার্যালয় কার্যত বন্ধ রয়েছে। অনেক নেতা-কর্মী কারাগারে বন্দী রয়েছেন। হুলিয়া মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন অসংখ্য নেতা-কর্মী। এ অবস্থায় বিএনপিও তাদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলছে। জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের মৃত্যুর পর বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো শোক জানানো হয়নি। সমবেদনা জানাতে গোলাম আযমের বাসায় বিএনপির কোনো নেতা যাননি। জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের রায় ঘোষণার পর বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হচ্ছে না। এমনকি এ ইস্যুতে তাদের ডাকা হরতালে নৈতিক সমর্থনও মিলছে না বিএনপির কাছ থেকে। এদিকে বিএনপি সূত্র জানায়, একই জোটে থেকে সরকারবিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনে একসঙ্গে মাঠে থাকলেও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত নেতাদের সাজার প্রতিবাদে জামায়াতে ইসলামীর কোনো কর্মসূচিতে পাশে থাকবে না দল বিএনপি। এমনকি জামায়াতের কর্মসূচিতে সমর্থনও দেবে না বিএনপি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনি প্রক্রিয়ায় কামারুজ্জামানের সাজা দিয়েছে। এটা আদালতের বিষয়। এ নিয়ে বলার কিছু নেই। তবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি সবারই শ্রদ্ধা জানানো উচিত বলে আমি মনে করি। এর বাইরে কিছু বলতে চাননি তিনি। বিএনপি নেতারা বলেন, জামায়াত বিএনপির সঙ্গে জোটভুক্ত হলেও তারা আলাদা একটি রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিকভাবে তারা যে কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে। সে স্বাধীনতা তাদের আছে। তারা যে জন্য কর্মসূচি দিয়েছে তাতে আমাদের ভিন্নমত থাকাই স্বাভাবিক। বিএনপি একমত হলে তো একসঙ্গেই কর্মসূচি দিতে পারত এবং একসঙ্গে পালন করত। অতীতে কি কখনো এমন হয়েছে? তারা বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলে এসেছি বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়।

তবে তা যেন স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের হয়। তারা বলেন, জামায়াতের এমন কর্মসূচিতে বিএনপির পাশে থাকার প্রশ্নই আসে না।

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন

Exit mobile version