দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক পদে পাঁচ কর্মকর্তাসহ চারটি পদে মোট ৪৭ জন কর্মকর্তাকে গোপনে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
রোববার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে দিনব্যাপী এক সভায় এ পদোন্নতির সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। সভায় কমিশনার (তদন্ত) মো. সাহাবুদ্দিন, কমিশনার (অনুসন্ধান) নাসির উদ্দীন আহমেদ, দুদক সচিব মো. মাকসুদুল হাসান খান, মহাপরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) মো. সহিদুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তবে তারা পদোন্নতির সিদ্ধান্তের বিষয়ে কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। এছাড়াও সংস্থাটির সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তনে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বৈঠকে। নতুন সাংগঠনিক কাঠামোর অনুমোদনের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন সংস্থাটির কমিশনার (তদন্ত) মো. সাহাবুদ্দিন।
পদোন্নতি পাওয়াদের মধ্যে পরিচালক পদে ৫ জন, উপপরিচালক পদে ৭ জন, সহকারী পরিচালক পদে ২৩ জন, উপসহকারী পরিচালক পদে ১২ জন রয়েছেন। পদোন্নতি নিয়ে দিনভর নানা নাটকীয়তাপূর্ণ ছিল দুদক কার্যালয়। কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ থাকার কারণে বেলা এগারোটায় শুরু হয়ে বিকেলে কমিশন সভা শেষ হলেও রাত ৮টা পর্যন্ত পদোন্নতি পাওয়াদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি।
উপপরিচালক থেকে পরিচালক পদে যাঁরা পদোন্নতি পেয়েছেন তাঁরা হলেন, মো. আক্তার হোসেন, মো. আবু সাইদ, মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী, সৈয়দ ইকবাল হোসেন এবং শিরীন পারভীন।
সহকারী পরিচালক থেকে উপপরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন মো. সামছুল আলম, শেখ আবদুস ছালাম, সৈয়দ আহমেদ, আবু বকর সিদ্দিক, রফিকুল ইসলাম (প্রশাসন) এবং রফিকুল ইসলাম (পটুয়াখালী)।
দুদক সূত্র জানায়, বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটির (ডিপিসি) আলোচনায় বাছাই তালিকায় থাকা উপপরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, রাম মোহন নাথ ও হামিদুল হাসানের বিষয়ে সুপারিশ থাকলে শেষ মুহূর্তে তাঁরা বাদ পড়ে যান।
সূত্র আরও জানায়, পদোন্নতির ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের বিষয়ে শুরু থেকেই তীব্র আপত্তি করে আসছেন ডিপিসির সভাপতি ও দুদকের সচিব মো. মাকসুদুল হাসান খান।
দুদকের নতুন সাংগঠনিক কাঠামো:
নতুন কাঠামো অনুযায়ী ৬৪টি জেলা এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর এলাকাকে আলাদা করে মোট ৬৬টি অঞ্চলে বিভক্ত করার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এর ফলে মোট ৬৬টি কার্যালয়ের মাধ্যমে দুদকের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এ ছাড়া মহাপরিচালক, পরিচালক, উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক, উপসহকারী পরিচালক, কোর্ট পরিদর্শক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদের সংখ্যাও বাড়ানোর প্রস্তাব নীতিগতভাবে অনুমোদন করা হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, দুদকের বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোতে ৬টি বিভাগীয় কার্যালয় এবং ২২টি সমন্বিত জেলা কার্যালয় (সজেকা) রয়েছে। ৬৪টি জেলার কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয় ২২টি সজেকা থেকে। স্থায়ী জনবল বাড়ানোর জন্য মহাপরিচালক আবু মো. মোস্তফা কামালকে নতুন সাংগঠনিক কাঠামো বা অর্গানোগ্রাম তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁর প্রস্তাব বিবেচনা করে কমিশন নতুন সাংগঠনিক কাঠামোর নীতিগত অনুমোদন দেয়।
কমিশনের বৈঠকে মহাপরিচালক পদে ৬ জনের পরিবর্তে ৮ জন, পরিচালক পদে ১৯ থেকে ২৬ জনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। একই সঙ্গে নতুন কাঠামোতে একজন করে মেডিক্যাল অফিসার, নার্স, ফার্মাসিস্ট ও স্বাস্থ্য সহকারী এবং দুজন যানবাহন ক্লিনারের পদ তৈরির প্রস্তাবও অনুমোদন দেওয়া হয়।
১৯৪৪ সালে ব্রিটিশ সরকার সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি বন্ধে পুলিশ বিভাগের অধীনে এনফোর্সমেন্ট ডিপার্টমেন্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করে। পরবর্তীতে ১৯৫৭ সালের দুর্নীতি দমন ব্যুরো গঠিত হয়। ২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর দুর্নীতি দমন ব্যুরো বিলুপ্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশন গঠিত হয়। ব্যুরো বিলুপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিতে জনবল ছিল ১ হাজার ২৮১ জন। কমিশন গঠন হওয়ার পর দুদক শুরুতে ৩৬ জন কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়ে কাজ শুরু করে। ২০০৬ সালের ৩ জুলাই ৬৫০ জন জনবল বিশিষ্ট দুদকের প্রথম সাংগঠনিক কাঠামো এবং ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর দুদকের সংশোধিত সাংগঠনিক কাঠামোয় ১ হাজার ৭৩ জনের স্থায়ী জনবল অনুমোদন দেওয়া হয়।