জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে আবারো যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে ঢাকা যাওয়ার সময় ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে যৌন হয়রানির শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২তম ব্যাচের এক ছাত্রী।
ওই ছাত্রী বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে শাখা ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘বুধবার ফাইনাল পরীক্ষা শেষে আমি আমার বোনের সঙ্গে ক্যাম্পাসের বাসে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হই। আমরা দুই বোন বাসের পাশাপাশি সিটে বসি। এসময় এক ভাইয়া আমাদের পাশে এসে সিগারেট খাচ্ছিলেন। তখন আমার আপু সমস্যা হওয়াতে ওই ভাইকে দূরে গিয়ে সিগারেট খেতে বলেন। তখন ওই ভাই দূরে গিয়ে সিগারেট খান। এরপর ৪০তম ব্যাচের সীমান্ত ভাই আমাদের সামনে এসে একটি সিগারেট ধরান। এসময় তিনি সিগারেট নিয়ে লেকচার দিতে শুরু করেন। তিনি আমাদের শুনিয়ে জোরো জোরে বলতে থাকেন, “সিগারেট স্বাস্থের জন্য খারাপ, সম্পদের জন্য ভালো। সামারটা অনেক হট, আশেপাশে অনেক হট। সিগারেট খাওয়া যাবে না, সিগারেট খাইলে কারাদণ্ড হবে”।
এসময় তিনি অনেকবার আমার আপুর গায়ে ধাক্কা দেন। এরপরও সীমান্ত ভাই আমাদের উদ্দেশ্য করে আরো অনেক আজেবাজে মন্তব্য করতে থাকেন। একই সময় ৪০তম ব্যাচের টিটু ভাই দূর থেকে আমাদের দিকে অন্যভাবে তাকান। এরপর তিনি এসে আমাদের সামনে এসে বসেন এবং শরীর সম্পর্কীয় কটূক্তি করেন। এসময় আমি ওনাকে নিষেধ করা সত্ত্বেও তিনি আমাদের দিকে বাজেভাবে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। তখন আমরা ওই সিট থেকে ছেড়ে অন্য সিটে গিয়ে বসি। তারপরও তিনি উল্টো ঘুরে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকেন। এরপর গুলিস্তানে নামলে তারা অনেক জন আমাকে ঘিরে দাঁড়ান।
আমাকে বলেন, “তুমি পরিচিত তাই কিছু করলাম না, অন্য কেউ হলে অবস্থা খারাপ হতো”। তারা সরি না বলে উল্টো আমাকে ফাঁপর দেয়। আমি বাসা থেকে ফিরে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করবো।’
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন- শাখা ছাত্রলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মহিতোষ রায় টিটু, শহীদ রফিক-জব্বার হল শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সজিব কুমার সাহা, নাটক ও বিতর্ক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মাজেদ সীমান্ত। অভিযুক্তরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০তম ব্যাচের ছাত্র।
এদিকে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল মাজেদ সীমান্ত বলেন, ‘ওই মেয়ে আমাদের ক্যাম্পাসের পরিচিত ছোট বোন। তার পাশে বসে সিগারেট খাওয়ায় তার বড় বোন আমাদের দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছে।’
ছাত্রলীগ নেতা সজিব কুমার সাহা বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি মেয়েটার পাশে ছিলাম। মেয়েটা ক্যাম্পাসে আসলে তার সাথে কথা বলবো।’
আর অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মহিতোষ রায় টিটুকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
এবিষয়ে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মাহমুদুর রহমান জনি বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। মেয়েটি এখন বাসায় আছে। বাসা থেকে ফিরলে আমরা তার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবো।’
এ ব্যাপারে শিক্ষক সমিতিরর মুখপাত্র ও দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘প্রশাসন সরকার দলীয় হওয়ায় ছাত্রলীগ এ ধরনের অপকর্ম করে পার পেয়ে যাচ্ছে। সুষ্ঠু বিচার হলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতো না।’
উল্লেখ্য, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের সময় ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল মাজেদ সীমান্ত অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে আটক হন। এছাড়া ছাত্রলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মহিতোষ রায় টিটুর বিরুদ্ধে সাংবাদিক ও বিএনসিসি সদস্যদের মারধর এবং হলে ছাত্রী নিয়ে রাত্রীযাপনের মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। আর ছাত্রলীগ নেতা সজিব কুমার সাহার বিরুদ্ধে উপাচার্য বিরোধী আন্দোলনের সময় শিক্ষকদের ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে।