ক্লাস নাইন থেকে দুটি বছর মেয়েকে টানা কোচিং করিয়েছি। প্রতি মাসে শুধু এ জন্যই খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়া মেয়ের এই সাফল্যের পেছনে স্কুলের নয়, কৃতিত্ব আমাদের।’ -কথাগুলো বলছিলেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীর মা লুৎফা বেগম।
এসএসসি পরীক্ষায় মেয়ে কারিবা হাসানের ফল জানার পর আজ দুপুরে স্কুল মাঠে দাঁড়িয়ে এসব জানান তিনি। তবে বলার সময় লুৎফা বেগম কখনো হাসছিলেন, কখনোবা ক্ষোভ ঝাড়ছিলেন।
প্রথম আলোকে লুৎফা বেগম বলেন, ‘আমার সামর্থ্য ছিল বলে মেয়ের ভালো ফল করেছে। কিন্তু যেসব অভিভাবকের নেই, তাঁদের কত কষ্ট হচ্ছে। স্কুলগুলো যদি যত্নবান হতো, তাহলে তো আর কোচিং করানোর প্রয়োজন হতো না। আমার মেয়ে তো গত মাস থেকেই উচ্চ মাধ্যমিকের কোচিং শুরু করেছে।’
লুৎফা বেগমের মতো একই কথা বলেন এই খ্যাতিমান স্কুলের গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়া নাফিসা তৈয়বের বাবা আবু তৈয়ব সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘শুধু কোচিংয়ের খরচ ছাড়াও মডেল টেস্ট করাতে যে কত খরচ হয়েছে, এর তো ইয়ত্তা নেই। কৃতিত্ব যদি নিতে হয়, সেটি আমি আর স্ত্রী নেব। স্কুলে নামমাত্র পড়িয়েছি। এছাড়া কোনো উপায় ছিল না।’
সাফল্যের কৃতিত্ব মা-বাবাকে দিয়ে নাফিসা তৈয়ব অবশ্য ভবিষ্যৎ স্বপ্ন দেখা শুরু করে দিয়েছে। নাফিসা প্রথম আলোকে বলে, ‘আমি পাইলট হব। যদি সেই স্বপ্ন পূরণ না হয়, তাহলে বাবার ইচ্ছে ডাক্তার হওয়ার।’
হরতাল-অবরোধের কারণে মানসিকভাবে চাপ থাকলেও প্রস্তুতি ভালো থাকায় পরীক্ষা ভালো হয়েছে বলে দাবি করে নাফিসা। তার কথা, ‘এবার সব পরীক্ষা সৃজনশীল প্রশ্নে হয়েছে। গণিত নিয়ে একটু চিন্তা ছিল। তবে কোনো সমস্যা হয়নি।’
কোচিং করানোর ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ সুফিয়া খাতুন বলেন, ‘আমি আজকে শুধু রেজাল্টের কথা বলব, অন্য কোনো বিষয়ে নয়।’ তিনি জানান, এবার তিন শাখাসহ ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ থেকে এক হাজার ৫০৩ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। দুজন পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। পাস করেছে এক হাজার ৫০১ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে এক হাজার ২৯০ জন। ঢাকা বোর্ডের মধ্যে চতুর্থ স্থান অর্জন করেছে স্কুলটি। আগের বছর ছিল দ্বিতীয় স্থানে। সাফল্যের হার শতভাগ দাবি করে সুফিয়া খাতুন বলেন, ‘আমাদের স্কুলে মানবিক বিভাগ আছে। যা অনেক স্কুলে নেই। মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পাওয়া অনেক কঠিন।’
বিদ্যালয়ের এ সাফল্য বরণ নিতে বেলা একটার আগেই স্কুলে আসতে শুরু করে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা। ফল জানার পর কারও চোখে ছিল অশ্রু, কারওবা হাসি। কান্নাহাসিতে মিশে সে আনন্দ হয়ে যায় অন্যরকম। নেচেগেয়ে উচ্ছ্বাস-উল্লাসে মুখরিত ছিল সবুজ গাছে ঘেরা স্কুল প্রাঙ্গণ।
Sign in
Welcome! Log into your account
Forgot your password? Get help
Password recovery
Recover your password
A password will be e-mailed to you.